v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-02-06 15:49:06    
মহাপ্রাচীরের সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ তুং ইয়াও হুই

cri
    ২০০৬ সালের পয়লা ডিসেম্বর থেকে "মহাপ্রাচীর রক্ষা" নিয়ম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। মহাপ্রাচীরের মাটি, পাথর নেয়া এবং ইচ্ছা করে চাষ করা ও গাড়ি চালানো এ ধরনের ৭ রকম তত্পরতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিয়ম প্রচারিত হওয়ায় তুং ইয়াও হুই খুবই আনন্দিত।

    ৫০ বছর বয়স্ক তুং ইয়াও হুই চীনের মহাপ্রাচীর পরিষদের উপ-পরিচালক। তিনি হো পেই প্রদেশের ফু নিং জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। এই ফু নিং জেলা মহাপ্রাচীরের নিচেই অবস্থিত।

    মহাপ্রাচীর হলো মানব জাতি'র একটি মহান নকশা। খৃষ্টপূর্ব ২ শতাব্দী আগে চীনের প্রথম রাজা ছিন শি হুয়াং দেশকে একীকরণ করে বিভিন্ন রাজ্যের প্রাচীর সংযুক্ত করে মহাপ্রাচীর তৈরী করতে শুরু করেন। পরের এক হাজার বছরের মধ্যে বিভিন্ন রাজবংশের সম্রাটগণ মহাপ্রাচীরের নতুন অংশ বা পুরোনো অংমের মেরামত করেন। এখন চীনের মহাপ্রাচীর পূর্ব দিকের সমুদ্র থেকে পশ্চিম দিকে মরুভূমি পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য প্রায় কয়েক হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে মিং রাজবংশের নির্মাণ অংশ সবচেয়ে বড় এবং সুরক্ষিত।

    তুং ইয়াও হুই মহাপ্রাচীরের পূর্ব দিকের ছিন হুয়াং তাও শহরের বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মী ছিলেন। তিনি পাহাড়ে উঠা পছন্দ করেন। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে তিনি হঠাত করে হেঁটে হেঁটে মহাপ্রাচীর তদন্ত করার ধারণা পোষণ করেন। তখনকার চিন্তাধারণা নিয়ে তুং ইয়াও হুই বলেছেন:

    "আমি মহাপ্রাচীরের পাশে জন্ম নিয়েছি। প্রতিদিন তাকে দেখতে পারি। এবং আমি পাহাড়ে ওঠা পছন্দ করি। তাই মহাপ্রাচীর সম্পর্কে বেশি জানতে আগ্রহী। কিন্তু সে সম্পর্কিত বই পাওয়া খুব কঠিন। আমার আগ্রহ জমে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মনে করি যে যদি মহাপ্রাচীরের উপরে প্রথম আমার পদাঙ্ক হয় তাহলে তা আমার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হবে।"

    ১৯৮৪ সালের চৌঠা মে তুং ইয়াও হুই'র জীবনে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন। এক বছরেরও বেশি সময়ের প্রস্তুতির পর তুং ইয়াও হুই আর তার দু'জন সঙ্গী মহাপ্রাচীরের তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। তার বয়স তখন মাত্র ২৮ বছর। মানসিক নিঃসঙ্গতা শরীরের ক্লান্তির চেয়ে আরো অসহনীয়। তুং ইয়াও হুই বলেছেন:

    "এই তদন্ত যাত্রীর সবচেয়ে কঠিন সমস্যা হলো সমাজ ও সংস্কৃতি এবং আত্মীয়স্বজনদের থেকে দূরে থাকা নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণা। অনেকবার আমাদের তিনজনের মানসিক অবস্থা ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়ে ছিল। তিনজনের কেউ কারো সঙ্গে কথাও বলে না।"

    তাদের অভিযান ৫০৮ দিন লেগেছে। এই সময় তারা এক'শটিরও বেশি জেলা ও শহর অতিক্রম করে মহাপ্রাচীরের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করেছে। এ থেকে তুং ইয়াও হুই মহাপ্রাচীরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

    ১৯৮৫ সালে তুং ইয়াও হুই পিকিং ইউনিভার্সিটিতে ভূবিজ্ঞান শেখা শুরু করেন। এই সময়ে তিনি মহাপ্রাচীর সম্পর্কে আরো তথ্য পেয়েছেন এবং নিজের তদন্তের ফল নিয়ে "মিং রাজবংশের মহাপ্রাচীরের তদন্ত" নামক একটি বই লিখেছেন।

১৯৯৫ সাল থেকে তুং ইয়াও হুই চীনের মহাপ্রাচীর পরিষদের মহাসচিব হয়েছেন। মহাপ্রাচীর গবেষণা ও সুরক্ষা ক্ষেত্রে তিনি কয়েকবার ফোরাম গঠন করেছেন। পাশাপাশি তিনি মহাপ্রাচীর সুরক্ষা সম্পর্কিত বিশেষ আইন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। ২০০৩ সালে "মহাপ্রাচীর রক্ষা" নিয়ম আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। এই খবর শুনে তিনি খুব খুশি। তুং ইয়াও হুই বলেছেন:

"আমরা দেখেছি যে মাঝে মাঝে মহাপ্রাচীরের ধ্বংস করার ঘটনা ঘটে , কিন্তু যথাযোগ্য শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা নেই। আমার বিশ্বাস এই নিয়ম প্রচালনের পর থেকে মহাপ্রাচীরের রক্ষার কাজ আরো ভালভাবে চলতে থাকবে।"

বর্তমানে মহাপ্রাচীরের তিন ভাগের মাত্র এক ভাগ সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। তা মানব জাতির অমূল্য ধন। আশা করি ভবিষ্যতে আরো বেশি লোক তুং ইয়াও হুই'র মতোই এই ব্যাপারে অবদান রাখবেন।