v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-01-24 11:14:48    
একজন তাইওয়ানী ব্যবসায়ীর কাহিনী

cri
    আপনি হয়তো শুনেছেন যে, দক্ষিণ চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের সিয়া মেন শহরে ১.৯ বর্গকিলোমিটারের একটি সুন্দর দ্বীপ আছে । তার নাম কু লাং ইউ । কু লাং ইউ সমুদ্রের পার্ক বলে সপরিচিত । আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে কু লাং ইউয়ের তীরে দাঁড়িয়ে তাইওয়ান প্রণালীর দিকে তাকালে চীনের তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রিত চিন মেন দ্বীপ চোখে পড়বে । আমাদের আজকের অনুষ্ঠানের নায়ক তাইওয়ানের ব্যবসায়ী হুং মিং চাং এখন এ কু লাং ইউতে বসবাস করছেন । তিনি এখানে একটি ব্যক্তিগত যাদুঘর খুলেছেন । আসল পুরাকীর্তি বলে স্বঘোষিত হুং মিং চাং ফু চিয়ান প্রদেশ ও তাইওয়ান অঞ্চলের ইতিহাস বজায় রাখা এবং এ দুটো জায়গার পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করাকে নিজের কাজ ও দায়িত্ব বলে গ্রহণ করেছেন । ।

    হুং মিং চাং আগে জনসাধারণের মধ্যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান জনপ্রিয় করে তোলার কাজে নিয়োজিত ছিলেন । ৬ বছর আগে তিনি কু লাং ইউতে এসেছেন । তিনি দেখতে পান যে, কু লাং ইউর আবহাওয়া ও পরিবেশ , খাওয়া-দাওয়ার ও রীতিনীতি একেবারেই তাইওয়ানের মত । সংগে সংগে তিনি আকৃষ্ট হন । এখন তিনি তার সংরক্ষিত ৩০ হাজারেরও বেশি পুরাকীর্তি কু লাং ইউতে নিয়ে এসেছেন এবং ১ কোটিরও বেশি ইউয়ান পুঁজি বিনিয়োগ করে এখানে প্রণালীর দুই তীরের যাদুঘর খুলেছেন । যেহেতু তার পুর্ব পুরুষেরা তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের মধ্যে ঘন ঘন আসাযাওয়া করতেন , সেহেতু হুং মিং চাং সবসময় নিজেকে একটি আসল পুরাকীর্তি বলে আখ্যায়িত করে আসছেন । তিনি বলেছেন , তিনি শেষ পর্যন্ত মাতৃভূমির কোলে ফিরে আসবেন । তিনি বলেন ,

    আমার পুর্ব পুরুষেরা ফু চিয়ান প্রদেশের নান আন থেকে তাইওয়ানে গিয়েছিলেন । তখন তারা খুব গরীব ছিলেন । এখন আমি আমি আবার ফু চিয়ান প্রদেশে ফিরে এসেছি । তাই আমি পুরাকীর্তি ও সংস্কৃতির মত । আমি নিজেই একটি আসল পুরাকীর্তি মাত্র ।

    তার খোলা প্রণালীর দুই তীরের যাদুঘর হচ্ছে মূলভূভাগে তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের খোলা প্রথম যাদুঘর । তার যাদুঘরে প্রবেশ করলে ভাবগম্ভীর ইতিহাসের আমেজ আপনার সামনে ভেসে আসবে । হলুদ হয়ে যাওয়া দলিলপত্র , সুপ্রাচীনকালের বলিদানের দৃশ্য , প্রাচীন আসবাবপত্র এবং প্রাচীন চীনের মানচিত্র এ যাদুঘরে দেখানো হচ্ছে । প্রতিটি দৃশ্য ও দলিল থেকে আমরা তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের চিত্তাকর্ষক কাহিনী পড়তে পারবো । যাদুঘরে আরো দেখানো হচ্ছে প্রাচীন চীনের বহু সাইনবোর্ড। তার মধ্যে রয়েছে সম্রাটদের লেখা আদেশসম্বলিত সাইনবোর্ড । এ যাদুঘরের গাইড বলেছেন ,

    এটা হচ্ছে আমাদের যাদুঘরের সবচেয়ে মূল্যবান পুরাকীর্তি । এ সাইনবোর্ডে ১৭৭২ সালে চীনের ছিং রাজবংশের ছিয়ান লুং আমলে তাঁর জারি করা একটি আদেশ লেখা আছে । সাইনবোর্ডে লেখা আছে " ফু চিয়ানের তাইওয়ানের চাং হুয়া জেলা । এ লেখা থেকে প্রণালীর দুই তীরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে ।

    সাইনবোর্ডটি খুব পুরনো হলেও লেখাটি অত্যন্ত স্পষ্ট রয়েছে । ছিং রাজবংশের সম্রাট ছিয়ান লুং সন্তানদের শিক্ষাদানের ব্যাপারে এক শিক্ষক দম্পতির প্রশংসার জন্যে এ আদেশ লিখেছিলেন । এ দম্পতির ছেলে ছিলেন ফু চিয়ানের তাইওয়ানের চাং হুয়া জেলার কর্মকর্তা । এ সাইনবোর্ড থেকে বোঝা যায় , তাইওয়ান দ্বীপ প্রাচীনকাল থেকেই চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল ।

    এ সাইনবোর্ড পাওয়ার পর হুং মিং চাং পাইকারীভাবে তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের সম্পর্কের সংগে জড়িত পুরাকীর্তি সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন । তিনি মনে করেন এ সাইনবোর্ড সত্যিই জাতীয় পর্যায়ের মূল্যবান পুরাকীর্তি । তিনি আনন্দের সংগে বলেন ,

    ফু চিয়ান প্রদেশের ইয়ুং তিং জেলার একটি মাটির ভবন থেকে এ সাইনবোর্ডের সন্ধান পাওয়া গেছে । সাইবোর্ডটিতে স্পষ্ট ভাষায় লেখে আছে যে, তাইওয়ান চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের অধীনে রয়েছে । দু দিন আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা পেইচিং থেকে এখানে এসেছেন । তারা আমাকে বলেছেন , এটি ভালো জিনিস । তারা আমাকে এ সাইনবোর্ড সযত্নে রাখার পরমর্শ দিয়েছেন ।

    হুং মিং চাং মাঝেমধ্যে বাইরে গিয়ে জনসাধারণের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা পুরাকীর্তি সংগ্রহের চেষ্টা করেন । শুধু তাই নয় , প্রণালীর দুই তীরের সম্পর্কের সংগে জড়িত পুরাকীর্তি সংগ্রহের জন্যে তিনি তার আত্মীয়স্বজনদেরও উদ্বুদ্ধ করেছেন । তার সংগৃহীত পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে ফু চিয়ান ও তাইওয়ানের প্রাচীনকালের সরকারী দলিলপত্র , গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তলিপি ও চিত্র , পেইচিং অপেরা , বিয়ে ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত জিনিসপত্র , কৃষি হাতিয়ার , মত্স চাষের হাতিয়ার , দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত থালাবাসন , এমন কি তাইওয়ান প্রণালীর সমুদ্রের তলদেশ থেকে উদ্ধারকৃত প্রাচীনকালের পণ্য ও হাতিয়ার । আজ এসব জিনিস সবই হুং মিং চাংয়ের খোলা যাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে । এসব পুরাকীর্তি থেকে ফু চিয়ান ও তাইওয়ানের আপনজনের সম্পর্ক এবং এ দুই স্থানের সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক সূত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এসব পুরাকীর্তি দেখে এক হাজার বছর আগে এ দুটো স্থানের মধ্যে অসংখ্য জাহাজের আসাযাওয়ার ব্যস্ততম দৃশ্য আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসবে ।

    হুং মিং চাংয়ের খোলা যাদুঘরে প্রদর্শিত পুরাকীর্তি অন্যান্য যাদুঘরের পুরাকীর্তি থেকে আলাদা রয়েছে । দর্শক এখানে আসলে প্রদর্শিত পুরাকীর্তি স্পর্শ করতে পারেন এবং পুরনো আসবাবপত্রে বসতে পারেন এবং শুইতে পারেন । এমন কি অনেক পর্যটক এখানে ফি চিয়ান ও তাইওয়ানে প্রচলিত এক রকম প্রাচীন খেলাও খেলতে পারেন । তিনি বলেছেন ,

    মুদ্রা সংগ্রহকারী উ ইয়ুং ছি মনে করেন যে, যাদুঘর খোলার এ নতুন ধারণা ইতিহাস জানতে লোকজনকে অনেক সহায়তা করবে । তিনি বলেন ,

    এ রকম সমতাপূর্ণ প্রদর্শনী লোকজনের বিনিময়ের জন্যে কল্যাণকর । এসব পুরাকীর্তি দেখে পর্যটকরা এক রকম অনুভূতি লাভ করতে পারেন এবং ইতিহাসের পুনর্পর্যালোচনা করতে পারেন ।

    হুং মিং চাং আশা করছেন যে, তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল চালু হওয়ার পর সরকারের সহায়তায় তিনি তার যাদুঘরে সংরক্ষিত পুরাকীর্তিগুলো তাইওয়ানে নিয়ে দেখাবেন , যাতে আরো বেশি তাইওয়ানী চীনের ইতিহাস জানতে পারেন এবং তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের মিলনের জন্যে নিজেদের অবদান রাখতে পারেন ।