গত ১৮ ফেব্রুয়ারী চীনের চান্দ্র বর্ষের নববর্ষ উত্সব ও বসন্ত উত্সব । বসন্ত উত্সব চীনাদের বৃহতম উত্সব । বসন্ত উত্সব উদযাপন উপলক্ষে চীনারা দীর্ঘ সাত দিন ছুটি পান । ছুটির দিনে মিয়াও হুই নামে আনন্দ মেলায় অংশ নেয়া চীনাদের প্রিয় কর্মসূচী ।
আনন্দ মেলা-- মিয়াও হুই সাধারণতঃ মন্দির বা পার্কে আয়োজন করা হয় । মেলায় বিনোদন , কেনাকাটা ও খাওয়া -দাওয়ার ব্যবস্থা আছে । বিভিন্ন স্থানের আনন্দ মেলার বৈশিষ্ট্য একই নয় । দক্ষিণ চীন ও উত্তর চীনের রীতিনীতির তারতম্য রয়েছে বলে আনন্দ মেলায় বিনোদনের কর্মসূচীর ভিন্ন ।
রাজধানী পেইচিংয়ের ঐতিহ্যিক মিয়াও হুইয়ের ইতিহাস ছয় –সাত শ' বছর দীর্ঘ । প্রাচীনকালে মিয়াও হুই মন্দিরে অনুষ্ঠিত হত । অধিবাসীরা মন্দিরে দেবতার সামনে নতজানু হয়ে নতুন বছরের সুখশান্তি প্রাথর্না করেন এবং নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দেবতার সাহায্য কামনা করেন । পেইচিং শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পাই ইউন মন্দিরে আজ পর্যন্ত এই রীতি বজায় রয়েছে যে চান্দ্র বর্ষের প্রথম দিন যদি আপনি এ মন্দিরে রাখা এক পাথরের বাঁনরের প্রতিকৃতির গায়ে হাত বুলাতে পারেন , তাহলে নতুন বছরে আপনার সুখশান্তি হবে । তাই প্রতি বছরের বসন্ত উত্সবের সময় নিজের কল্যাণ্যের জন্য নাগরিকরা পাথরের বানরের গায়ে হাত বুলানোর জন্য ধৈর্যসহকারে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে থাকেন ।
যুগ পরিবতর্নের সঙ্গে সঙ্গে এখন আনন্দ মেলা—মিয়াও হুইয়ের কমর্সূচী আরো সমৃদ্ধ হয়েছে । পেইচিংয়ের লোংথান পার্কে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মিয়াও হুই সবচেয়ে ধুমধামের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় । প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকনৃত্য দল এই মেলায় নানা ধরনের অনুষ্ঠান পরিবেশন করে । লোকনৃত্য দলের শিল্পীরা সিংহ নাচ , নৌকার নাচ ও রণ-পায়ে হেটে লোনথান হ্রদ প্রদক্ষিণ করেন এবং কোমরে ঢোল বেঁধে পিটিয়ে গান পরিবেশন করেন । এ আনন্দ মেলার অন্যতম সংগঠক হু সিয়ান চুন বলেছেন , এ বছর লোনথান মিয়াও হুইয়ের জন্য অনেক নতুন কমর্সূচী রয়েছে । মিয়াও হুইয়ের একটি অংশ হিসেবে চীনের মোট ৩৩টি অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার , বিশেষ করে নানা ধরনের শিল্পরূপকে অধিবাসীদের দেখানো হয়েছে । এ ছাড়া পেইচিংয়ের দশ-বারোজন শিল্পী পুরনো পেইচিংয়ে দোকানদারদের জিনিস বিক্রির জন্য নিলামের ডাক পরিবেশন করেছেন , এতে চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয়েছে ।
উত্তর –পশ্চিম চীনের সানসি ও কানসু প্রদেশে বসন্ত উত্সবের সময় ' শেহুও ' অভিনয় ও সিংহ নাচ হচ্ছে দুটি প্রধান কমর্সূচী । মাটি ও আগুনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন প্রাচীন চীনের এক ঐতিহ্য । বসস্ত ছুটির দিনে স্থানীয় অধিবাসীরা বিভিন্ন ঐতিহ্যিক চরিত্র সেজে মাটি দেবতা ও আগুন দেবতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অভিনয় করতেন । কান সু প্রদেশের লানচৌ শহরের সিয়ে হোন ইয়ু বলেছেন , ছোট বেলায় আমি গ্রামের শেহুও দলের সদস্য ছিলাম । আমার জন্মস্থানের নিয়ম অনুসারে ১৫ বছরের বেশি বয়সের ছেলেরাই শুধু এ দলে অংশ নিতে পারে । দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশে ২৫টি সংখ্যালঘু জাতি বাস করে । কাজেই সেখানকার মিয়াও হুই সংখ্যালঘু জাতিগুলোর এক মহাসম্মীলনী বলা যায় । মেলায় বিভিন্ন জাতির হস্তশিল্পকর্ম , জামা-পোশাক ও বৈশিষ্ট্যময় খাবার বিপুল সংখ্যক পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ।
ঐতিহ্যিক মিয়াও হুই ছাড়া পেইচিং ও সাংহাইয়ের মত বড় বড় শহরের মিয়াও হুইতে বিদেশের ফুল গাড়ী ও বাদকদলও অংশ নেয় । পেইচিংয়ের ছাও ইয়াং অঞ্চলে অনেকে দেশের দুতাবাস রয়েছে । তাই ২০০২ সাল থেকে ছাও ইয়াং অঞ্চল বসন্ত উত্সব উপলক্ষে আন্তর্জাতিক আনন্দ মেলার আয়োজন করে। এ কর্মসূচী পেইচিংয়ের নাগরিক ও চীনে অবস্থানরত বিদেশীদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। এ আনন্দ মেলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা লি ইউ পিং এ সম্পর্কে বলেছেন , এ বছর আমরা ইউরোপের সংস্কৃতি ও রাস্তায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনকে আন্তর্জাতিক আনন্দ মেলার প্রধান বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছি । এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের বৈশিষ্টময় খাবার সরবরাহ এ বছরের আন্তর্জাতিক আনন্দ মেলার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ । মেলায় দশর্করা ইতালী , জার্মানী , ভারত , থাইল্যান্ড , ভিয়েতনাম , গ্রীস ও স্লোভেনিয়ার খাবার উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন । এ ক্ষেত্রে চীনে বিভিন্ন দেশের দুতাবাস যথেষ্ট সমথর্ন ও সাহায্য দিয়েছে । দুতাবাসগুলোর কুটনীতিকরা মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশন করেছেন।
ইন্টারনেট জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের কিছু কিছু শহরের নেট-নাগরিকরা ইন্টারনেটে নেট গেইমের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করে বসন্ত উত্সব উদযাপন করেছেন ।
|