২২ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মহা পরিচালক আল বারাদেই এই সংস্থার পরিষদে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিবষদের কাছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭৩৭ নম্বর সিদ্ধান্ত ইরানের ওপর কার্যকর করা সম্পর্কিত একটি রিপোট দাখিল করেছেন। এ রিপোটে আল বারাদেই এই মত প্রকাশ করেছেন যে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে ইরানকে তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচী বন্ধ করতে হবে, কিন্তু ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত মেনে চলে নি। জনমত অনুযায়ী, আল বারাদেই-এর রিপোট বের হওয়ার পর, ইরানের পরমাণু সদস্যা কোন দিকে বিকশিত হবে এবং বিশ্ব সম্প্রদায় কি কি পদক্ষেপ নেবে, তা আরেক বার বিশ্ব সম্প্রদায়ের আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
রিপোটে বলা হয়েছে, ইরানের সহযোগিতার অভাবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সদস্যরা এখনও ইরানে চালানো পারমাণিবক পরিকল্পনা পরীক্ষার কাজে বেশী অগ্রগতি অর্জন করতে পারে নি। আল বারাদেই রিপোট দাখিল করার পর, ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইদি পুনরায় মন্তব্য করেছেন যে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারে না। ইরানের নিজের পারমাণবিক পরিকল্পনা অব্যাহত থাকবে।
২২ ফেব্রুয়ারী জাতিসংঘ মহা সচিব বান কিউ মুন ইরানের পরমাণু সমস্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি ইরান সরকারের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মেনে চলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা শুরা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মতভেদ কেবল শান্তিমূলক পদ্ধতিতেই দূর করা যায়।
এখন পযর্ন্ত, পশ্চাত্য দেশসমূহের সন্দেহ রয়েছে যে, ইরান বে-সামরিক পরমাণু প্রযুক্তি উন্নয়নের নামে পরমানু অস্ত্র তৈরী করতে চায়। অন্য দিকে ইরান বরাবরই বলে যাচ্ছে যে, তাদের পরমাণু গবেষণা পুরোপুরি শান্তিমূলকভাবে পরমাণু শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য। যুক্তরাষ্ট্র সহ কয়েকটি পশ্চাত্য দেশের প্রস্তাবে গত বছরের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১৭৩৭ নম্বর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৬০ দিনের মধ্যে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু ইরান এ ব্যাপারে কোন আপোষ করে নি।
পরমাণু সমস্যায় ইরান কঠোর ও নমনীয় নীতি অনুসরণ করে এসেছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর থেকে পরমাণু সমস্যায় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ সবর্দাই কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। চলতি মাসের ২১ তারিখে তিনি বলেছেন, পারমাণিক প্রযুক্তি আয়ত্ত করা ইরানের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরান যত অল্প সময়ে সম্ভব এই প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে চেষ্টা করবে। প্রেসিডেন্টের তুলনায় ইরানের কয়েক জন কর্মকর্তার মনোভাব কিছুটা নমনীয়। তারা বারবার স্বদেশের পরমাণু সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এ পাশাপাশি, ইরানের পরমাণু শিল্প উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করা মধ্য-প্রাচ্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদেক্ষেপ। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে বলপ্রয়োগ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এ সব পদক্ষেপ প্রায় বিফল হয়েছে।২২ ফেব্রুয়ারী মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কন্ডোলিত্জা রাইস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রইরানের সঙ্গে সামরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চায় না। এর আগে , হোয়াইট হাউসও জানিয়েছে যে , যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের উপর আক্রমন চালানোর পরিকল্পনা নেই। কিন্তু , গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ মধ্য-প্রাচ্য অঞ্চলে ' দেশপ্রেমিক' ক্ষেপনাস্ত্র স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। তা ছাড়া, তিনি উপ সাগরীয় অঞ্চলে আর একটি বিমানবাহী জাহাজ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। জনমত অনুযায়ী, এখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের উপর সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, অবিলম্বে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের পরমাণু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যাবে না যদিও আল বারাদেই রিপোট দাখিল করেছেন। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার পরিষদ কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ৩ থেকে ৯ মার্চ পযন্র্ন্ত অনুষ্ঠিতব্য অধিবেশনে আল বারাদেই-এর দাখিল-করা রিপোট নিয়ে আলোচনা হবে।
|