মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট আর্মানডো এমিলিও গুবুজার আমন্ত্রণে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ৮ ফেব্রুয়ারী মোজাম্বিকের রাজধানী মাপুটো পৌঁছে মোজাম্বিকে তাঁর রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেছেন।
মোজাম্বিক আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারত মহাসাগরের পাশে অবস্থিত। সওয়াহিলি ভাষায় মোজাম্বিকের অর্থ হচ্ছে "আলোক আসন্ন"।
মোজাম্বিকের স্বাধীনতার আগে চীন মোজাম্বিকের মুক্তি সংস্থার জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম সমর্থন করতো। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন অর্থাত্ মোজাম্বিকের স্বাধীনতা দিবসে চীন ও মোজাম্বিকের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। গত ত্রিশাধিক বছরে চীন ও মোজাম্বিকের জনগণের মধ্যে গভীর মৈত্রী স্থাপিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের সফর হচ্ছে চীনের রাষ্ট্রীয় কোন শীর্ষ নেতার প্রথম মোজাম্বিক সফর। তিনি মোজাম্বিক সরকার ও জনগণের উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন।
মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট গুবুজা বিমান বন্দরে প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ও তাঁর সফরসঙ্গীদের স্বাগত জানান এবং বিমান বন্দরে মনোজ্ঞ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
কয়েক হাজার মোজাম্বিকের জনসাধারণ উত্সবের পোশাক পড়ে রোদের নিচে নাচ গান করে প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওকে অভ্যর্থনা জানান।
মোজাম্বিক হচ্ছে জাতিসংঘ প্রকাশিত পৃথিবীতে সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলোর অন্যতম। দীর্ঘকাল ধরে চীন যথাসাধ্যভাবে মোজাম্বিককে নানা ধরনের সাহায্য করে আসছে। চীনের সাহায্যে মোজাম্বিকে সংসদ ভবন, নতুন সামরিক অঞ্চলের বাসস্থান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিস ভবন ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে। ২০০৬ সালের প্রথম দিকে চীন মোজাম্বিকে একটি জাতীয় স্টেডিয়াম নির্মান করতে রাজি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ও মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট গুবুজা
প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও মাপুটোয় পৌঁছানোর পর প্রেসিডেন্ট গুবুজার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর দু'দেশের শীর্ষ নেতারা মিলিতভাবে দু'দেশের অর্থনীতি, প্রযুক্তি, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া ক্ষেত্রসহ মোট আটটি সহযোগিতা দলিলের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং দেশি-বিদেশি সংবাদদাতাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও বলেছেন, "আমার এবারের মোজাম্বিক সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের পেইচিং শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল বাস্তবায়ন করা, চীন ও মোজাম্বিকের ঐতিহ্যিক মৈত্রী সুসংবদ্ধ করা, বাস্তব সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা, অভিন্ন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। এই মাত্র আমি প্রেসিডেন্ট গুবুজার সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা চীন ও মোজাম্বিকের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার জোরদার করার বিষয়ে ব্যাপক মতৈক্যে পৌঁছেছি। আমরা একমত হয়েছি যে, দু'দেশ উর্ধ্বতন পর্যায়ের বিনিময় অবলম্বন করবে, আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা গভীরতর করবে, সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্প্রসারণ করবে, আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে সমন্বয় জোরদার করবে। স্বাক্ষরিত ধারাবাহিক দলিলগুলো হচ্ছে চীন ও মোজাম্বিকের বাস্তব সহযোগিতা সম্প্রসারণের সুনির্দিষ্ট ফলাফল।"
হু চিন থাও ঘেষণা করেছেন, চীন ও আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের পেইচিং শীর্ষ সম্মেলনের সফল বাস্তবায়ন করা, মোজাম্বিকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সমর্থন করার জন্য চীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীন সুদবিহীন ঋণ মওকুফ করবে, চীনে রপ্তানীকৃত মোজাম্বিকের শুণ্য শুল্ক হার পণ্যদ্রব্যের রকম বাড়াবে। চীন মোজাম্বিকের জন্য একটি কৃষি প্রযুক্তিগত আদর্শ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে, গ্রামীণ স্কুল ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও চিকিত্সা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াবে, মোজাম্বিকের কাছে বাজার আরো উন্মুক্ত করবে। হু চিন থাও বলেছেন, "আমি বিশ্বাস করি, চীন ও মোজাম্বিকের মিলিত প্রচেষ্টায় চীন ও মোজাম্বিকের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্কের অবশ্যই আরো সুন্দর ভবিষ্যত আসবে।"
প্রেসিডেন্ট গুবুজা বলেছেন, "প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের এবারের সফর হচ্ছে দু'দেশের দীর্ঘকালীন মৈত্রীর সুফল। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, চীন মোজাম্বিক প্রজাতন্ত্রকে গুরুত্ব দেয়। ইতোপূর্বে চীন মোজাম্বিককে বিপুল সহায়তা করেছে। আমরা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর মত বিনিময় করেছি। আমরা অব্যাহতভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন করতে রাজি আছি। আজকে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো মোজাম্বিকের বিকাশ, দারিদ্র বিমোচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।"
|