চীন ও আসিয়ানের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ দ্রুততর করার পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুয়াংশি উত্তর উপসাগরের অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন ও উন্মুক্ত দ্রুত করছে।
ছিন চৌ
কুয়াংশি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকার কেন্দ্রে অবস্থিত ছিন চৌ হচ্ছে উত্তর উপসাগরের পাশে একটি নতুন উপকূলীয় শহর। যায়গাটি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সাগরে প্রবেশ করার সবচেয়ে সুবিধাজনক প্রণালীর অন্যতম। চীন ও আসিয়ানের সহযোগিতায় ছিন চৌর অদ্বিতীয় প্রাধান্য রয়েছে। ছিন চৌকে চীন ও আসিয়ানের পণ্যদ্রব্যের আমদানী ও রপ্তানীর সংযোগস্থল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় সরকার জোরালোভাবে আধুনিক লজিস্টিকস শিল্প উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে। সবেমাত্র নির্মিত পণ্য পরিবহনের জাহাজঘাটায় সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় সংবাদদাতা লক্ষ্য করেছেন, অনেক জাহাজ ভিয়েতনামের কয়লা ও আসিয়ানের অন্য দেশের আনা খনিজ পদার্থ বোঝাই করছে। ছিন চৌ শহরের কর্মকর্তা ওয়াং দে লুন জানিয়েছেন, "কালো রংয়ের খনিজ পদার্থ হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ম্যাংগ্যানীজ ও লৌহ । ছিন চৌ চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকৃত খনিজ পদার্থের বিতরণ ও প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। ছিন চৌ কাঁচা মালের বাজার ও বিক্রি বাজার সংলগ্ন স্থানে। এখন চীনের অনেক বড় আকারের ব্রঞ্জ খনি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ধাতু উত্পাদন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিন চৌয় এসে পুঁজি বিনিয়োগ করতে চায়। "
ওয়াং দে লুন বলেছেন, চীনের খনিজ পদার্থের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর ছিন চৌর আমদানিকৃত বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থের পরিমাণ নিরন্তরভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এখন এখানের জাহাজঘাটার বার্ষিক মাল বোঝাই ও খালাসের পরিমাণ পূর্ব-নির্ধারিত সামর্থ্য ছাড়িয়ে গেছে। এখন দুটি এক লাখ টন শ্রেণীর জাহাজঘাটা নির্মিত হচ্ছে। দুটি ৫০ হাজার টন শ্রেণীর কন্টেনার জাহাজঘাটার নির্মাণকাজও শুরু হবে।
ফাং চেন কাং শহর
ভিয়েতনামের সঙ্গে সংলগ্ন উপকূলীয় শহর ফাং চেন কাং হচ্ছে চীন ও ভিয়েতনামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বাণিজ্য শহর। ফাং চেন কাং শহরের অধীনে তুংসিন শহরের সীমান্ত বাণিজ্য পরিচালনা ব্যুরোর পরিচালক ছেন লি চাও সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, "ভিয়েতনাম থেকে আসা জাহাজে রয়েছে ভিয়েতনামের উত্পাদিত কৃষিজাত দ্রব্য , চা, সামুদ্রিক খাবার, সবুজ বীন ইত্যাদি। চীন থেকে ভিয়েতনামে যাওয়ার জাহাজে প্রধানত আমাদের শিল্পজাত দ্রব্য, ঘরোয়া বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, হালকা শিল্প ও বস্ত্রজাত দ্রব্য, নির্মাণ সামগ্রী আছে। "
ছেন লি চাও বলেছেন, প্রতি দিন প্রায় ৩০০০ লোক চীন ও ভিয়েতনাম সীমান্ত অঞ্চলে বাণিজ্য করেন। আমদানি ও রপ্তানী পণ্যের পরিমাণ ১৫০ থেকে ২০০ টনের মতো। লজিস্টিকস ও লোকজনের যাতায়াত বাড়ানোর পাশাপাশি বহু বছর আগে নির্মিত চীন-ভিয়েতনামের সীমান্ত সেতু আর চাহিদা মেটাতে পারে না। এখন চীন ও ভিয়েতনাম নতুন সেতু নির্মান ও আরো বিরাট আকারের বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে ।
ছুন জো শহর
ছিন চৌ ও ফাং চেন কাং শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছুন জো শহর হচ্ছে চীনের বৃহত্তম আখ রোপণ ও আখের চিনি উত্পাদন কেন্দ্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছুন জো শহর সক্রিয়ভাবে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করে আসছে। ইতিমধ্যে ভিয়েতনামের কয়লা সম্পদ, ছুন জো-থাইল্যান্ড শিল্প বাগান, আসিয়ানের যুব শিল্পপতিদের উদ্যান ইত্যাদি প্রকল্প চালু হয়েছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত চিনি শিল্পপ্রতিষ্ঠান --- মিটিপোল গোষ্ঠীর পুঁজি বিনিয়োজিত কুয়াংশি পূর্ব এশিয় কাগজ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই প্রকল্পের মোট পুঁজি ৪৭ কোটি ইউয়েন রেনমিনপি। তারা আখের চিনি শিল্পে উত্পাদিত ছিবড়াকে কাঁচা মাল হিসেবে ব্যবহার করে কাগজ তৈরী করে। বার্ষিক কাগজ উত্পাদনের পরিমাণ ৯০ হাজার টনের বেশি হবে।
থাইল্যান্ডের কুয়াংশি পূর্ব এশিয় কাগজ শিল্প প্রকল্পের দায়িত্বশীল ব্যক্তি মা চো মিন বলেছেন, কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠার পর স্থানীয় সরকারের যথাসাধ্য সমর্থন পেছেয়ে। তিনি বলেছেন, "ছুন জো শহর আমাদের অত্যন্ত সুবিধাজনক দামে জমি দিয়েছে। পুঁজি বিনিয়োগের ব্যয়ের ক্ষেত্রেও অনেক সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছে। তা ছাড়া ছুন জো শহর আমাদের জন্য একটি সড়ক নির্মাণ করেছে , অত্যন্ত সুবিধাজনক কর আদায় নীতি প্রণয়ন করেছে। এ সব ব্যবস্থা হচ্ছে আমাদের পুঁজি বিনিয়োগের বিরাট সমর্থন ও সাহায্য। " মা চো মিন কুয়াংশি পূর্ব এশিয় কাগজ শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী।
গত বছর কুয়াংশি উত্তর উপসাগরের অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে শুরু করে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নান নিং, পেই হাই, ছিন চৌ ও ফাং চেন কাং শহর। পরে নিকটবর্তী ইয়ু লিন ও ছুন জো শহরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করার জন্য গত বছর কুয়াংশি প্যান-উত্তর উপসাগরের অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। তারা ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও ব্রুনেইসহ দেশগুলোকে উত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলের সহযোগিতার অংশীদার হিসেবে গড়ে তুলেছে।
কুয়াংশি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ভাইস-চেয়ারম্যান চেন উ বলেছেন, প্যান-উত্তর উপসাগরের অর্থনৈতিক সহযোগিতা অঞ্চল প্রতিষ্ঠা চীন ও আসিয়ানের সহযোগিতার বিষয়বস্তু সম্প্রসারণের জন্য হিতকর, আরো বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে সৃষ্টি নিবন্ধ করবে। তিনি বলেছেন, "এমন একটি নতুন পরিস্থিতি সার্বিকভাবে চীন ও আসিয়ানের সহযোগিতার বিষয়বস্তু সমৃদ্ধ ও গভীর করার জন্য হিতকর। চীন ও আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল নির্মাণের জন্য অনুকুল। চীন ও আসিয়ান উভয় তা থেকে ভাল মুনাফা অর্জন করবে। এ ছাড়া আসিয়ান দেশগুলোর অভিন্ন আশা-আকাঙ্ক্ষা ও দাবি প্রতিফলিত হবে। "
|