v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-02-20 17:50:24    
বিশ্বজুড়ে বসন্ত উত্সব(২)

cri
    ব্রাজিলের বৃহত্তম শিল্প শহর সাউ পাওলোয়ে টেক্সি ড্রাভার সার্গীও বলেছেন:

    "শুধু চীনা নয়, আমরা ব্রাজীলীও জানি বসন্ত উত্সব খুব মজার একটি উত্সব। আমি অনেক আগে বসন্ত উত্সবের কথা শুনেছি।"

    সাক্ষাত্কার দেয়া লোকের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ বসন্ত উত্সবের কথা শুনেছে। তাদের মধ্যে অনেকেও এই উত্সবে উদযাপন অনুষ্ঠানের উপর খুব আগ্রহী।

    এই আয়াজ আপনারা শুনছেন, তা হলো ৯ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রিলিয়ার রাজধানী সিডনীতে অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের বসন্ত উত্সবের ধারাবাহিক উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বধোনী অনুষ্ঠানের স্থলে বাজানো যন্ত্রপাতির আয়াজ।

    ৫৮ বছর বয়স্ক হেনরি ফোর্ড এবং তার পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে ২ ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য।

    "কি আনন্দের অনুষ্ঠান! চমত্কার! আমি মনে করি বসন্ত উত্সব যেন আমাদের নিজের উত্সব। তা হলো অস্ট্রিলিয়ার বহুপক্ষীয় সংস্কৃতির একটি অংশ। আমরা এখানে খুব উপভোগ করছি। চীন সম্পর্কে আমার আগ্রহ খুব বেশি।"

    সিডনী শহরের মেয়ার ক্লোভার মোর উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

    "চীন হলো অস্ট্রিলিয়ার একটি গুরত্বপূর্ণ অংশীদার। এবং চীনা সংগঠন হলো সিডনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এই অনুষ্ঠান উদযাপন করা একটি নিয়মিত ঘটনা। এবং এই উদযাপন অনুষ্ঠান ক্রমাগত আরো সুন্দর ও চমত্কার হয়ে উঠছে। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখে বোঝা যায়, চলতি বছরের অনুষ্ঠানগুলো নিশ্চয় খুবই সুন্দর এবং মজার হবে।"

    তিনি ঠিক বলেছেন। সিডনীর বসন্ত উত্সবের উদযাপন অনুষ্ঠান ক্রমাগত বড় হয়ে উঠেছে। ২০০৬ সালে ৫.৩ লক্ষ মানুষ উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।

    আসলে এখন বসন্ত উত্সবের উদযাপন অনুষ্ঠান শুধু চীনা প্রবাসী এলাকায় উদযাপিত তা নয়, প্রধান সমাজেও তা পালন করার প্রবনতাও দেখা দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমপেয়ার স্টেট বিল্ডিং হলো নিউ ইয়র্ক শহরের একটি প্রতীক। ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছরের বসন্ত উত্সবের সময়ে এই ভবনের উপরে লাল ও স্বর্ণ রংয়ের আলোক ঝিক ঝিক করে। এই অনুষ্ঠান মার্কিন এশিয়া-আমেরিকা বাণিজ্য উন্নয়ন কেন্দ্র উদ্যোগ নিয়েছে। কেন এই দু'টি রংয়ের আলোক বেছে নেয়া হয় এই প্রসঙ্গে পরিচালক ওয়াং জাং হুয়া বলেছেন:

    "লাল ও স্বর্ণ রং হলো চীনের ঐতিহ্যিক রং। তা শুভ কামনার অর্থ আছে। তাতে বসন্ত উত্সবের আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। তাই আমরা এমপেয়ার স্টেট বিল্ডিং পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি, এই দুটি রংয়ের আলোক করে উত্সবটি উদযাপন করা।"

    ২০০৩ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক শহরে চীনের কৃষি চন্দ্রের প্রথম মাসের প্রথম দিন একটি আইনগত ছটি হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে চীনের কৃষি চন্দ্র নববর্ষ একটি আইনগত উত্সব হিসেবে নির্ধারিত হয়। প্রতি বছরের বসন্ত উত্সবে নিউ ইয়র্ক সংবাদ মাধ্যম সংক্রান্ত খবরগুলো প্রকাশ করে। স্থানীয় পত্রিকা "ডেইলি নিউস" বসন্ত উত্সবের আগে ধারাবাহিকভাবে বসন্ত উত্সব সংক্রান্ত পত্রিকা প্রকাশ করেছে। এই পত্রিকার উপ-সম্পাদক ক্রিস্টিন কার্টিন বলেছেন:

    "আমারা এখন একটি কাজ করছি। তা হলো আমাদের পাঠককে বসন্ত উত্সবের উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানায়। এবং তাদেরকে জানায় কি কি অনুষ্ঠানে তারা যোগ দিতে পারে এবং বসন্ত উত্সব সংক্রান্ত পটভূমি ও তথ্য।"

    চীনাদের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি অনেক আছে। যেমন "ফু" অক্ষর দরজায় লাগানো, ছুন লিয়েন লাগানো এবং জিও জি অর্থাত ডাম্পলিং খাওয়া। অনেক বিদেশী লোক চীনা বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে করলে তারাও এই নীতিগুলোর উপরে আগ্রহ জমে উঠেছে। ব্রাজিলের রাজধানী সাও পোলোয় আমাদের সংবাদদাতা লু ইয়াং তার চোখে পড়া দৃষ্টি আপনাদের জানাচ্ছেন।

    "একটি "ফু" অক্ষর বিক্রির দোকানে আমি দেখেছি অনেক ব্রাজিলী জমে আছেন। এই দোকানের মালিক জানিয়েছেন, কিছু ব্রাজিলী তারা ফু'র অর্থ কি আমাকে জিজ্ঞাস করেছে। আমি ব্যাখ্যা করেছি তার অর্থ হলো লাকি বা সমৃদ্ধ। একজন ব্রাজিলী নারী আমাকে বলেছেন, তিনি "ফু" অক্ষর তার দরজায় লাগাবেন।"

    চীনের রীতিনীতি অনুযায়ী, বসন্ত উত্সবের সময় খাবারের রকম সবচেয়ে বেশি। এই সময়ে অনেক বিদেশীরা চীনা রেস্টরায় চীনা খাবার খেলে বসন্ত উত্সবের আনন্দ উপভোগ করেন। প্যারিসের ১৫ ডিস্ট্রক্টের একটি চীনা রেস্টরায়ের মালিক মিস্টার ইয়ে বলেছেন, বসন্ত উত্সবের সময় অনেক ফ্রান্চ এখানে আসে চীনা খাবার খেতে।

    ইয়ে বলেছেন , প্রতিবছর বসন্ত উত্সবের সময় আমার দোকানে অতিথিদের ভীড় জমে যায় । কোনো কোনো সময় সীট অগ্রিম বুক করে রাখতে হয় । আমার রেস্তোঁরায় আশিটি সীট আছে । বসন্ত উত্সবের আগেই অর্ধেক সীট অগ্রিম বুক হয়ে যায় । অনেক ফরাসী বন্ধুও চীনাদের সঙ্গে বসন্ত উত্সব উদযাপন করতে আগ্রহী । তারা মনে করেন চীনের বসন্ত উত্সবের সময় তারা বৈশিষ্ট্যময় চীনা খাবার খেতে পারবেন ।

    বসন্ত উত্সবের টেবিলে চাওচি নামে এক ধরনের চীনা খাবার অপরিহার্য । চাও চি মাংসের পুর দেয়া এক ধরনের পিঠা । চীনের সংস্কৃতিতে চাওচির অর্থ সপরিবার মিলন । চীনের রীতি অনুসারে চান্দ্র বর্ষের শেষ দিন অর্থাত্ বসন্ত উত্সবের আগের দিন পরিবারের সবাই মিলে এক সঙ্গে বছরের শেষ দিনের খাবার খান । তাই যারা বাইরে কাজ করেন , তারা বছরের শেষ দিনের খাওয়ার জন্য হাজার হাজার কিলোমিটার দূর হলেও বাড়ীতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেদিন রাতে পরিবারের সবাই মিলে চাও চি তৈরী করেন। ওয়াং চিং চিং জাপানে ১৪ বছর ধরে থাকেন । বহু বছর তিনি পরিবার পরিজনের সঙ্গে চাও চি তৈরী করতে পারেন নি । তবে বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে তিনি জাপানে বসন্ত উত্সবের এক উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এবং চাও চি খেয়েছেন ।

    ওয়াং চিং চিং বলেছেন , চীনের বসন্ত উত্সব উদযাপন উপলক্ষে কিওটো উত্তর অঞ্চল চীনা খাবার চাও চি তৈরীর এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে , যা চীনা ও জাপানীদের হৃদ্যতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে । বিদেশে চীনাদের বসন্ত উত্সব উদযাপন করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দ অনুভব করছি । অনুষ্ঠানে আমরা পুরনো বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করেছি এবং অনেক নতুন বন্ধু পেয়েছি।