v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-01-19 15:41:19    
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া মা'র শেষ ইচ্ছা

cri
    গত বছরের মে মাসে চীনের কুয়াংসি চুয়াংজাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লিংশান জেলার থাইপিং থানার নাগরিক ফাং ফাংকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষজানিয়েছে যে , সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে এবং তার আর বেশি সময় নেই , বেশি হলে মাত্র দু'মাস সে বেঁচে থাকতে পারে । এই কথা শোনার পর মৃত্যুর হুমকীর সামনে ফাংফাং তেমন ভয় দেখাননি । কিন্তু তিনি বারবার "লিউ মেই" নামটি ডাকলেন । মৃত্যু আসার মুহুর্তে যে নাম ফাংফাং বারবার ডাকলেন সেই নাম ফাংফাংয়ের মনে কি মনোভাব জাগিয়ে তুলেছে? এই নাম ডাকার সময়ে ফাংফাং কি স্মরণ করেছেন এবং কিসের জন্যে অনুতাপ করেন ?

    ১৬ বছর আগে বন্ধুর মাধ্যমে প্রতিবেশী গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে ফাংফাংয়ের পরিচয় হয় । পরস্পরকে ভালবাসার কারণে দুজন প্রেমালাপ শুরু করেন । বেশ কয়েক মাস পর দুজনের বিয় হয় । এক বছর পর তাদের আদুরে মেয়ে লিউ মেইর জন্ম হয় । স্বামী-স্ত্রী দুজন সুখী ও আনন্দে নিমজ্জিত হন । ঠিক এই সময় অর্থাত ১৯৯৩ সালের গ্রীষ্মকালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় ফাংফাংয়ের স্বামী মারা যান । দৈনিদন জীবনের চাপে ফাংফাং কুয়াংতুং প্রদেশে মজুরী করার সিদ্ধান্ত নেন । রওয়ানার আগে ফাংফাং মেয়ে লিউ মেইকে শ্বাশুড়ির কাছে রেখে যান । কিন্তু ফাংফাং কখনো ভাবতে পারেননি যে , যখন তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন তখন জানলেন, মেয়ে আর নেই, শ্বাশুড়ি দত্তক মেয়ে হিসেবে তাকে অন্য লোককে দিয়েছেন । ফাংফাং চারিদিকে মেয়ে লিউ মেইকে খোঁজার চেষ্টা করেন । কিন্তু কোনো ফল হয়নি ।

    নিজে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং নিজে আর বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারবে না কথাটা জেনে ফাংফাং প্রত্যেক দিন নিজের বাড়ির গেটে বসে লিউ মেইর ছোটো বেলার কথা স্মরণ করেন । মেয়ে আর ফিরে আসবে না কথাটা জানলেও ফাংফাং তার অপেক্ষায় রয়েছে । ফাংফাংয়ের আচরণ তার ভাবি চাং ইউয়ানকুই সব দেখেছেন । তিনিও এক সন্তানের মা । তিনি স্পষ্টভাবে জানেন , সন্তান হারানো এক মা'র উপর কি ধরনের আঘাত । যদি ফাংফাংকে মেয়ের প্রতি অনুতাপ নিয়ে দুনিয়া ত্যাগ করতে হয় তাহলে তা হবে একটা অত্যন্ত নিষ্ঠুর ব্যাপার । তাই তিনি ফাংফাংয়ের জন্যে লিউ মেইকে খুজেঁ বের করার সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি চান , ফাংফাং তার জীবিত থাকাকালে নিজের মেয়ে লিউ মেইকে "আমাকে ক্ষমা করো" কথাটি বলবেন । এই ভাবনা নিয়ে গত বছরের ১৫ মে ছিনচৌ জেলার খনি ব্যুরোয় কাজরত চাং ইউয়ানকুই লিউ মেই-এর খেঁজে যাত্রা শুরু করেন ।

    সেই বছর যে বুড়িমার মাধ্যমে লিউ মেইকে দত্তক দেওয়া হয়েছে তিনি অনেক বছর আগেই মারা যান । চাং ইউয়ানকুইর স্মৃতিতে এই বুড়িমা বলেছিলেন , লিউ মেইকে যিনি দত্তক গ্রহণ করেছেন তিনি চৌ বা চাও নামে এক ইট কারখানার মালিক । কিন্তু তার সঠিক ঠিকানা না জানায় চাং ইউয়ানকুইর লিউ মেইকে খোঁজার কাজে অসুবিধার সম্মুখীন হন ।

    ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ফাংফাংয়ের সময় আর বেশি নয় , মাত্র এক মাস বাকি । কিন্তু লিউ মেইকে খোঁজার কাজে একটুও অগ্রগতি হয়নি । লিউ মেই সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর নেই । এখনও চাং ইউয়ানকুই লিউমেইকে খুঁজে বের করার প্রবল আশা পোষণ করেন । তিনি দেখতে চান , এই ১০ বছরে লিউ মেই অত্যন্ত সুখ শান্তিতে জীবন যাপন করছে । তিনি লিউ মেইকে তার মার অনুতাপের কথা জানাতে চান । লিউ মেইকে খোঁজার প্রক্রিয়ায় বারবার অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার পর চাং ইউয়ানকুই স্থানীয় টেলিভিশন কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । যাতে স্থানীয় নাগরিকদের সাহায্য পাওয়া যায় ।

    ছিনচৌ জেলা থেকে ইয়ুলিন জেলার চাংমু থানায় , আবার চাংমু থানা থেকে নানচিয়াং থানার চেনচুং গ্রামে দশ-বারো দিন ধরে শত শত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর চাং ইউয়ানকুই আশার আলোদেখেছেন । টেলিভিশন থেকে চাং ইউয়ানকুই কর্তৃক ফাংফাংকে সাহায্য করে তার মেয়ে খুঁজে বের করার গল্প জানার পর চাও পোলিন নামে এক দম্পতি তার এই আচরণের খুব প্রশংসা করেন । তারা ক্যান্সারে আক্রান্ত এই মা'র মেয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার অনুভূতিও বোঝেন । এই দম্পতি চাং ইউয়ানকুইকে জানান যে , ১০ বছর আগে চেনচুং গ্রামের ইট কারখানার চৌ কুয়াংমিং নামে এক শ্রমিক লিউ মেইকে দত্তক গ্রহণ করেছেন । চাও পোলিন শুধু চৌ কুয়াংমিংয়ের ঠিকানা দেন নি বরং চাং ইউয়ানকুইর পথনির্দেশক হিসেবে তার সঙ্গে চৌ কুয়াংমিংকে খোঁজার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন ।

    তিন ঘন্টার পথ অতিক্রম করার পর চাং ইউয়ানকুই চৌ কুয়াংমিংয়ের বাড়িতে এসে পৌছেন । চাং ইউয়ানকুইর অনুরোধে চৌ কুয়াংমিং রাজী হন নি । এতে চাং ইউয়ানকুই নিজের সমঝোতা প্রকাশ করেছেন । কেউই চাইবেন না যে , ১০ বছর ধরে যে মেয়েকে নিজের আপন সন্তান হিসেবে পালন করা হয় সে মেয়েকে ঝামেলাপূর্ণ অনুভূতিতে ফেলতে । ১০ বছর ধরে চৌ কুয়াংমিং ও তার স্ত্রী দুজন লিউ মেইকে নিজদের আপন মেয়ে হিসেবে লালনপালন করে আসছেন । তারা কখনো লিউ মেইকে তার আসল ইতিহাস সম্পর্কে বলেননি । তাদের ভয় যে , যদি এখন তাকে তার আপন মার কথা বলে দেন তাহলে লিউ মেই আগের মতো তাদেরকে ভালবাসবে কি ? চাং ইউয়ানকুইর বারবার অনুরোধে অবশেষে চৌ কুয়াংমিং ও তার স্ত্রী তার অনুরোধ গ্রহণ করলেন । চাং ইউয়ানকুই নিজের আবেগ ভরপুর মনটা চেপে রাখতে পারেন না এবং জ্ঞানে অজ্ঞানে চৌ কুয়াংমিং স্বামী-স্ত্রীর সামনে উবু হয়ে বসলেন । ৩০ মে বিকেলে চাং ইউয়ানকুই লিউ মেইকে ফাংফাংয়ের শয্যার সামনে নিয়ে হাজির হন । বড় হয়ে ওঠা লিউ মেইকে দেখে চাং ইউয়ানকুই ও ফাংফাং জোরে জোরে কেঁদে উঠলেন । ভালবাসা ও একটার পর একটা স্নেহের কথায় লিউ মেইর প্রতি ফাংফাংয়ের অনুতাপ প্রতিফলিত হয় । কিন্তু আপন মার অশ্রুর সামনে লিউ মেই একটা কথাও বলেনি । হয়ত আকস্মিক পরিবর্তনের সামনে এই সব গ্রহণ করতে লিউ মেইর প্রস্তুত হয়নি । এতে ফাংফাং আরও বেশি দুঃখ ও বেদনা পান । বহু বছর ধরে নিজে মা'র দায়িত্ব পালন করতে পারেননি এবং নিজের আর বেশি সময় নেই কথাটা ভেবে ফাংফাং লিউ মেইর এ কয়েক বছরের জীবনযাপন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন । এতে লিউ মেই আপন মা'র আত্ম-দোষারোপ অনুভব করতে পারে বলে ফাংফাং আশা করেন ।

    লিউ মেইর পালিকা মা লিউ মেইকে নিজের আপন মা ফাংফাংকে ক্ষমা দেয়ার তাগিদ শুরু করেন । পালিকা মার সততা ও আপন মা'র অশ্রুর জন্যে লিউ মেই ফাংফাংকে ক্ষমাকরে দিয়েছে । আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকা ফাংফাং ও লিউ মেইকে দেখে লিউ মেই'র পালিকা মা মুগ্ধ হন । যাতে গুরুতর অবস্থারত ফাংফাং শান্তভাবে চিকিত্সা করতে পারেন তার জন্যে লিউ মেই'র পালিকা মা ফাংফাংয়ের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে , তিনি অবশ্যই লিউ মেইকে মানুষ করে তুলবেন । যাতে লিউ মেই সবসময় সুখী জীবনযাপন করতে পারবে।