v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-02-08 17:14:33    
উত্তর-পূর্ব চীনের সাজসরঞ্জাম নির্মাণ শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন

cri

 ২০০৪ সালে চীন সার্বিকভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়নের পরিকল্পনা শুরু করে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে পুনরায় চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পুরোনো শিল্প কেন্দ্রের অতীত উজ্জ্বলতা পুনরুদ্ধার করা। এ পরিকল্পনা চালু করার দু'বছরে সংশ্লিষ্ট নীতি কার্যকর ও কাঠামোর সুবিন্যস্ত করার মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুষ্ঠু পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে সাজসরঞ্জাম নির্মান শিল্প দ্রুত উন্নত হয়েছে।

 চাং কুও বাও

 উত্তর-পূর্বাঞ্চল হচ্ছে চীনের সবচাইতে পুরনো ভারী শিল্প কেন্দ্র। সেখানকার সাজসরঞ্জাম নির্মাণ শিল্প গোটা চীনের অর্থনীতিতে লক্ষণীয় মর্যাদা দখল করতো। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পুরোনো শিল্প কেন্দ্র চীনের শিল্প গঠনকাজে বিরাট অবদান রেখেছিল। কিন্তু গত শতাব্দীর ৭০ দশকের শেষ দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব চীনের উপকূলীয় অঞ্চল উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অনেক ছাপিয়ে যায়। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন কার্যালয়ের পরিচালক চাং কুও বাও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্প অবনতি হওয়ার কারণ বিশ্লেষণের সময় বলেছেন, "অতীতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পুরোনো শিল্প কেন্দ্রের ওপর পরিকল্পনা অর্থনীতির গভীর প্রভাব পড়তো। বলা যায়, সেখানকার শিল্পের কাঠামো অপেক্ষাকৃত একক, মালিকাধীন কাঠামোও অপেক্ষাকৃত একক। অর্থাত্ রাষ্ট্রায়ত্ত অর্থনীতির অনুপাত বেশ উচু। দক্ষিণ চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের উন্মুক্ত শহরের তুলনায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্মুক্ততার মাত্রা কম।"

 পুরোনো ব্যবস্থা ও অবকাঠামো নতুন যুগের উন্নয়নের সঙ্গে খাপ খায় না। গত শতাব্দীর ৯০ দশক থেকে উত্তর-পূর্ব চীনের অনেক পুরোনো রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান মৃত্যু প্রায় অবস্থান বেঁচে আছে। এসব প্রতিষ্ঠান অভূতপর্ব বিপদ মোকাবেলা করেছে। চান সিয়াও মিং ১৯৮৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর শেনইয়াং যন্ত্রপাতি কারখানার একজন প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। দশ বছর কাজ করার পর একদিন চান সিয়াও মিং হঠাত্ এক বিস্ময়কর খবর শুনলেন, কারখানাটি দেউলিয়া হয়ে গেছে। তিনি ও কারখানার প্রায় দশ হাজার কর্মচারী একসাথে বেকার হন। তিনি বলেছেন, "স্নাতকের পর কারখানায় এসেছি। এখানে পরিশ্রম করেছি। কিন্তু এখন কারখানা নেই, আমার মন খুব খারাপ। কারণ ১৯৮৬ সাল থেকে আমার এ কারখানায় যোগদানের দশ বছর পুর্তি।"

 চান সিয়াও মিং দশ বছর ধরে পরিশ্রম করার পর কারখানা হঠাত্ দেউলিয়া হওয়ায় তাঁর আশা ও লক্ষ্যবস্তু সবই হারিয়েছে। তিনি অভূতপূর্ব শূন্যতা অনুভব করেন। খাওয়া দাওয়ার জন্য তিনি কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে কিছু ছোট খাতে কাজ করেন। এভাবে দেড় বছর সময় কেটে যায়। একদিন তিনি হঠাত্ আগেকার কারখানার নেতার টেলিফোন পান। তিনি চান সিয়াও মিংকে বলেন, পূর্বের শেনইয়াং যন্ত্রপাতি কারখানা ভেগে দেয়ার পর শেনইয়াংয়ের অন্য দুটি যন্ত্রপাতি কারখানার সঙ্গে পুনর্গঠন করেছে। তাঁরা আশা করেন, এর মাধ্যমে কঠিন অবস্থা অতিক্রম করা যাবে। চান সিয়াও মিং আনন্দচিত্তে কারখানায় ফিরে যান। কিন্তু বাস্তব অবস্থা দেখে তিনি কিছুটা হতাশ হন। কারণ কারখানায় কেবল অল্পসংখ্যক কর্মী কাজ করে মৌলিক বেতন পান। অধিকাংশ কর্মী কারখানায় ফিরে আসতে পারেন নি।

 চান সিয়াও মিং সংবাদদাতাকে বলেছেন, তখন তাঁরা উত্তর-পূর্ব চীনের অনেক পুরোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিদিন দেশের সহায়ক নীতির অপেক্ষায় থাকেন। অবশেষে ২০০২ সালে চীন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, উত্তর-পূর্ব চীনের পুরোনো শিল্প কেন্দ্রগুলো সুবিন্যস্ত ও সংস্কার করা হবে। ২০০৪ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল পুনরুদ্ধার কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তর-পূর্ব চীন উন্নয়নের পরিকল্পনা শুরু হয়।

 ব্যবস্থার পরিবর্তন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মুনাফা ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজনের অসন্তোষও কমেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কর্মীরা দেশের নির্ধারিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পুরোনো শিল্প কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা থেকে আস্থা ও শক্তি পেয়েছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন কার্যালয়ের পরিচালক চাং কুও বাও বলেছেন, "আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের মানসিক চেহারার পরিবর্তন। তা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবস্থা ও কাঠামোর নবায়ন ও উদ্ভাবনও বিরাট পরিবর্তিত হয়েছে।"

 নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০০৫ সালে উত্তর-পূর্ব চীনের তিনটি প্রদেশের জি. ডি. পির বৃদ্ধির হার ১২.৩ শতাংশ হয়েছে। এ সংখ্যা সারা দেশের গড়পরতা মাত্রার চেয়ে ২.৮ শতাংশ বেশি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি প্রদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ পুঁজি বিনিয়োগের বৃদ্ধির হার ৮৯.৫ শতাংশ। এ সংখ্যা সারা দেশের গড়পরতা মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

চীনের আন্তর্জাতিক সাজসরঞ্জাম নির্মাণ শিল্প মেলা

 সাজসরঞ্জাম নির্মাণ শিল্প হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক দ্রুত উন্নযনের প্রধান চালিকাশক্তি। চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়নের পরিকল্পনা উত্থাপনের পর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাজসরঞ্জাম নির্মাণ শিল্প অভূতপূর্ব মনোযোগ পেয়েছে এবং অবকাঠামোর নবায়ন ও সরকারের সুবিধাজনক নীতির মাধ্যমে দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। কিছু দিন আগে শেনইয়াং শহরে চীনের আন্তর্জাতিক সাজসরঞ্জাম নির্মাণ শিল্প মেলা আয়োজিত হয়। মেলায় উত্তর-পূর্ব চীনের সাজসরঞ্জাম নির্মাণের সর্বশেষ পণ্য প্রদর্শিত হয়েছে।

 শেনইয়াং শহরের ডেপুটি মেয়র সোং ছি বলেছেন, এ ধরনের মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাজসরঞ্জাম নির্মাণ শিল্পের দ্রুত টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। তিনি বলেছেন, "এ মেলা আয়োজনের মাধ্যমে চীনের প্রথম শ্রেণীর সাজসরঞ্জাম নির্মাণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো শেনইয়াংয়ে মিলিত হয়। কেবল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নয়, বরং তাদের পণ্যদ্রব্যও আসে। এভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম গড়ে তুলেছে। এর মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য সাজসরঞ্জাম নির্মাণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্যদ্রব্যের সঙ্গে আমাদের ব্যবধান খুঁজে পেয়েছি। এই ব্যবধান কমানোর জন্য আমরা ফলপ্রসূ ব্যবস্থা চালাবো। যাতে চীনের সাজসরঞ্জাম নির্মাণের মান উন্নত করা যায়।"

 জানা গেছে, ভবিষ্যতে চীন সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাজসরঞ্জাম নির্মাণের জন্য আরো সুষ্ঠু উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি করবে, আরো সুবিধাজনক নীতি দেবে। উত্তর-পূর্ব চীনের পুরোনো শিল্প কেন্দ্র উন্নয়নের পটভূমিতে ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্ব চীনের সাজসরঞ্জাম নির্মাণ সংক্রান্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরো বিস্তৃত উন্নয়নের সুযোগ পাবে।