মাহমুদ আহমেদিনেজাদ
ইরান টেলিভিশন কেন্দ্র ২১ জানুয়ারী ঘোষণা করেছে, ইরানের সামরিক পক্ষ দিন থেকেই তিন দিন ব্যাপী সামরিক মহড়ার আয়োজন করবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানকে শাস্তি দেয়ার ১৭৩৭ নং সিদ্ধান্ত অনুমোদনের পর এটা হচ্ছে ইরানের প্রথম সামরিক মহড়া। বহিঃ বিশ্ব মনে করে, এবারের মহড়া হচ্ছে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইরানের শক্ত জবাব।
খবরে জানা গেছে, ইরানের রাজধানী তেহরাণের দক্ষিণ-পূর্বাংশের ১০০ কিলোমিটার দূরের গামসারের নিকটে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মহড়ায় পরীক্ষামূলকভাবে "জালজাল" ও "পাজর-৫" ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হবে। এ দুই রকম ক্ষেপণাস্ত্র সবই স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। এর দূরপাল্লার আওতা ৭৫ থেকে ৪০০ কিলোমিটার । মহড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর প্রতিরক্ষা ও লড়াইয়ের দক্ষতা যাচাই করা।
সামরিক মহড়ার দিনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ পুনরায় বলেছেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত ইরানের পারমাণবিক প্রযুক্তি অন্বেষণের পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না। দশটি এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলেও ইরানের অর্থনীতি ও পারমাণবিক নীতির ওপর প্রভাব পড়বে না।
গত বছর ইরান তিন বার বড় আকারের সামরিক মহড়ার আয়োজন করে। নিজের রাষ্ট্রীয় প্রতিক্ষার শক্তি প্রদর্শনের জন্য প্রত্যেক বারই নতুন ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। প্রত্যেক বারই দেখা যায়, সামরিক মহড়া আয়োজনের সময়টি ঠিক ইরান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পর্কের উত্তেজনার সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।
সম্প্রতি ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া বিরাট চাপের শিকার হচ্ছে। কিছু দিন আগে, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে তার নতুন নীতি প্রকাশ করেছে, এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক বিন্যাস জোরদার করার বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের অভ্যান্তরীণ বিবাদের সঙ্গে ইরান জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এবং ইরাকের আরবিলে অবস্থিত ইরানের কনসুলেটের ওপর হামলা চালিয়ে কনসুলেটের পাঁচ জন ইরানীকে গ্রেফতার করেছে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিতীয় বিমানবাহী জাহাজসহ আরো অনেক প্যাট্রিয়েট ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে।
ঘন ঘন সামরিক বিন্যাসের পাশাপাশি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনডোলিত্জা রাইস সম্প্রতি মধ্য প্রাচ্য অঞ্চল সফর করেছেন। তিনি এই অঞ্চলের দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইরানকে তাদেরও বয়কট করার অনুরোধ করেছেন। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তির মাত্রা আরো জোরদার করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। মার্কিন নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস তাঁর আকস্মিক ইরাক সফরকালেও ইরানের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করেছেন। কিছু তথ্য মাধ্যমে পরবর্তী কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পরমাণু সাজসরঞ্জামের ওপর বোমাবর্ষণ করতে পারে এ খবরও বেড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নও নিরাপত্তা পরিষদের ১৭৩৭ নং সিদ্ধান্ত কার্যকর করার বিষয়টি কর্মসূচীতে আনা হয়েছে। ২২ জানুয়ারী ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ব্রাসেলসে ইরানের স্পর্শকাতর উপকরণ পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, পারমাণবিক প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থ ফ্রীজ করে রাখাসহ সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এমন পটভূমিতে ইরানের সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরান সামরিক মহড়ার দ্বারা তার পারমাণবিক পরিকল্পনা রক্ষার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন ঘটিয়েছে । এ বছর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা, প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নানা জায়গায় বহুবার ঘোষণা করেছেন যে, ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনা চলতে থাকবে। "পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি" থেকে সরে গেলেও এ বিষয়ে তারা আপোষ করবেন না।
অন্য দিকে, ইরান সরকার এর মাধ্যমে তার অভ্যন্তরীন উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছে। আহমেদিনেজাদ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইরানের পারমাণবিক সমস্যা নিরন্তরভাবে তীব্রতর হয়েছে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিরুদ্ধাচরণ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ইরানের কিছু লোক ভবিষ্যতের নিরাপত্তার ওপর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সামরিক মহড়ার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে এর মাধ্যমে জনসাধারণের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। এর আগে আহমেদিনেজাদ একাধিকবার বলেছেন, ইরানের নিজেকে রক্ষা করার সামর্থ্য আছে। সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক আলোচনা সংক্রান্ত প্রধান প্রতিনিধি লারিজানিও বলেছেন, ইরানী বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আঘাতকে ভয় করে না। তারা লড়াই গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
|