সম্প্রতি চীন সরকার ঘোষনা করেছে যে এই বছর থেকে প্রতি বছরের জুন মাসের দ্বিতীয় শনিবার চীনের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার দিবস পালিত হবে ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাহিদা মেটানোর জন্য চীনের বিভিন্ন স্থানে বুনিয়াদি প্রকল্প প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে । কিন্তু প্রকল্প শুরু হওয়ার আগে মাটির নীচে পুঁতে রাখা পুরানিদর্শনগুলো অক্ষতভাবে উদ্ধার অথবা অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করতে হবে । চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পুরানিদর্শন উদ্ধারের গতি অনেক বেড়েছে । প্রতি বছর চীনে গড়পড়তা পাঁচ শ'টি পুরানিদর্শন উদ্ধার করা হচ্ছে । পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যে প্রতি বছর এতো বেশী পুরানিদর্শন উদ্ধার করে । চীনের জাতীয় পুরানিদর্শন অধিদপ্তরের উপপ্রধান চাং পো বলেছেন , চীন সরকারের সমথর্ন ও সাহায্যে চীনের সাংস্কৃতিক পুরানিদর্শন সংরক্ষণের কাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে। তিনি বলেছেন , সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি বড় আকারের প্রকল্প চালানো হচ্ছে । যেমন তিনগিরিখাত প্রকল্প , দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনের সরবরাহ প্রকল্প আর সিংচিয়াংয়ের সিল্ক রোডের সংরক্ষণ প্রকল্প ইত্যাদি । এই সব বড় বড় প্রকল্প নির্মাণের সময় আশেপাশের পুরানিদর্শন উদ্ধারও সংরক্ষণের কাজ সুসম্পন্নকরতে হবে ।
দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে সরবরাহ প্রকল্প চীনের একটি বড় প্রকল্প , এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো দক্ষিণ চীনের প্রাচূর্যময় মিঠা পানি খাল ও প্রণালী খননের মাধ্যমে কয়েক হাজার মাইল দূরের উত্তর চীনে নিয়ে উত্তর চীনের পানির ঘাটতি মেটানো । খাল ও প্রণালীগুলোকে মধ্য চীন অতিক্রম করতে হয় ।
চীনের জাতীয় পুরানিদর্শন অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা গেছে , গত দশ-বারো বছরে চীনে প্রতি বছর ভূগর্ভ থেকে প্রায় পাঁচ শ'টি পুরানিদশর্ন উদ্ধার করা হয় । ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পুরানিদর্শন পরিষদের পঞ্চদশ সম্মেলন চীনের প্রাচীন নগর সি' আনে অনুষ্ঠিত হয়েছে । এই সম্মেলনে নতুন শতাব্দীতে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণের নতুন পথ অন্বেষনের সমস্যা আলোচনা হয়েছে এবং সি' আন ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছে । চীনের জাতীয় পুরানিদর্শন অধিদপ্তরের উপপ্রধান চাং পো মনে করেন এই সম্মেলন গোটা পৃথিবীর পুরানিদর্শন সংরক্ষণ ব্রত তরান্বিত করেছে । তিনি বলেছেন , পৃথিবীর এক শ'টিরও বেশী দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন । সম্মেলন শেষে প্রকাশিত ' সি' আন ঘোষনায় ' পুরানিদর্শনের পরিবেশ রক্ষার তাত্পর্য ও প্রয়োজনীয়তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে , তাই বিশ্ব পুরানিদর্শন সংরক্ষনে ' সি' আন ঘোষনার ' অবদান বিরাট ।
পুরানিদর্শন সংরক্ষণে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ চীনের সাম্প্রতিক বছরগুলোর পুরানিদর্শন রক্ষার কাজের একটি বৈশিষ্ট্য । বিশ্ব উত্তরাধিকার তালিকা ভুক্ত ছিং রাজবংশের রাজার সমাধিস্থলে উদ্ধার করা সৈন্য ও ঘোড়ার মূর্তি সংরক্ষণে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে । বায়ুর তারতম্যের প্রভাবে মাটির নীচে উদ্ধার করা রঙীন সৈন্য ও ঘোড়ার মূর্তির রং পরিবর্তিত হয় । চীন ও জার্মানীর বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতা করে এই সমস্যার সমাধান করেছেন ।
চীন একটি বড় দেশ । বিভিন্ন দেশের পুরানিদর্শনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে । মধ্য চীনের হোনান প্রদেশ ও পশ্চিম চীনের সান সি প্রদেশে অনেক প্রাচীন রাজপ্রাসাদ ও প্রাচীন সমাধিস্থল আছে । মধ্য চীনের সানসি প্রদেশে দেশের ৭০ শতাংশ হাজার বছর পুরনো প্রাচীন স্থাপত্য আছে । এই সব ইট ও কাঠের স্থাপত্যের সংরক্ষণ কঠিন ব্যাপার । রাজধানী পেইচিংয়ে চীনের পাঁচ ভাগের একভাগ বিশ্ব উত্তরাধিকার আছে ।
কোনো কোনো লোক বলেছেন , চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন ছাড়া চীনের পুরানিদর্শন উদ্ধার ও সংরক্ষণের কাজের এতো বিরাট অগ্রগতি হবে না । এ কথা ঠিক যে চীনের আধুনিকায়নের চাহিদা মেটানোর জন্য মাটির নীচের অনেক পুরানিদর্শন উদ্ধার করা হয়েছে । কিন্তু এটিও একটি বাস্তব সত্য যে চীনের অর্থনীতির দ্রুত প্রসার চীনের পুরানিদর্শন রক্ষা আর পুরানিদর্শন গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক নিশ্চয়তা দিয়েছে এবং চীনের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলো যুগের পরিবতর্নের প্রক্রিয়ায় অক্ষত থাকতে সাহায্য করেছে ।
|