ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ২৫ জানুয়ারী রাজধানী নয়াদিল্লীতে সফররত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বৈঠক করেছেন। দু'নেতা দু'দেশের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক ও গভীরভাবে আলোচনা করেছেন এবং অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো নিয়ে মত বিনিময় করেছেন। জনমত মনে করে, পুটিনের এবারের ভারত সফর দু'দেশের সম্পর্কের নতুন চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। ভারত ও রাশিয়া কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গভীরতর করছে।
দু'দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর প্রকাশিত যুক্ত বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ভারত ও রাশিয়া সার্বিকভাবে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করবে, বিশেষ করে হাই-টেক, টেলিযোগাযোগ, মহাশূন্য গবেষণা, জ্বালানি সম্পদ, আণবিক শক্তি, সামরিকসহ নানা ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার হবে।
জনমত লক্ষ্য করেছে , বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রের সহযোগিতা হচ্ছে ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্কের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এখন ভারতের দক্ষিণাংশের তামিলনাডু রাজ্যের খুদানখুলামে রাশিয়া ভারতের জন্য দুটি পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর স্থাপন করছে। গত বছর ভারতের পারমাণবিক বিদুত্ কেন্দ্রের জ্বালানি সম্পদ ঘাটতির বিপদ কাটিয়ে উঠার জন্য রাশিয়া ভারতকে জরুরীভাবে ৬০টন ঘনিভূত ইউরেনিয়াম জ্বালানি সম্পদ দিয়েছে।
এবার পুটিনের ভারত সফরে দু'দেশের শীর্ষ নেতাদের স্বাক্ষরিত বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি সহযোগিতা সংক্রান্ত যুক্ত বিবৃতি একটি লক্ষণীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত ও রাশিয়া সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করবে। রাশিয়া ভারতের খুদানখুলামে আরো চারটি পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর প্রতিষ্ঠা করবে। ভারত স্বীকার করেছে , ব্যবহারের সময় রাশিয়ার দেয়া পারমাণিবক রিঅ্যাক্টর ও পারমাণবিক জ্বালানি সম্পদ আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকবে। ভারত ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ভারতের সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য রাশিয়া অব্যাহতভাবে পারমাণবিক জ্বালানী সরবরাহকারী রাষ্ট্র গোষ্ঠির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে এই গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্ট নিয়ম সংশোধনের প্রচেষ্টা চালাবে।
জনমত লক্ষ্য করেছে, ভারত ও রাশিয়ার সামরিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সহযোগিতা সর্বদাই দু'দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কের প্রধান স্তম্ভের অন্যতম। ভারতীয় বাহিনীর ৭০ শতাংশ সাজসরঞ্জাম রাশিয়া থেকে পাওয়া। দীর্ঘকাল ধরে রাশিয়া ভারতের বৃহত্তম সামরিক অস্ত্রের সরবরাহকারী দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, ইস্রাইল, ফ্রান্স ভারতের অস্ত্র আমদানি বাজারে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা জোরদার করেছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা ও ঐতিহ্যিক ক্ষেত্রের সহযোগিতা সুসংবদ্ধ করার জন্য ভারত ও রাশিয়া সামরিক সহযোগিতার মান উন্নত করতে শুরু করেছে। তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের সম্পর্ক মিলিতভাবে গবেষণা, উন্নয়ন ও উত্পাদনের দিকে রূপান্তর হচ্ছে। রাশিয়া ও ভারতের শীর্ষ সম্মেলনের আগের দিন অনুষ্ঠিত ভারত ও রাশিয়ার সরকারী সারমিক সহযোগিতা কমিটির অধিবেশনে দু'পক্ষ মিলিতভাবে নতুন ধরনের বহু পদ্ধতির পরিবহন বিমান উত্পাদন করা ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গী বিমানের গবেষণা কাজ শুরু করার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, পুটিনের এবারের ভারত সফর সামরিক ক্ষেত্রে ভারতকে এক বড় উপহার দিয়েছে। এটা ভারতের সামরিক সামর্থ্য বিপুল মাত্রায় উন্নত করবে। এর প্রভাব লক্ষণীয়।
তা ছাড়া আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করাও রাশিয়া ও ভারতের শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। তাঁরা ২০১০ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিকমূল্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পৌঁছানোর লক্ষ্য উত্থাপন করেছেন।
শীর্ষ বৈঠকে দু'পক্ষ মহাশূন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সহযোগিতা আরো জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২৫ জানুয়ারী স্বাক্ষরিত ৯টি চুক্তি ও দলিলের মধ্যে ৩টি মহাশূন্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত।
|