রাশিয়া ও জাপানের প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ ২৩ জানুয়ারী থেকে মস্কোয় দু'দিনব্যাপী প্রথম দফা "কৌশলগত সংলাপ" শুরু করেছেন। রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতা হচ্ছেন রাশিয়ার প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে দেনিসোভ। জাপানী প্রতিনিধি দলের নেতা হচ্ছেন জাপানের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াছি সোটারো। অনুমান অনুযায়ী, এবারের বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে কোরিয় উপদ্বীপের পারমাণবিক সমস্যা, ইরানের পরমাণু সমস্যা, রাশিয়া ও জাপানের ভূখন্ডের বিবাদ সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় ।
গত বছরের নভেম্বরে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার ১৮তম মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনে দু'দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এবারের কৌশলগত সংলাপ আয়োজনের ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেছেন। তখন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরোভ বলেছেন, রাশিয়া ও জাপানের কৌশলগত সংলাপের বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে যেমন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমন, মাদকদ্রব্য অপরাধের ওপর আঘাত হানাসহ কৌশলগত স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত মূল সমস্যাগুলো। উত্তরাংশের চারটি দ্বীপের ভূখন্ডের অধিকার, মত্স্য শিল্পের বিবাদসহ নানা সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে বলে রাশিয়া ও জাপানের সম্পর্ক সর্বদাই অপেক্ষাকৃত শীতল ছিল। এখন পর্যন্ত দু'দেশের মধ্যে কোন শান্তিপূর্ণ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নি। বর্তমানে সিনজো আবে সরকার জাপান ও রাশিয়ার সম্পর্কের উন্নয়নকে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ কুটনৈতিক বিষয়ের অন্যতম দিক হিসেবে নির্ধারণ করেছে। এ বছর রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পৃথক পৃথকভাবে জাপান সফর করবেন।
বহিঃবিশ্ব মনে করে, এবারের বৈঠকে দু'পক্ষের ভূখন্ড সমস্যার ওপর নতুন কোন প্রস্তাব উত্থাপন করার সম্ভাবনা রয়েছে। জাপানের তথ্য মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসো তারো প্রতিনিধি পরিষদের কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিটির অধিবেশনে প্রথমবার উত্থাপন করেছেন যে, উত্তরাংশের চারটি দ্বীপকে দুই ভাগ করবে। এতোরোফুতো দ্বীপের এক চতুর্থাংশ ও অন্য তিনটি দ্বীপ সবই জাপান অধিকার করবে। যদিও জাপান সরকার জোরালো ভাষায় উল্লেখ করেছে যে, এটা কেবল আসো তারোর ব্যক্তিগত ধারণা। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, নতুন প্রস্তাবে জাপানের ভূখন্ড এ চারটি দ্বীপের সঙ্গে জড়িত। এটা সহজেই জাপানী নাগরিকদের সমর্থন পাবে । তা জাপান সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রস্তাব হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্য দিকে, খবর বেরিয়েছে যে, রাশিয়াও সক্রিয়ভাবে এ প্রস্তাব নিয়ে বিবেচনা করছে। যদি এই তথ্য সত্য হয়, তাহলে বুঝা যায় , ভূখন্ড সমস্যায় জাপান ও রাশিয়ার অবস্থান কিছুটা নমনীয় হয়ে আসছে। রাশিয়ার প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেনিসোভের সঙ্গে গত বছরের নভেম্বর মাসে সফররত জাপানের কোমেইতো পার্টির প্রতিনিধি ওহতা আকিহিরো সাক্ষাত্ করার সময় ভূখন্ড বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। দেনিসোভ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জাপান ও রাশিয়ার ভুখন্ড সমস্যাকে হীমাগারে রাখার ইচ্ছা নেই। তিনি আশা করেন, দু'পক্ষই গ্রহণযোগ্য শর্ত খুঁজে পাবে।
জাপানের তথ্য মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এবার দু'পক্ষ জ্বালানি সম্পদ , পুঁজি বিনিয়োগসহ নানা বিষয় নিয়েও সংলাপ করবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপান সবসময় দূরপ্রাচ্যের পাইপের মাধ্যমে রাশিয়ার পেট্রোলিয়াম পাওয়ার প্রত্যাশা করে আসছে। এবার ইয়াছি সোতারোর সফরসঙ্গীর মধ্যে রয়েছেন জাপানের জ্বালানি সম্পদ ও পুঁজি বিনিয়োগ বিষয়ক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্পাদন এবং পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন সংক্রান্ত আলোচনা করবেন। জাপানের অর্থনৈতিক শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক জন কর্মকর্তা বলেছেন, এবার জাপানের জ্বালানি সম্পদ বিষয়ক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার রাশিয়া সফর দু'দেশের নিয়মিত জ্বালানি সম্পদ সহযোগিতা সংলাপ আয়োজনের ভিত্তি স্থাপন করবেন।
বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, এবারের কৌশলগত সংলাপ আবে সরকারের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত তাত্পর্য রয়েছে। জাপান ও রাশিয়ার ভূখন্ড সংক্রান্ত আলোচনা পুনরায় শুরু করা এবং জাপান ও রাশিয়ার সম্পর্ক উন্নয়ন করা হচ্ছে আবের কূটনৈতিক কৌশলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবারের রাশিয়া ও জাপানের সংলাপের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা এবং গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষিয় সমস্যা নিয়ে মত বিনিময় করার এক প্লাটফর্ম তৈরী করা।
|