লাইবেরিয়া প্রজাতন্ত্র আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। দেশটির উত্তর দিকে গিনি, উত্তর-পশ্চিম দিকে সিয়েরা লিয়ন, পূর্ব দিকে কোটে ডি-ভা, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আটলান্টিক মহাসাগর। দেশটির আয়তন মোট ১.১ লাখ বর্গকিলোমিটার এবং তটরেখা মোট ৫৩৭ কিলোমিটার।
লাইবেরিয়ায় জাতির সংখ্যা মোট ২২টি। লোকসংখ্যা মোট ৩৪.৮ লাখ। সরকারী ভাষা ইংরেজী। দেশটির ৪০ শতাংশ অধিবাসী বস্তুপূজায় বিশ্বাসী, ৪০ শতাংশ খৃষ্টান ধর্মে এবং ২০ শতাংশ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে।
লাইবেরিয়ায় ১৮৪৭ সালের জুন মাসে মার্কিন নিগ্রোরা অভিবাসী হয়। এর পর কয়েক দশক ধরে তারা বংশাতুক্রমিক শাসন পরিচালনা করে। ১৯৮০ সালে আদিবাসী জাতির তুও ই অভ্যূত্থান ঘটিয়ে সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৮৫ সালে লাইবেরিয়ায় বহু পার্টির অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচনে তুও ই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন । ১৯৮৯ সালে বিদেশে আশ্রয় নেয়া সাবেক সরকারী কর্মকর্তারা তাদের সশস্ত্র লাইবিরিয়ায় ফিরে এলে দেশটিতে গৃহ-যুদ্ধ শুরু হয় । ২০০৩ সালে লাইবেরিয়ায় অন্তর্বর্তিকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে, লাইবেরিয়ার গৃহ-যুদ্ধ শেষের পর প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে দেশটির নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
লাইবেরিয়া হচ্ছে জাতিসংঘ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের সবচে' দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দীর্ঘকালীন যুদ্ধ লাইবেরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ২০০৫ সালে লাইবেরিয়ার জি.ডি.পির পরিমাণ দিল মোট ৫৪.৮ কোটি মার্কিন ডলার। মাথাপিছু আয় মোট ১৭৫ মার্কিন ডলার।
লাইবেরিয়ার অর্থনীতির প্রধানউপকরণ হচ্ছে কৃষি শিল্প । গ্রামীণ লোকসংখ্যা দেশটির মোট লোকসংখ্যার ৭০ শতাংশ। প্রাকৃতিক রবার, কাঠ এবং লোহা-খনিজসম্পদের উত্পাদন হচ্ছে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ দিক। রপ্তানি হলো লাইবেরিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা লাভের গুরুত্বপূর্ণ উত্স।
লাইবেরিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর। আফ্রিকার লোহা-খনিজসম্পদ রপ্তানি ক্ষেত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে লাইবেরিয়ার লোহা-খনিজসম্পদ মজুদের পরিমাণ হলো ১.৮ বিলিয়ন টন । তাছাড়াও , দেশটির হীরা, সোনা, তামা এবং ভারী ধাতু সম্পদ আছে। সারা দেশের আয়তনের ৫৮ শতাংশ হলো বনসম্পদ , এর আয়তন হলো ৪৭.৯ লাখ হেকটর। আফ্রিকার প্রচুর কাঠের এলাকা হিসেবে এখানে প্রচুর বিখ্যাত গাছপালা আছে।
লাইবেরিয়ার সামুদ্রিক পরিবহণ শিল্প বিশ্বের বিশেষ স্থানে রয়েছে। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আটলান্টিক মহাসাগর।এর জন্য লাইবেরিয়ার সামুদ্রিক পরিবহণে খুবই সুবিধা হয়। মনরোভিয়াসহ এর মোট পাঁচটি বন্দর আছে। এসব বন্দরে বার্ষিক পরিবহনের পরিমাণ হলো ২ লাখ টন।
২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে চীন ও লাইবেরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর, দু'দেশের সম্পর্কের সুষ্ঠু উন্নয়ন হয়েছে। দু'পক্ষ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরক সম্মান এবং সমর্থন করে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতাও দ্রুতভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ২০০৫ সালে চীন ও লাইবেরিয়ার বাণিজ্যের পরিমাণ দিলো ১৬.৪ কোটি মার্কিন ডলার। ২০০৬ সালের জানুয়ারী থেকে নভেম্বর পর্যন্ত , দু'দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দিলো ৩৭.৫ কোটি মার্কিন ডলার। পূর্ববতী বছরের চেয়ে এ সংখ্যা ১৫কোটি বেশি।
|