জাতিসংঘের ফিলিস্তনী জনগণকে সাহায্য করা সম্পর্কে দুদিনব্যাপী সেমিনার ৫ ফেব্রুয়ারী দোহায় শুরু হয়েছে । ফিলিস্থিন ও ইস্রাইল এবং জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র, বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য, জাতিসংঘের অধীনস্থ সংস্থা , সরকারী-সরকারী সংগঠনের প্রতিনিধি সহ মোট ২০০জন প্রতিনিধি সেমিনারে অংশ নিয়েছেন । সেমিনারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনকে সাহায্য জোরদার এবং ফিলিস্তিনের অর্থনীতিপুনর্গঠনের জন্যে শর্ত সৃষ্টি করার আহবান জানানো হয়েছে ।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , বর্তমানে বিশ্বেফিলিস্তিনী লোক সংখ্যা ৮০ লাখ । এর মধ্যে অর্ধেক হল জাতিসংঘের তালিকাভূক্ত শরনার্থী ।১২.৫ লাখ লোক এখনো শরনার্থী শিবিরে বসবাস করছে ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের কর্মকর্তা আলেগ্রা পাচেকো বলেছেন , গত বছর থেকে এপর্যন্ত ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের অবস্থা দিনদিন অবনতি হচ্ছে । ফিলিস্তিনের দরিদ্র লোকসংখ্যা ৫ বছর আগের ৪০ শতাংশ থেকে বর্তমান৭৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে । এ থেকে প্রমানিত হয়েছে যে , অধিকাংশ ফিলিস্তিনী আর্থিক সাহায্যের উপর নির্ভর করে দিন কাটাচ্ছে । এখন ফিলিস্তিসীরা সামরিক দখল ও নিবিড় অবরোধের কারণে এবং চিকিত্সা ও শিক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে । ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন ।
ইস্রাইলের অর্থনৈতিক অবরোধ এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ । হামাস ২০০৬ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইস্রাইল ফিলিস্তিনকে৫০ কোটি মার্কিন ডলারের মাসিক শুল্ক দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং ফিলিস্তিনের রপ্তানী পণ্যদ্রব্যের পথ ও ফিলিস্তিনী শ্রমিকদেরইস্রাইলে আসা যাওয়ার পথ বন্ধ করে রেখেছে । ফলে ফিলিস্তিন গুরুতর অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে ।
এক সাক্ষাত্কারে জেরুজালেমের আল কুদস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য সারি নুসেইবি বলেছেন , ইস্রাইলের অবরোধ ফিলিস্তিনের অর্থনীতি ও সমাজের উপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে । গত এক বছরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনকে বিপুল পরিমাণের সাহায্য করেছে বটে , কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বায়ত্তসাশিত সরকারের আর্থিক অবস্থা ও জনগণের জীবনযাত্রার কিছু উন্নতি হয়নি ।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনী জনগণের অবঞ্চিত অধিকার কমিটির চেয়ারম্যান পল বাটজি সেমিনারে ভাষণ দিয়েছেন । তিনি ইস্রাইলকে ফিলিস্তিনী জনগণের মানবিক সংকট দূর করতে , সার্বিকভাবে ফিলিস্তিনের উপর তার অবরোধ উঠিয়ে নিতে এবং ফিলিস্তিনীসরকারের কাছে আটক শুল্ক ফেরত দিতে তাগিদ দিয়েছেন । তিনি বলেছেন , ইস্রাইল সরকারকে বুঝতে হবে যে , ফিলিস্তিনের অর্থনীতির সমস্যা হলে ফিলিস্তিনীদেরকে কাজ ও খাদ্য সরবরাহ করা কঠিন হবে এবং শান্তি বাস্তবায়িত হবে না । সীমান্ত ও পরীক্ষা কেন্দ্র উন্মুক্ত করা মানবিক পরিস্থিতি উন্নত করার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ।
২০০৬ সালের শেষ দিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস ইস্রাইলের প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্টের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করেন । ইস্রাইল আব্বাসকে ১০ কোটি মার্কিন ডলারের শুল্ক ফেরত দিতে রাজী হয়েছে । সেমিনারে অংশগ্রহনকারীরা ফিলিস্তিন ও ইস্রাইলের এই সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং দুপক্ষকে রাজনৈতিক সমাধানের পথে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে তাগিদ দিয়েছেন । মাদাম আলেগ্রা পাচেকো বলেছেন , দারিদ্র্য, যুদ্ধের ক্ষতিসাধন এবং নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের অভাবের কারণে ফিলিস্তিনে জরুরীভাবে মানবিক সাহায্য দরকার । কিন্তু দূর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মানবিক সাহায্য মূল থেকে সমস্যার সমাধান করতে পারে না । আমাদের দরকার মুল থেকে সমস্যা সমাধান করার রাজনৈতিক পরিকল্পনা । তাই আমরা আহবান জানাই যে , স্থায়ী শান্তি বাস্তবায়নের জন্যে আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায় মানবিক সাহায্যের মাধ্যমে ফিলিস্তিনী জনগণকে সমর্থন করবে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তরান্বিত করার প্রচেষ্টা চালাবে ।
|