v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-02-09 19:02:05    
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন মহাপরিচালক মার্গারেট ছেন

cri
    ৪ জানুয়ারী চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক এলাকার মাদাম মার্গারেট ছেন আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহা পরিচালক হয়েছেন । জাতিসংঘের কোনো এক বিশেষ সংস্থায় তিনি প্রথম চীনদেশী যিনি সর্বোচ্চ নেতৃস্থানীয় পদে বহাল হলেন। একজন নারী হিসেবে মাদাম মার্গারেট ছেন কি কি অভিজ্ঞতা ও সাফল্য দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক হতে এত বেশি দেশের সমর্থন লাভ করেছেন ? এই পদে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি কিভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ?

    ৫৯ বছর বয়সী মার্গারেট ছেন পরপর কানাডা ,সিঙ্গাপুর ও বৃটেনে পড়াশুনা করে চিকিত্সা বিদ্যা ক্ষেত্রে ডঃ ডিগ্রি লাভ করেছেন । ১৯৯৪ সাল তিনি হংকং স্বাস্থ্য বিভাগের মহা পরিচালক পদে নিযুক্ত হন । ১৯৯৭ সাল তিনি এই পদে নিযুক্ত হওয়ার পরের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সম্মুখীন হন ।

    ১৯৯৭ সালের মে মাসে হংকংয়ের এক মুর্গী ফার্মে বার্ডফ্লু সনাক্ত হন । হংকংয়ে এই প্রথমবার বার্ডফ্লু সনাক্ত হয় । এর পরের কয়েক মাসে বার্ডফ্লু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বিপুল সংখ্যামুর্গি মারা যায় । কিন্তু বিশ্বাস করা কঠিন যে,গৃহপালিত হাঁসমুর্গিকে আক্রান্তকারী এই ভাইরাসের পরিবর্তন হয় এবং স্তন্যপায়ী জীব এমন কি মানবদেহকে সংক্রামিত করে। আগষ্ট মাসে হংকংয়ের একজন শিশু ছেলে বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় । এটা সারা বিশ্বে বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম লোক । এই আকস্মিক নতুন সংক্রামক রোগ মোকাবেলায় মার্গারেট ছেন নিরলসভাবে কাজ করেন । তিনি ১৬ লাখ মুর্গী হত্যা করার আদেশ দেন । বিখ্যাত চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ চু চুংহান যিনি মার্গারেট ছেনের সহকর্মী ছিলেন তিনি মার্গারেট ছেনের খুব প্রশংসা করেন । তিনি বলেছেন , তিনি একজন অত্যন্ত স্নেহমমতাপূর্ণ নারী । কিন্তু কাজের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হলে তিনি কিছু দ্বিধা করেন না । সঙ্গে সঙ্গে তিনি এক সিদ্ধান্ত নিলেন । তাঁর সিদ্ধান্ত অনুসারে তিন দিনের মধ্যে ১৬ লাখ মুর্গী অর্থাত তিন দিনের মধ্যে হংকংয়ের সব জ্যান্ত মুর্গী হত্যা করা হয় ।এটা হংকংবাসীকে বিরাটভাবে আলোড়িত করে । মানুষ এই প্রথমবার্ডফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় সে সময় এব্যাপারে হংকংয়ের চিকিত্সকদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না । মার্গারেট ছেন নানা আপত্তির সামনে বার্ডফ্লু এলাকার সব জ্যান্ত মুর্গি হত্যা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন । ফলে সময়োচিতভাবে বার্ডফ্লু নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মাদাম মার্গারেট ছেনের এই কার্যক্রম পরবর্তীকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বার্ডফ্লু নিয়ন্ত্রণ করার এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে পরিণত হয় । ২০০৩ সালে সার্স ঘটার সময়কালে মার্গারেট আবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । তখন তিনি প্রতিদিন গণ মাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে সাংবাদিকদের একটার পর একটা জরুরী ও তীক্ষ্ণ প্রশ্নের উত্তর দেন । সেই ধৌঁয়াহীন যুদ্ধের সামনে তিনি খোলামনে বলেছেন , আমরা তাদের সঙ্গে মিলে এই পথ বেয়ে যাই । যাতে তারা আমাদের অসুবিধা আমাদের সামনের চ্যালেঞ্জের কথা বুঝতে পারে । সত্যিকথা , আমাদের উপরে চাপ অত্যন্ত বেশি । আমি সবসময় সত্যিকথা বলি । আমি যা জানি তা নাগরিকদের জানাই । যা আমি জানি না তাদেরকে আমি বলব সেটা আমি জানি না । সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় একের পর এক চিকিত্সা কর্মী চোখের সামনে মারা যাওয়ার ডাক্তার থেকে সরকারী কর্মকর্তা হওয়া মার্গারেট ছেনের চোখ থেকে অনেকবার অশ্রু বেরুল । এ দিক থেকে একজন নারী হিসেবে তাঁর নম্রতা আমরা দেখেছি । সেই আকস্মিক সার্স রোগ প্রতিরোধমুলক যুদ্ধে মার্গারেট ছেন পরিপূর্ণভাবে তাঁর চিকিত্সা বিদ্যার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানবোধ এবং যথেষ্ট ধৈর্য ও সাহসিকতা দেখিয়েছেন । মাদাম মার্গারেট ছেনের প্রতিভা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা লাভ করে । ২০০৩ সালের আগষ্ট মাসে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানবজাতির পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হন । এর পর তিনি সংক্রামক রোগ বিষয়ক সহকারী মহাসচিব হন । যে দেশগুলো বার্ডফ্লু মোকাবেলার পরিকল্পনা প্রনয়ণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কাজ করার তিন বছরে তিনি সাফল্যের সঙ্গে এই সংখ্যাকে ৫০ থেকে ১৭০তে বাড়িয়ে দিয়েছেন । পাশাপাশি তিনি চীন , থাইল্যান্ড , ভিয়েতনাম ও মেক্সিকো প্রভৃতি দেশের সংক্রামক রোগমুক্তবৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রযুক্তি ত্বরান্বিত করেছেন । তিনি সাফল্যের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের এফ হোফমান লা রোছে লিমিটিডকে ফ্লু প্রতিরোধের ২ কোটি ট্যাব্লেট২০টি দরিদ্র দেশকে প্রদানকরতে পরামর্শ দেন এবং এই সব দেশের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বিরাট অবদান রাখেন । ২০০৬ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক মহা পরিচালক, দক্ষিণ কোরিয়ার লে চুং ওক হঠাত মারা যাওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নভেম্বরমাসে নতুন মহা পরিচালক নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় । চীন সরকার ৩০ বছরের স্বাস্থ্য বিষয়ক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মার্গারেট ছেনকে এই পদের আনুষ্ঠানিক প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করে । অবশেষে তিনি ১৩জন প্রার্থীর মধ্য থেকে জয়ী হয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহা পরিচালক নির্বাচিত হন । তাঁর কার্যমেয়াদ ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সংস্থা । এই সংস্থা ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় । নির্বাচিত হওয়ার পর মার্গারেট ছেন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে । এ সম্পর্কেবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপ মহা পরিচালক হু ছিংলি বলেছেন, বলা যায়,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে তা অত্যন্ত কঠিন হবে।অনেক সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা হয় নি ।একটার পর এক নতুন রোগ সনাক্ত হয় । তাছাড়া অনেক অ-সংক্রামক রোগের হার বেড়ে যাচ্ছে । দরিদ্র দেশগুলোকে তাদের জনগণের স্বাস্থ্যের মান উন্নত করতে সাহায্য করা, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উন্নতদেশগুলোর স্বাস্থ্যগত সাহায্য ত্বরান্বিত করা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রধান কাজ হবে । নিজের রাজনৈতিক কর্মসূচী সম্পর্কে মার্গারেট ছেন বলেছেন, আফ্রিকা সংক্রামক রোগের গুরুতর শিকার । তাই আফ্রিকার গণ স্বাস্থ্য ও বিশ্বের নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নত করা আমার কার্যমেয়াদের প্রধান লক্ষ্য ।