২৫ জানুয়ারী প্রকাশিত চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী , ২০০৫ সালের তুলনায় ২০০৬ সালে চীনের অর্থনীতির ১০.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে । গত ৩ বছর ধরে চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার একটানা ১০ শতাংশেরও বেশি বজায় রয়েছে । চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক সিয়ে ফু চেং বলেছেন , গত বছর চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল ও দ্রুতভাবে বিকাশ লাভ করেছে । কিন্তু এর পাশাপাশি পণ্যদ্রব্য ভোগের অভাব এবং আন্তর্জাতিক আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতাসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদ্যমান নানা রকম সমস্যাও সমাধান করতে হয়েছে ।
মহাপরিচালক সিয়ে ফু চেং ২৫ জানুয়ারী পেইচিংয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন , ২০০৬ সালে চীনের অথনৈতিক উন্নয়নে দ্রুত বৃদ্ধি ও অল্প মুদ্রাস্ফীতির সুষ্ঠু প্রবণতা অব্যাহত ছিল ।
২০০৬ সালে চীনের জাতীয় অর্থনীতি দ্রুত প্রসারিত হয়েছে , দ্রব্য মূল্য কম বেড়েছে এবং জনসাধারণ বহু উপকার লাভ করেছে । এর পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সমন্বয়ও জোরদার হয়েছে ।
অসমাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , ২০০৫ সালের তুলনায় ২০০৬ সালে চীনের জিডিপি ১০.৭ শতাংশ বেড়ে ২০ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে , ক্রেতাদের দ্রব্য ভোগের সূচক ১.৫ শতাংশ বেড়েছে । গত বছর চীনের কৃষি , শিল্প ও পরিসেবা শিল্পও দ্রুত বিকশিত হয়েছে ।
গত কয়েক বছর ধরে পুঁজি বিনিয়োগ ও রফতানি ব্যাপকভাবে চীনের অর্থনীতির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে আসছে । ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চীনের স্থাবর পুঁজি বিনিয়োগের বৃদ্ধি হার প্রায় ৩০ শতাংশে পৌঁছে । লৌহ ও ইস্পাত , গার্মেন্টসও ধাতুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিক অতিরিক্ত পুঁজি বিনিয়োগের প্রবণতা দেখা দিয়েছে । এতে কোন কোন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ।
চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক সিয়ে ফু চেং বলেছেন , চীন যথাসময়ে সার্বিক নিয়ন্ত্রণের নীতি গ্রহণ করেছে । ফলে চীনের অর্থনীতিতে দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা বজায় রয়েছে ।
২০০৫ ও ২০০৬ সালে চীন অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে বেশ কিছু নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা নিয়েছে । বিশেষ করে ভূমি , ঋণ দেয়া , বাজারে প্রবেশের অনুমতিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নীতি চালু হওয়ার ফলে চীনের অর্থনীতির অতিরিক্ত বৃদ্ধির প্রবণতা দূর হয়ে গেছে , অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে বেড়েছে এবং অর্থনীতি বৃদ্ধির উত্কৃষ্টতাও উন্নত হয়েছে ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী , ২০০৫ সালের তুলনায় ২০০৬ সালে চীনের স্থাবর পুঁজির বিনিয়োগ ২৪ শতাংশ বেড়েছে । কিন্তু পণ্য ভোগের পরিমাণ ১৩.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ।
বাণিজ্যের ব্যাপক উদ্বৃত্ত চীনের অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধি পাবার আরেকটি কারণ । ২০০৬ সালে চীনের বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত১৭৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে । এই উদ্বৃত্ত যেমন চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভারসাম্যের জন্য প্রতিকূল হয়েছে , তেমনি চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য বহু সমস্যাও ডেকে এনেছে । গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা কাটিয়ে উঠার জন্য চীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে । যেমন চীন সরকার নিজ দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে , আংশিক রফতানি দ্রব্যের কর আদায় কমিয়েছে এব বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের উত্সাহ দিচ্ছে ।
চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক সিয়ে ফু চেং প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন , বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা দূর করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য চীন অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর প্রচেষ্টাও চালাচ্ছে ।
চীন সরকার আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অধিবাসীদের ভোগের ক্ষমতা উন্নত করা এবং অভ্যন্তরীণ ভোগের চাহিদা ত্বরান্বি করার ভিত্তিতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে । ভবিষ্যতে চীন সামাজিক বীমা ব্যবস্থা আরো পূর্ণাঙ্গ করে তুলবে , শিক্ষা ও চিকিত্সা ব্যবস্থার সংস্কার আরো ত্বরান্বিত করবে এবং বাড়িঘরের দাম স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা নেবে ।
|