v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-02-07 18:48:50    
বৃদ্ধদের সুখী জীবনের জন্যে চীনের ইদ্যোগ

cri
    চীনের লোকসংখ্যা ১৩০ কোটি । পৃথিবীতে যেসব দেশে লোক বৃদ্ধ হওয়ার গতি খুব বেশি , চীন সেসব দেশের অন্যতম । বর্তমানে চীনে যাদের বয়স ষাটের ওপর , তাদের সংখ্যা ১৪.৪ কোটিতে দাঁড়িয়েছে । এটি এশিয়ার বৃদ্ধ লোকদের অর্ধেক । ২০২০ সালে এ সংখ্যা আরো ১০ কোটি বাড়বে । কি করে চীনের বৃদ্ধদের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে নিশ্চয়তা বিধান করা যায় , যাতে তারা সুখ-স্বাচ্ছন্দে তাদের শেষ জীবন যাপন করতে পারেন । এটি চীনের সমাজের বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । চীন সরকারও এ সমস্যা সমাধানের জন্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।

    চীনে বৃদ্ধদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে । সংগে সংগে চীনের কর্মসংস্থানের চাপও বাড়ছে । এ দুটো উপাদান থাকায় এখন অধিক থেকে অধিকতর বৃদ্ধ একাকী জীবন যাপন করছেন । কেন না , তাদের ছেলেমেয়েরা কর্মব্যস্ততার জন্যে বাবামাদের দেখাশোনার অবসর পান না । বয়স অনেক হয়েছে বলে বৃদ্ধদের জীবনে বেশ কিছু অসুবিধা দেখা দিয়েছে । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে চীনের বহু বৃদ্ধ বার্দ্ধক্যসদনের মত সামাজিক কল্যাণমূলক সংগঠনে ভর্তি হয়ে তাদের শেষ জীবন কাটাতে শুরু করেন ।

    চুল গুছানো কি বলা হয় ?

    চুল গুছানো বলা হয় চুল গুছানো ।

    এতক্ষণ আপনি যা শুনতে পাচ্ছেন , তা হচ্ছে মধ্য চীনের চিয়াং সি প্রদেশের শাং রাও শহরের ছিয়াং ছিং বার্দ্ধক্যসদনের পরিচালক চেং সুয়ে লান একজন বৃদ্ধার কাছ থেকে চে চিয়াং প্রদেশের আঞ্চলিক ভাষা শিখছেন । এ বৃদ্ধা এক মাস আগে এ বার্দ্ধক্যসদনে ভর্তি হয়েছেন । তিনি বুড়ো বয়সের বোকামী রোগে আক্রান্ত। তার মানসিক অবস্থা মোটেই ভালো নেই । তিনি সবসময় হৈচৈ করেন । চেং সুই লান স্বতস্ফুতভাবে তার কাছ থেকে আঞ্চলিক ভাষা শিখেন এবং ক্রমেই তার আস্থা ও ভালোবাসা লাভ করেন ।

    গত ১৭ বছরে ৩ শ'রও বেশি বৃদ্ধা ছিয়াং ছিং বার্দ্ধক্যসদনে ভর্তি হয়েছেন । কিছুদিন আগে শীতকালের একটি কনকনে রাতে মুমুর্ষু অবস্থায় থেকে ৯৫ বছর বয়সের ইয়াং ই থাং তরমুজ খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । এ কথা শুনে চেং সুই লান সংগে সংগে সাইকেলে করে বিশ বাইশ কিলোমিটার পাহাড়ী পথ অতিক্রম করে জেলা নগর থেকে তরমুজ কিনে তার আশা পূরণ করেছেন । চেং সুই লান বলেছেন , বৃদ্ধদের সুখ হচ্ছে বার্দ্ধক্যসদনের কর্মীদের বিরাট আনন্দ । তিনি বলেছেন ,

    আমি আজীবন বৃদ্ধদের সেবার কাজে নিয়োজিত আছি । আমার সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা হচ্ছে , বৃদ্ধরা হাসলে আমিও হাসবো । তারা আননদিত হলে আমিও আনন্দিত হবো ।

    চীনের শহর ও গ্রামাঞ্চলে ছিয়াং ছিং বার্দ্ধক্যসদনের মত বুড়োদের কল্যাণমূলক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং বেতের সংখ্যা ১৫ লাখ । অথচ চীনের বৃদ্ধদের সংখ্যা ১৪ কোটি৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে । এ সংখ্যার তুলনায় চীনের কল্যাণমূলক সংগঠনের সংখ্যা অনেক কম । তাই চীনের অনেক বৃদ্ধ সাধারণত নিজেদের বাড়িতে বসবাস করেন । তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বামী স্ত্রী একসাথে থাকেন । যেসব বৃদ্ধ স্বামী বা স্ত্রী হারান , তারা নিসংগ জীবন যাপন করেন ।

    ৭৯ বছর বয়সের চাং ইয়ু শেং উত্তর চীনের হোপেই প্রদেশের রাজধানী শি চিয়া চুয়াং শহরে বাস করেন । দশ বারো বছর আগে তার স্বামী মারা যান । তখন থেকে তিনি সবসময় একাকী জীবন যাপন করে আসছেন । বয়স বেশি বলে তার পার কিছু অসুবিধা রয়েছে । জীবন যাপনের অনেক কাজ করা তার পক্ষে খুবই কষ্টকর । প্রতিবার সুপারমার্কেট থেকে জিনিসপত্র কেনার সময় তাকে অনেক সময় লাগতে হতো । সুপারমার্কেটে যাওয়ার পথে তাকে বেশ কয়েকবার বিশ্রাম নিতে হতো ।

    তবে গত বছর চাং ইয়ু শেং যে আবাসিক পাড়ায় বসবাস করেন , সে পাড়ায় ই ইয়াং ইউয়ান বৃদ্ধদের পরিসেবা কেন্দ্র স্থাপিত হয় । এ কেন্দ্র এ পাড়ার বৃদ্ধদের জন্যে শাকসব্জী কেনা , ওষুধ পাঠানো প্রভৃতি পরিসেবা প্রদান করতে পারে । এ কেন্দ্র স্থাপনের পর চাং ইয়ু শেনের জীবন আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছল হয়েছে । তিনি বলেছেন ,

    ই ইয়াং ইউয়ানের কল্যাণে আমার অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে । এখন আমার আর কোনো অসুবিধা নেই ।

    ই ইয়াং ইউয়ানের মত বৃদ্ধদের পরিসেবা কেন্দ্রগুলো চীনের বিভিন্ন বড় শহরে জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে । যেসব বৃদ্ধ একাকী জীবন যাপন করছেন এবং যাদের দেখাশোনার প্রয়োজন রয়েছে , তাদের বেলায় এসব কেন্দ্র প্রযোজ্য রয়েছে । বৃদ্ধদের প্রতি মাসে অল্প পরিমাণে ফি দিলে তারা জীবনের দৈনন্দিন জিনিসপত্র ও ওষুধ কেনা , নিয়মিত চিকিত্সার মত নানা ধরণের পরিসেবা ভোগ করতে পারবেন । তাছাড়া কয়েকটি শহরের পাড়াগুলো বৃদ্ধদের ভিন্ন অবস্থা অনুসারে বিভিন্ন ধরণের পরিসেবা প্রদান করে । যেমন যেসব বৃদ্ধের অপারেশন হয়েছে , তাদের আরোগ্যমূলক চিকিত্সা এবং পারিবারিক দেখাশোনার মত পরিসেবা ।

    শি চি চুয়াং ই ইয়াং ইউয়ান বৃদ্ধদের পরিসেবা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মাদাম ছাও ইয়ু খে মনে করেন যে , সরকার , সমাজ ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৃদ্ধদের কল্যাণমূলক কাজের উন্নয়নের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে । তিনি বলেছেন ,

    অধিকাংশ বৃদ্ধদের চাহিদা মেটানোই হচ্ছে বুড়োদের পরিসেবা সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য । সেই সংগঠনগুলোর প্রধান কাজ হচ্ছে বিভিন্ন বয়স ও বিভিন্ন স্তরের বৃদ্ধদের পরিসেবা প্রদান করা । সরকারী বিভাগ , ব্যক্তি বিশেষের শক্তি ও দেশপ্রেমিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সমর্থন থাকলে বুড়োদের পরিসেবামূলক সংগঠনের কাজ নিশ্চয় আরো সুন্দর হয়ে উঠবে ।

    বয়সের বৃদ্ধি চীনের বৃদ্ধদের জন্যে অনেক মানসিক সমস্যাও এনে দিয়েছে । চীনের বিভিন্ন স্থান এখন মানসিক দিক থেকে বৃদ্ধদের যত্ন নেয়ার ওপর আরো গুরুত্ব দিচ্ছে এবং তাদের নিসংগতা কাটিয়ে ওঠার জন্যে তাদের সহায়তা করছে ।

    চীনের থিয়ান চিং উন্নয়ন এলাকার বুড়োদের সাইকলিং সমিতির সদস্য লিয়ান ফোং ছুন বলেছেন , সাংস্কৃতিক ও শারীরিক তত্পরতায় অংশ নেয়ার পর তিনি আরো প্রাণবন্ত হয়েছেন । তিনি বলেছেন ,

    বুড়োদের সমিতি সবসময় আমাদের বৃদ্ধদের কথা ভাবে । তাদের উদ্যোগে আমরা পোও হাই সাগর ঘুরে ঘুরে সাইকেল চালিয়েছি । এ তত্পরতায় আমাদের বৃদ্ধদের প্রাণশক্তি প্রকাশ পেয়েছে । এসব তত্পরতার মাধ্যমে আমরা নিজের চোখে মাতৃভূমির বিভিন্ন স্থানের নতুন নতুন দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছি এবং জীবনকে আরো বেশি ভালোবেসেছি ।