গরুর ভাইয়ের আসল নাম চাং রুং কেন । পূর্ব চীনের চে চিয়াং প্রদেশের রাজধানী মনোরম হাংচৌ শহরের উপকন্ঠের সুয়াং সি হচ্ছে তার বাড়ি । গত কয়েক বছরে তার বাড়িতে পর্যটন শিল্পের বিকাশের সংগে সংগে গরুর ভাই চাং রুং কেন ও স্থানীয় কৃষকরা স্বচ্ছল হওয়ার একটি নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন ।
সুয়াং সি নগরের সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে বাঁশের বন ও ছোট ছোট নদী । সেখানকার বাতাস পরিষ্কার এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য সুন্দর । গরুর ভাই এমন একটি মনোরম জায়গায় বসবাস করেন । তার কাজ হলো পর্যটকদের জন্যে গরুর গাড়ি চালানো । এখন তিনি প্রতিদিন ভোরে একটি সাদা রংয়ের ছোট মোটর গাড়ি চালিয়ে কর্মস্থলে যান । পর্যটকদের গরুর গাড়ি চালিয়ে টাকা উপার্জন করে তিনি এ গাড়ি কিনেছেন । গরু লালন-পালন ও গরু শাসনের ব্যাপারে তিনি খুবই পারদর্শী । তিনি সবসময় এ নিয়ে গর্বিত । তিনি বলেছেন ,
লিউ লিউ লিউ লিউ বললে আমার গরু ডানদিকে যাবে । দ্রুত হলে আমার গরুর গাড়ি ঘোড়ার গাড়ির মত চলতে পারে । আস্তে হলে আমার গরু গাড়ি বৃদ্ধার মত চলতে পারে । আমার গরুর চামড়া খুব ভালো ।
গরুর ভাই চাং রুং কেন সুয়াং সি নগরের একজন সাধারণ কৃষক ছিলেন । ছোটবেলা থেকেই গরু লালন-পালন ও গরু শাসনের ব্যাপারে তিনি সুদক্ষ ছিলেন । তাই গ্রামবাসীরা তাকে গরুর ভাই বলে ডাকেন । সুপ্রাচীনকাল থেকে চীনের কৃষকরা গরু দিয়ে চাষবাস করতেন । তবে চীনের অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিতদ্যার উন্নতির সংগে সংগে গরুর বদলে চীনের কৃষকরা চাষবাসের ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন । এখন খুবই কম কৃষক গরু দিয়ে চাষ করেন । কিছু সময়ের জন্যে গরুর ভাই এ নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন । পরে তিনি আবিষ্কার করেছেন , অধিক থেকে অধিকতর পর্যটক শহর থেকে তাদের নগরে বেড়াতে আসছেন । তিনি ভাবতে লাগলেন , পর্যটনের ওপর নির্ভর করে তিনি নিজের জীবন স্বচ্ছল করে তুলতে পারবেন ।
কিছু দিন পর গরুর ভাইয়ের নগরে পর্যটন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় । এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর আরো বেশি পর্যটক এখানে আসতে শুরু করেছেন । সপ্তাহান্তে সুয়াং সি নগর ভ্রমণে আসা শাংহাইয়ের একজন পর্যটক চৌ ওয়েন এ নগরের প্রশংসা করে বলেছেন ,
সুয়ান সির আশেপাশে বড় বড় দালান-কোঠা নেই । সবখানেই সুন্দর প্রাকৃতিক নিসর্গ বিরাজ করছে । তাছাড়া এখানে ছোট ছোট নদীও আছে । আমার খুবই ভালো লাগছে ।
সুয়ান সির ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত ভালো । নগরটি বিখ্যাত হাং চৌ ও শাংহাই থেকে বেশি দূরে নয় । সুতরাং এখানে অবসর যাপন ও পর্যটন শিল্প উন্নয়নের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে । মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়াও সুয়াং সি একটি প্রাচীন নগরও বটে । নগরটি এক হাজার বছরের পুরনো । এসব কারণে এ নগর অনেক পর্যটককে আকর্ষণ করেছে । তবে আশেপাশে সুয়ান সির মত আরো কয়েকটি ছোট নগর আছে । সুয়াং সি নগর কিভাবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারবে ? এ নগরের পর্যটন কোম্পানির কর্মীরা এ নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছেন । এমন সময় গরুর ভাইয়ের মনে পড়েছে শাংহাই থেকে আসা পর্যটকদের কথা । তিনি বলেছেন ,
শাংহাইয়ের পর্যটকরা আমাকে বলেছেন , ছোট মোটর গাড়ি ও বিমানে করে অনেক জায়গা ভ্রমণ করেছি । তবে আমি কোনোদিন গরুর গাড়িতে বসি নি। আমি গরুর গাড়িতে বসতে চাই ।
সুয়াং সি পর্যটন কোম্পানি গরু ভাইয়ের গরুর গাড়ি ভাড়া করেছে এবং তাকেও তাদের কোম্পানিতে কাজ করার আমন্ত্রণ জানায় । তখন থেকে গরুর ভাই তার হাতের কৃষি কাজ ছেড়ে গরুর গাড়ি চালানোর কাজ শুরু করেন । এভাবে গরুর ভাইয়ের গরু নতুন কাজ পেয়েছে এবং তিনি ও তার মত কৃষকরাও নতুন কাজ পেয়েছেন । পর্যটকরা গাড়িতে করে সুয়াং সি নগরে পৌঁছার পর গরুর ভাইদের গরুর গাড়িতে বসে এখানে সেখানে বেড়াতে যান ।
বাইরে থেকে এখানে আসা পর্যটকরা গরুর ভাইয়ের গরুর গাড়িতে বসতে খুবই আগ্রহী । সুয়াং সি নগরের পর্যটন কোম্পানির ম্যানেজার জেনারেল ওয়াং পাং লিন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
কয়েক বছর ধরে এ কাজ করে গরুর ভাই অনেক টাকা উপার্জন করেছেন । কাজের সুবিধার জন্যে তিনি একটি ছোট মোটর গাড়ি কিনেছেন । তখন থেকেই তিনি সম্পূর্ণ আলাদা এক জীবন যাপন করতে শুরু করেন ।
সুয়াং সি নগরে গরুর ভাইয়ের মত আরো অনেক কৃষক পর্যটনের কাজ করে নিজেদের জীবনের রীতিনীতি পরিবর্তন করেছেন । গত কয়েক বছর পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার সংগে সংগে সুয়াং সি পর্যটন কোম্পানিরও বিরাট বিকাশ হয়েছে । অনেক কৃষক গরুর ভাইকে অনুসরণ করে পর্যটন কোম্পানির কাজে যোগ দিয়েছেন এবং তাদের আয়ও অনেক বেড়েছে । এ নগরের একজন কৃষক আনন্দের সংগে বলেছেন ,
আমাদের পর্যটন শিল্প চালু হওয়ার প্রথম দিকে খুব কম পর্যটক এখানে আসতেন । তখন শুধু ছোট ছোট মোটর গাড়ি আসতো । পরে বড় বড় পর্যটন বাসও একের পর এক এখানে আসছে । এখনকার দৃশ্য স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারতাম না ।
সুয়াং সি নগরের পর্যটন শিল্পের বিকাশের সংগে সংগে এখানকার কৃষকদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । বেশ কিছু কৃষক নিজেদের সুন্দর বাড়িও নির্মাণ করেছেন । এ নগরে একটি নতুন আবাসিক এলাকাও নির্মাণ করা হয়েছে । গরুর ভাইও একটি নতুন ফ্লাইট বাড়ি কিনেছেন । তার বাড়ির সামনে একটি বড় বাগানও রয়েছে । তিনি শহুরে লোকদের মত আধুনিক জীবন যাপন করতে শুরু করেছেন ।
|