v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-02-28 21:52:31    
চীনের পুরনো রাজপ্রাসাদের স্টারবার্কস কফি দোকান নিয়ে তর্কবিতর্ক

cri
    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পুরনো রাজপ্রাসাদের ৬ শ'রও বেশি বছরের ইতিহাস রয়েছে । অতীতে এটি ছিল চীনের মিং ও ছিং রাজবংশের রাজপ্রাসাদ । আজ এ পুরনো রাজপ্রাসাদ চীনা ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় জায়গায় পরিণত হয়েছে । পুরনো রাজপ্রাসাদের ভেতরে বসানো একটি বিদেশি কফির দোদান নিয়ে সম্প্রতি তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছে ।

    পুরনো রাজপ্রাসাদের ছিয়ান ছিং ফটকের সামনের মহাচত্বরের পূর্বদিকে রয়েছে একসারি হলুদ টালি ও লাল দেয়ালের একতলার প্রাচীন ইমারত । প্রাচীনকালে মন্ত্রীরা সম্রাটদের সংগে সাক্ষাত করার আগে এখানে অপেক্ষা করতেন । একসারি একতলা বাড়ির সবচেয়ে পশ্চিম দিকে সেই বিতর্কিত স্টারবার্কস কফির দোকান অবস্থিত । দোকানটি বড় নয় । একেকটি সরু ও লম্বা টেবিলে কেবল ৫ , ৬ জন অতিথি বসতে পারেন । যারা আসন পান না , তারা কেবল দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে কফি খান । এ দোকানের পাশে রয়েছে পুরনো রাজপ্রাসাদ সংক্রান্ত বইপুস্তক ও স্মারক বস্তু বিক্রির একটি দোকান । সেই দিন আবহাওয়া খুবই ঠান্ডা ছিল । শাংহাই থেকে আসা একজন পর্যটক মাদাম চৌ ফাং তখন গরম কফি খাচ্ছিলেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,

    এমন কনকনে শীতের মধ্যে গরম কফি খেতে পারি । এটি সত্যিই আরামদায়ক ।

    বস্তুত ২০০০ সালে পুরনো রাজপ্রাসাদের এ স্টারবার্কস কফির দোকান খোলা হয় । তখন অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে, এখানে স্টারবার্কস খোলা উপযোগী কি না । এক সপ্তাহ আগে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ স্টারবার্কসের ওপর সকলের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এ প্রবন্ধের নাম ছিল " স্টারবার্কস পুরনো রাজপ্রাসাদ থেকে সরে যাক ।" মাত্র ৬ দিনের মধ্যেই ৫ লাখেরও বেশি নেট নাগরিক এ প্রবন্ধ পড়েছেন । প্রবন্ধে বলা হয়েছে , স্টারবার্কস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রন্ধন সংস্কৃতির বাহন ও প্রতীক । পুরনো রাজপ্রাসাদ চীনের সুগভীর ইতিহাস ও সংস্কৃতির সংগে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । এমন একটি জায়গায় স্টারবার্কস খোলা উপযুক্ত নয় । স্টারবার্কসের পুরনো রাজপ্রাসাদ থেকে সরে যাওয়া উচিত । অধিকাংশ নেট নাগরিক এ প্রবন্ধের অভিমতের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন । অবশ্য কিছু সংখ্যক নেট নাগরিক তার বিরোধিতা প্রকাশ করেছেন । যারা সমর্থনসূচক মত প্রকাশ করেছেন , তারা বলেছেন , " আমাদের সংস্কৃতি ও সম্পদকে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে । তার লেশমাত্র বিনাশ করলে চলবে না ।" " মার্কিন ফাস্ট ফুড আমাদের পবিত্র পুরাকীর্তির ওপর দখল করলে চলবে না ।" চীনের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়ও পুরনো রাজপ্রাসাদের এ স্টারবার্কস কফির দোকান নিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছে ।

    আমাদের সংবাদদাতা পুরনো রাজপ্রাসাদে দেখতে পেয়েছেন , কোনো কোনো পর্যটক সাদা রংয়ের কফির কাপ হাতে নিয়ে হয় লাল দেয়াল ও হলুদ টালির পাশে , নয় পুরনো রাজপ্রাসাদের মাঝে হেঁটে হেঁটে কফি খাচ্ছেন । কয়েকজন চীনা ও বিদেশী পর্যটক মনে করেন যে, পুরনো রাজপ্রাসাদের ভেতরে স্টারবার্কস খোলা প্রাচীন রাজপ্রসাদের সুগভীর ঐতিহাসিক পরিবেশকে ব্যহত করেছে । যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা মার্কিন পর্যটক রাউল ভাসকেজ আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,

    এখানকার স্টারবার্কস পুরনো রাজপ্রাসাদের সংগে একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তার বাইরে এ রকম দোকান খোলা যেতে পারে । পুরনো রাজপ্রাসাদ একটি সুন্দর জায়গা । তাকে সম্মান প্রদর্শন করা উচিত । এটি দোকানপাট খোলার স্থান নয় ।

    জার্মানী থেকে আসা পর্যটক জৌগ স্মিত্জও একই মত প্রকাশ করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    পুরনো রাজপ্রাসাদ থেকে সরে যাওয়া একটি ভালো প্রস্তাব । কেন না এটি একটি সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি । অথচ স্টারবার্কস একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান । সুতরাং তা পুরনো রাজপ্রাসাদের বাইরে খোলা উচিত ছিল ।

    জানা গেছে , পুরনো রাজপ্রাসাদ যাদুঘরের ২০০৪-২০০৫ সালের একটি সামগ্রিক পরিকল্পনায় বিশেষভাবে স্টারবার্কস কফির দোকানের সমস্যা নিয়ে আলোচান করা হয়েছে । বস্তুত ২০০৫ সালেই পুরনো রাজপ্রাসাদের স্টারবার্কসের দেয়ালের সাজসজ্জা অনেক হাল্কা করা হয়েছে । এখন বাইরে থেকে স্টারবার্কসের কোনো চিহ্ন আর দেখা যায় না । তাই কোনো কোনো লোক মনে করেন যে, যেহেতু বাইরের দিক থেকে পুরনো রাজপ্রাসাদের সামগ্রিক স্থাপত্যগুলোর পক্ষে ক্ষতিকর স্টারবার্কসের আর কোনো চিহ্ন নেই , সেহেতু এ দোকান পর্যটকদের জন্যে এক কাপ কফি দিলে ক্ষতি কি ? পেইচিংয়ের বাইরে থেকে আসা একজন পর্যটক ওয়াং পিং বলেছেন ,

    স্টারবার্কস থেকে আমরা কফি খেতে পারি ।এটি পর্যটকদের জন্যে খুবই সুবিধাজনক । তাছাড়া স্টারবার্কস একটি অত্যন্ত ছোট দোকান । এখান থেকে আপনি স্পষ্ট পশ্চিমা সংস্কৃতি দেখতে পারেন না ।

    তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা মার্কিন পর্যটক রব মালিন বলেছেন , আমরা চীনের সুপ্রাচীন রাজপ্রাসাদ পরিদর্শনের সময় চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পানীয় খেলে আরো ভালো হয় । তিনি বলেছেন ,

    এখানে আমি চীনা চা খেতে পছন্দ করি ।

    চীনের পুরনো প্রাসাদ হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রাসাদ । তার আয়তন ৭০ হেক্টর । এমন বিশাল প্রাসাদে ভ্রমণ করলে পর্যটকদের তৃষ্ণা পাওয়া খুবই স্বাভাবিক । কাজেই এখানে পানীয় দোকান না রাখলে অসুবিধা দেখা দিতো । পুরনো রাজপ্রাসাদ যাদুঘরের কার্যালয়ের পরিচালক ফোং নাই এন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , প্রতি বছর প্রায় এক কোটি চীনা ও বিদেশী পর্যটক পুরনো রাজপ্রাসাদ পরিদর্শন করতে আসেন । পুরাকীর্তি সংরক্ষণ এবং পর্যটকদের সাংস্কৃতিক প্রয়োজন মেটানো ছাড়া তাদের পানীয় ও খাবারের প্রয়োজনও আমাদের বিবেচনা করতে হবে ।

    বর্তমানে পুরনো রাজপ্রাসাদ যাদুঘর স্টারবার্কসের সংগে তার সরানোর সমস্যা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে । এ বছরের প্রথমার্ধে এ সমস্যার নিরসন হবে বলে আশা করা হচ্ছে । তিনি বলেছেন ,আমাদের ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম প্রণয়নের জন্যে আমরা বাইরের একটি বিশেষ কোম্পানিকে আমন্ত্রণ করেছি । তাদের কার্যক্রম প্রণয়নের কাজ শেষ হলে স্টারবার্কসের মত সমস্যাগুলোও আপনাআপনি সমাধান হয়ে যাবে ।