পেইচিংয়ের চুংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এলাকা হচ্ছে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নবায়ন ও উদ্ভাবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানকার ১৬ হাজারটিরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে মাঝারি ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নীতি ও অর্থসহ নানা ক্ষেত্রে চীন সরকারের সমর্থনে মাঝারি ও ছোট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন পরিবেশ লক্ষণীয়ভাবে উন্নতি হয়েছে।
মিঃ ইউ চৌ গত বছরের প্রথম দিকে "খুপেং" নামে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। তাঁর শিল্পপ্রতিষ্ঠান চুংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এলাকার "প্রতিষ্ঠার পরিসেবা ভবনে" আছে। সেখানে পরিবহন ব্যবস্থা সুবিধাজনক, বাণিজ্যিক পরিবেশ চমত্কার। তাঁর প্রধান ব্যবসা হচ্ছে অন্য ব্যবসায়ীদেরকে বিক্রয়ের উন্নত উপাত্তের বিশ্লেষণ দেয়া। এখন ইউ চৌর শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় খুব ভালো চলছে। তিনি মনে করেন, চুংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এলাকার সহায়ক নীতির কারণে তা হয়েছে। তিনি বলেছেন, "চুংকুয়ানছুন ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করে। আমরা এখানে প্রবেশের আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা তাদের কাছ থেকে বর্তমান প্রচলিত ও ভবিষ্যতে প্রণীতব্য সংশ্লিষ্ট নীতি জানতে পেরেছি। আমরা এ ধরনের পরিবেশ পছন্দ করি।"
উল্লেখ্য যে, "প্রতিষ্ঠার পরিসেবা ভবন" হচ্ছে বিশেষ করে মাঝারি ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিকাশের কেন্দ্র। এটা কেবল ঐতিহ্যিক অর্থের অফিস ভবন নয়। এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সার্বিক পরিসেবা করা যায়। ইউ চৌ জানিয়েছেন, "প্রতিষ্ঠার পরিসেবা ভবনে" কোম্পানি রেজিস্ট্রিকরণ, কর আদায় , হিসাব, কর্মী নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট সহায়ক সংস্থা আছে। এভাবে ব্যয় ও সময় উভয়ই সাশ্রয় হয়েছে। যাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বহুবিধ বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে মনোযোগ সহকারে ব্যবসা করতে পারে।
ইউ চৌর মতো ইয়াং সি চেনের গত বছর প্রতিষ্ঠিত সফটওয়্যার কোম্পানিও "প্রতিষ্ঠার পরিসেবা ভবনে" অবস্থিত। তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন, "প্রতিষ্ঠার পরিসেবা ভবনের" দেয়া সুবিধাজনক নীতিগুলো কোম্পানির ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য অনুকূল হবে। তিনি বলেছেন, "আমাদের কার্যালয়ের আয়তন ১২০ বর্গমিটার। সরকার প্রতি বর্গমিটার জন্য রোজ ০.৫ ইউয়ান রেনমিনপি ভরর্তুকি দেয়। আমরা বাস্তবে এই সুবিধা উপলব্ধি করি। সাধারণতঃ নব গঠিত কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা অপেক্ষাকৃত দুর্বল। ফলে সবাই এ ধরনের নীতি স্বাগত জানায়।"
ইয়াং সি চেন চুংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এলাকার পরিবেশের প্রতি সন্তোষ বোধ করেন এবং নিজ কোম্পানির উন্নয়নের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী।
সম্প্রতি পেইচিংয়ের চুংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এলাকা মাঝারি ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে। "প্রতিষ্ঠার পরিসেবা ভবন" নির্মাণ হচ্ছে এর মধ্যে একটি।
চুংকুয়ানছুন এস্টেট বণিক সমিতির মহাসচিব দাই চিয়ান বলেছেন, পরিসেবা ভবনে প্রবেশকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ধারাবাহিক সুবিধাজনক নীতি ভোগ করতে পারে। তিনি বলেছেন, "বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার ব্যয় কমানোর জন্য চুংকুয়ানছুন এ প্রতিষ্ঠার পরিসেবা ভবন নির্মাণ করেছে। আমরা প্রধানতঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অফিসের ভাড়া ভর্তুকি দেই। এর পাশাপাশি আমরা ধারাবাহিক মাধ্যম পরিসেবা করি, যেমন ব্যবসা পরিচালনা, শুল্ক আদায়, আইন বিষয়ক পরামর্শ, প্রশাসনের পরামর্শ ইত্যাদি। আমরা পরিসেবা ভবনে প্রবেশকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রোজকার কাজকর্ম নিষ্পত্তি করি।"
তা ছাড়া, চুংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এলাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংক, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগ ও মাধ্যম সংস্থা নিয়ে গঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অর্থ সংগ্রহ প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্রেডিট পর্যালোচনা, অর্থ সংগ্রহের দায়বদ্ধতা, সরকার সুদ ভর্তুকি দেয়া, মাধ্যম পরিসেবা সংস্থার সাহায্যসহ নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করা হয়। ২০০৫ সালের শেষ দিক পর্যন্ত এই অর্থ সংগ্রহ প্লাটফর্ম প্রায় ৩০০টি মাঝারি ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য মোট ২৮০ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি ঋণদানের ব্যবস্থা করেছে।
চুংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এলাকার প্রশাসনিক কমিটির উপ-পরিচালক রেন রান ছি বলেছেন, "চুংকুয়ানছুনের পুঁজি বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নের জন্য আমরা বিশটিরও বেশি ঝুঁকি পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করেছি। যদি এ ঝুঁকি পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থাগুলো চুংকুয়ানছুনের হাই-টেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পুঁজি বিনিয়োগ করে, তাহলে আমরাও শর্তহীনভাবে প্রায় ২০ শতাংশ অর্থ পুঁজি বিনিয়োগ করবো। "
জানা গেছে, মাঝারি ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান উন্নয়নের জন্য চুংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত এলাকা সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও প্রশমিত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যেমন এলাকার প্রশাসনিক কমিটি "শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাকে উত্সাহ দেয়া ও ব্যর্থ সংযম করা" চিন্তাভাবনা উত্থাপন করেছে। যেন এখানে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
ভবিষ্যতে মাঝারি ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে দেয়া সহায়ক নীতি সম্পর্কে রেন রান ছি বলেছেন, "মাঝারি ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য পরিসেবা ও উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য। ভবিষ্যতে আমরা আরো বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য আরো ভালোভাবে পরিসেবা করবো।"
জানা গেছে, সাম্প্রতিক দু'বছরে এ এলাকায় প্রতি বছর চার হাজার করে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানের উত্পাদন মূল্যের বার্ষিক বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশেরও বেশি।
|