v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-01-23 19:37:56    
তাতার জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসার

cri
    উত্তর পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বসবাসকারী মুসলিম জাতিগুলোর মধ্যে তাতার জাতি একটি সবচেয়ে কম লোকসংখ্যার জাতি এবং তাও চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে কম লোকসংখ্যার জাতি । এই জাতির লোকসংখ্যা মাত্র ছ' হাজার । তারা প্রধাণতঃ সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছেন । যদিও তাতার জাতির লোকসংখ্যা কম , কিন্তু তার ভাষা ও সংস্কৃতি বরাবরই নিজ জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন । তাতার জাতির বয়স্কদের মধ্যে নিরক্ষরতা যে দেখা যায় নি , তার মূলে রয়েছে শিক্ষা বিশেষ করে ঘরোয়া শিক্ষার ওপর এই জাতির গুরুত্ব দেয়া । সংবাদদাতা সিনচিয়াংয়ের ই লি কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের ই নিন শহরে অধ্যাপনার কাজে আজীবন নিয়োজিত তাতার জাতির বৃদ্ধ ইলিয়ারের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ।

    ৭২ বছর বয়স্ক তাতার জাতির বৃদ্ধ ইলইয়ার ও তার পরিবার পরিজন ই নিন শহরের উত্তরাংশের প্রাঙ্গণসহ একটি বাড়িতে থাকেন । বড় ও পরিপাটি বৈঠকখানায় তাতার জাতির ঘরোয়া শিক্ষা প্রসঙ্গে তিনি আবেগের সঙ্গে বলেছেন , যদিও এ পর্যন্ত তাতার ভাষার জন্য বিশেষ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় নি । কিন্তু তাতার ভাষা ও সংস্কৃতি প্রচলিত রয়েছে । এই জাতি শিক্ষা বিশেষ করে ঘরোয়া শিক্ষার ওপর খুব গুরুত্ব দেয় । তাতার জাতির শিশুরা তিন চার বছর বয়সে তাতার ভাষা বলতে ও বুঝতে পারে । গৌরবের বিষয় এই যে , সিনচিয়াংয়ে তাতার ভাষা ও সংস্কৃতি বজায় রয়েছে । এই জাতির লোকেরা যে তাতার ভাষা বলতে পারেন , তার মূলে রয়েছে ঘরোয়া শিক্ষার ওপর তাদের গভীর আগ্রহ । পরিবার পারিজন ভাষা শেখার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবেশ গড়ে তুলেছে ।

    ইলইয়ার ৫০ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন । তার স্ত্রী উজবেক জাতির । তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে । সন্তানদের শেখানোর সুবিধের জন্য তার স্ত্রীও তাতার ভাষা শিখেছেন । ঘরোয়া নিয়ম অনুযায়ী বাসায় পরিবার পরিজনের সকল সদস্যদের তাতার ভাষায় কথা বলতে হবে ।

    ইলইয়ারের মেয়ে ইলফিরা সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যটন ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়ছে । ভাষা শেখার ক্ষেত্রে তার প্রতিভা আছে । সে তাতার ভাষা , হান ভাষা , উইগুর ভাষা , কাজাখ ভাষা , রাশিয়ান ভাষা ও ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে পারে এবং এখন জাপানী ভাষা শিখছে । সে বলেছে , বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর পর্যটন বিভাগের একজন গাইড হওয়ার জন্য সে এত বেশি ভাষা শিখেছে । তাতার ভাষা শেখার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সে বলেছে , তাদের সকল প্রতিবেশী উইগুর জাতির । তাদের মধ্যে কেউই তাতার ভাষা জানেন না । বাসায় তাতার ভাষা বলার জন্য বাবা মা তাকে অনুরোধ করেন । তার মনে আছে , ছোট বেলায় তাতার ভাষা না বললে বাবা মা তার সঙ্গে কোন কথা বলতেন না ।

    বৃদ্ধ সংবাদদাতাকে বলেন যে , দীর্ঘকাল ধরে তাতার জাতির লোকেরা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে । যেখানে তাতার জাতির লোকেরা থাকতেন , সেখানেই স্কুল আছে । স্কুল না থাকলে তাঁরা তা স্থাপন করার চেষ্টা করতেন । শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাতার জাতির নরনারী সমান । তাতার জাতির বিখ্যাত শিক্ষাবিদ হাবুতুলা আইনিয়ার মনে করেন যে , একজন নিরক্ষর মা যোগ্য সন্তানদের লালন পালন করতে অক্ষম । সুতরাং মাকে প্রথমে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে । ১৯১৫ সালে তাতার জাতির প্রথম নারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় । এই স্কুলে তাতার জাতি ছাড়া উইগুর জাতি ও কাজাখ জাতির মেয়েরাও পড়েছে । এটাই সিনচিয়াংয়ের সবচেয়ে আগের নারী বিদ্যালয় ।

    ই লি শহরের তাতার জাতির সংস্কৃতি গবেষণাগারের মহাসচিব হাইজাতুলা আইনিয়ার সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , চীন সরকারের সংখ্যালঘু জাতি বিষয়ক নীতি ও কম লোকসংখ্যা জাতির উন্নয়ন সহায়তা বিষয়ক নীতির সাহায্যে তাতার ভাষা উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করার জন্য প্রাক্তন ঘরোয়া শিক্ষার ভিত্তিতে তাতার ভাষা আরো ব্যাপকভাবে বিকাশ লাভ করেছে । ই লি তাতার জাতির সংস্কৃতি গবেষণাগার ২০০২ সাল থেকে ই নিন শহরে তাতার ভাষার প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে । তিনি বলেছেন , প্রশিক্ষণ কোর্স সাধারণতঃ গ্রীষ্মকালীন , শীতকালীন ও সাপ্তাহিক ছুটিতে বন্দোবস্ত করা হয় । এতে ছেলেমেয়েদের নিয়মিত লেখাপড়ার ওপর প্রভাব ফেলবে না । এই প্রশিক্ষণের কাজ চীনের সংবিধান অনুসারে নিজ নিজ জাতির ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকল জাতি সমান অধিকারের পরিচায়ক । চীনের সংখ্যালঘু জাতি বিষয়ক নীতি পালিত হওয়ার ফলে ই লি তাতার জাতির ভাষা উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করেছে এবং ব্যাপক বিকাশ লাভ করেছে ।

    জানা গেছে , বহু লোক প্রশিক্ষণ কোর্সের যোগদানে ইচ্ছুক । তাদের মধ্যে প্রবীণ ও বাচ্চা মানুষও আছে । কেউ কেউ নিজের সন্তানের সঙ্গে একই প্রশিক্ষণ কোর্সে পড়ছেন । হাইজাতুলা আইনিয়ার মনে করেন যে , বয়স্করা ও অভিভাবকরা নিজের জাতির ভাষা শেখার গুরুত্ব জানতে পারলেই কেবল ভাষা শেখার জন্য সন্তানদের পরামর্শ দিতে পারবেন ।

    ই লি তাতার জাতি জাতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে , তা যেমন সুফল অর্জন করেছে , তেমনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচ্চ মূল্যায়নও পেয়েছে । ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইলিয়ার আমন্ত্রণে রাশিয়ার তাতারস্থান সফরে গিয়েছিলেন । প্রেসিডেন্ট শামিয়েফ তাঁকে সাক্ষাত্ দান করেছেন । বৃদ্ধ যে নিখুঁত তাতার ভাষা বলতে পারেন , তাতে প্রেসিডেন্ট খুব অবাক হয়েছেন । চীনের ই লি তাতার জাতি নিজ জাতির ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করার ব্যাপারে যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে , তার জন্য তিনি বিশেষভাবে তাঁর প্রশংসা মূল্যায়ন করেছেন । তাতার প্রজাতন্ত্রে বিনাখরচে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে ছাত্রছাত্রীদের পাঠানোর জন্য তিনি চীনের তাতার জাতিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন । ২০০৫ সালে লেখাপড়ার জন্য ইলিয়ারের ছেলে ইলদারসহ প্রশিক্ষণ কোর্সের ২৮জন শিক্ষার্থীকে রাশিয়ার তাতার প্রজাতন্ত্রে পাঠানো হয়েছে ।

    তা ছাড়া বর্তমানে তাতার জাতির ঐতিহ্যিক উত্সব--- সাবেন উত্সব আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অধিক থেকে অধিকতর প্রভাব ফেলেছে । তাতার ভাষায় সাবেন মানে চাষাবাদ । তার কোন ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য নেই । প্রতি বছরের ২২ জুন এই উত্সব পালিত হয় । বিভিন্ন জাতির মধ্যেকার বন্ধুত্ব ও সংহতি বাড়ানোর জন্য সাবেন উত্সব উপলক্ষে উদযাপনী কর্মসূচীতে যোগদানের জন্য অন্যান্য জাতির প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয় ।