v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-02-22 17:06:05    
ছিনহাই প্রদেশ শিল্পায়নের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের চেষ্টা করছে

cri

 ছিংহাই প্রদেশ চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত। ছিংহাই প্রদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও সেখানকার জনসংখ্যা খুব কম, পরিবহন ব্যবস্থা দুর্বলসহ নানা কারণে চীনের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় উন্নত অঞ্চলের তুলনায় ছিংহাই প্রদেশকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনুন্নত অঞ্চল বলা হয়। সেখানের দরিদ্র্য জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি। গত কয়েক বছরের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছিংহাই প্রদেশ ধাপে ধাপে কৃষির শিল্পায়নের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের এক নতুন পথ খুঁজে বের করেছে।

 গত শতাব্দীর ৭০ দশকের শেষ দিকে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্ততা চালু করার পর ছিংহাই প্রদেশের কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি দ্রুত বিকশিত হয়েছে। কৃষক ও পশুপালকদের জীবন যাত্রার মান স্পষ্টভাবে উন্নত হয়েছে। দারিদ্র অবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু অতি খারাপ প্রাকৃতিক অবস্থা, দুর্বল বুনিয়াদী ব্যবস্থা, একক শিল্প কাঠামোসহ নানা কারণে ছিংহাই প্রদেশের কিছু অঞ্চলের কৃষক ও পশুপালকদের দারিদ্র সমস্যা এখনো লক্ষ্যণীয়। এখন পর্যন্ত ছিংহাই প্রদেশে ২৪০০টিরও বেশি দরিদ্র গ্রাম ও ১১ লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি দরিদ্র জনসংখ্যা রয়েছে।

 ছিংহাই প্রদেশের দারিদ্র বিমোচন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সোং ওয়েই চেন ছিংহাই প্রদেশের দারিদ্র সমস্যা সম্পর্কে জানিয়েছেন, "দূর সীমান্ত অঞ্চল দরিদ্র। দরিদ্র গ্রামের সংখ্যা বেশি। দারিদ্র বিমোচনের ভার অতি ভারি। অধিকাংশ দরিদ্র্য জনসংখ্যা হচ্ছে সংখ্যালঘু জাতির।"

 কিছু দিন আগে আমাদের সংবাদদাতা ছিংহাই প্রদেশের রাজধানী সিনিংয়ের কাছে পিংআন জেলার ফানশেন গ্রামে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। স্থানীয় গ্রামবাসীরা সংবাদদাতাকে বলেছেন, তাঁরা প্রধানত গম, আলু ইত্যাদি ফসল রোপণ করে। কৃষকরা এ ফসলগুলো বিক্রি করে জীবন চালায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল ভালো না হলে কৃষকদের আয়ও হয় না। আয় বাড়ানো ও জীবনযাপনের অবস্থা উন্নয়নের জন্য গ্রামের যুবকরা বাইরে গিয়ে চাকরি করেন। গ্রামে কেবল বৃদ্ধবৃদ্ধা ও বাচ্চারা থাকেন।

 পিংআন জেলার দারিদ্র বিমোচন কার্যালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি চিয়া ইয়ো ছুন বলেছেন, "আমাদের এই জেলায় মোট ১১১টি গ্রাম আছে। এর মধ্যে ৭৩টি দরিদ্র গ্রাম আছে। "

 জানা গেছে, ফানশেন গ্রামের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৬২৫ ইউয়েন রেনমিনপিরও কম। এখন ছিংহাই প্রদেশে ফানশেন গ্রামের মতো আরো ১৪০০টিরও বেশি গ্রাম আছে।

 আগে স্থানীয় সরকার দরিদ্র জনগণকে শুধু ভর্তুকি দিতো। এভাবে তাঁদের ক্ষুধা সমস্যার সমাধান হয়েছে । কিন্তু সত্যিকার দারিদ্র বিমোচন হয় নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছিংহাই প্রদেশ আগেকার দারিদ্র বিমোচনের ধ্যানধারণা পরিবর্তন করেছে। তাঁরা কৃষি শিল্প উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে দরিদ্র জনসংখ্যাকে কর্মসংস্থান ও আয়ের উত্স সরবরাহ করেন। কৃষিজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে কাজ করা হচ্ছে বর্তমানে ছিংহাই প্রদেশের কৃষকদের প্রধান আর্থিক উতসের অন্যতম। এই কৃষিজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলো বিশেষ করে কৃষকদের দারিদ্র বিমোচনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষির অবসর সময়ে কৃষকরা এখানে এসে কাজ করেন।

 ফানশেন গ্রামের কাছে অবস্থিত ওয়েনজি গ্রামে সংবাদদাতা একটি কার্পেট কারখানা দেখেছেন। এই কার্পেট কারখানার দায়িত্বশীল ব্যক্তি ওয়েই চান ইয়ু সংবাদদাতাকে বলেছেন, এখানের শ্রমিক বেশির ভাগ হচ্ছে গ্রামের নারীরা। তিনি বলেছেন, "এখানে ৪০ জন শ্রমিক আছে। তাঁদের বার্ষিক গড়পড়তা বেতন ৩০০০ থেকে ৪০০০ ইউয়েনের মতো।"

 এই কারখানা হচ্ছে ওয়েনজি গ্রামে প্রতিষ্ঠিত কার্পেট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একটি উত্পাদন ঘাঁটি। ছিংহাই প্রদেশে এই ধরনের কারখানা আরো অনেক আছে। ছিংহাই প্রদেশের বিভিন্ন স্তরের সরকার কৃষিজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো দরিদ্র অঞ্চলে কারখানা খুলতে উত্সাহ দেয়, যাতে শ্রম শক্তি হিসেবে দরিদ্র কৃষকদের গ্রহণ করে তাঁদের আয় বাড়ানো যায়। এখন ছিংহাই প্রদেশ কৃষকদের দারিদ্র বিমোচন সাহায্যদানের স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্প চেন গড়ে তুলেছে। গ্রামীণ কারখানার উত্পাদিত পণ্যগুলো কেবল চীনে বিক্রি হয় তাই নয়, বরং বিদেশেও রপ্তানী করা হয়। বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তিব্বতী কার্পেট হচ্ছে বিদেশে রপ্তানীকৃত পণ্যের অন্যতম। ১০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের তিব্বতী কার্পেট রপ্তানী করলে ১৬০০ জন শ্রম শক্তির কর্মসংস্থানের সমস্যা সমাধান করা যায়।

 উত্পাদনের ফলপ্রসূতা বাড়ানোর জন্য কৃষিজাত দ্রব্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান কারখানাগুলোর কৃষকদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেয়। ১৮ বছর বয়স্ক গ্রামীন মেয়ে টিয়েন ইয়ু ছুনের মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর বাসায় কোন কাজ ছিলো না। সম্প্রতি তিনি কার্পেট বোনার প্রযুক্তি শিখে সন্তোষজনক চাকরী পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, "তিন মাসের প্রশিক্ষণের পর আমাদেরকে ১৬টি কারখানায় পাঠায়। আমরা প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করি।"

 ছিংহাই প্রদেশের দারিদ্র বিমোচন প্রক্রিয়ায় কৃষিজাত দ্রব্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অধিক থেকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে জনসাধারণকে ধনী হওয়ার পথে নিয়ে যাওয়ার পথনির্দেশক এবং কৃষক পরিবার ও বাজারের মধ্যকার সেতু। এর মাধ্যমে হাজার হাজার কৃষক পরিবার ক্ষুদ্র ব্যবসা আর বিরাট বাজারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযোগ করে । ছিংহাই প্রদেশের সামাজিক বিজ্ঞান এ্যাকাডেমির ভাইস চেয়ারম্যান সুন ফা পিং বিশ্লেষণ করে বলেছেন, "কৃষি ও পশুপালন শিল্পের শিল্পায়ন হচ্ছে আধুনিকায়নের মহান উত্পাদনের তত্ত্ব ও ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিতে ঐতিহ্যিক কৃষি ও পশুপালন শিল্পের সংস্কার করা। যাতে তুমুল বাজার প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় কৃষি ও পশুপালন শিল্পে প্রাধান্য অর্জন করা যায়।"

 জানা গেছে, এখন কৃষির শিল্পায়ন পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে ছিংহাই প্রদেশের ৩ লাখ দরিদ্র কৃষক ও পশুপালক পরিবারের আয় বাড়িয়েছে। কৃষক ও পশুপালকদের শিল্পায়নের সংশ্লিষ্ট কাজের মাধ্যমে পাওয়া আয় ২৭ কোটি ইউয়েন রেনমিনপিতে পৌঁছেছে। প্রত্যক পরিবারের গড়পড়তা আয় বৃদ্ধি ৯০০ ইউয়েন হয়েছে।