v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-01-17 17:03:42    
চীনের পাড়াগুলোকে সম্প্রীতিময় করে তোলার উদ্যোগ

cri
    চীনের শহরগুলোর উন্নয়নের সংগে সংগে শহরগুলোর বিভিন্ন পাড়ার গঠনকাজও ক্রমশই পরিপক্ক হচ্ছে । পাড়া কমিটিগুলোর কর্মীরা নিষ্ঠার সংগে অধিবাসীদের চমত্কার পরিসেবা প্রদান করছেন । শুধু তাই নয় , বিভিন্ন পাড়ার অধিবাসীদের গণ সচেতনতাও বেড়ে চলেছে । সবাই পাড়াগুলোকে একেকটি সম্প্রীতিময় আবাসভূমি হিসেবে গড়ে তোলার জন্যেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।

    তরুণ পার্ক পাড়া হচ্ছে পূর্ব চীনের শান তুং প্রদেশের রাজধানী চি নান শহরের একটি পুরনো পাড়া । এ পাড়ার আয়তন ১ কিলোমিটারেরও কম । অথচ ৬ হাজারেরও বেশি পরিবার এখানে বাস করছে । অধিকাংশ বাসিন্দারা পুরনো বাড়িতে বসবাস করছেন । এ বাড়িগুলো বড় নয় । অনেক বাড়িতে গ্যাসের লাইন বসানো হয় নি এবং শীতকালীন হিটার ব্যবস্থাও চালু হয় নি । তবে এ অচেনা পুরনো পাড়া এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রদত্ত " নিরাপদ পাড়ার" সম্মানে ভূষিত হয়েছে । চীনের মূলভূভাগে এ পাড়া প্রথম এ সম্মান অর্জন করেছে ।

    যেসব পাড়া বাসিন্দাদের জন্যে জীবন যাপনের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে , সেসব পাড়ার প্রশংসার জন্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ সম্মান স্থাপন করেছে ।

    পুরনো পাড়ার নিরাপত্তার আশংকা দূর করার জন্যে ২০০২ সাল থেকে তরুণ পার্ক পাড়ার বাসিন্দা কমিটির ৪০জন কর্মী নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন । কয়েক বছর আগে কোনো কোনো বাসিন্দা গ্যাসের ট্যান্ক ও কয়লার চুলোকে একসাথে ছোট ছোট রান্নাঘরে রাখতেন । কয়লার চুলো জ্বলার সময় গ্যাসের ট্যান্ক থেকে গ্যাস নি:সৃত হলে গুরুতর পরিণতি হবে । অন্য বাসিন্দাদের বাড়িতেও এ রকম অবস্থা ছিল । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে বাসিন্দা কমিটির কর্মীরা সবাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আয়োজিত নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেন । তারপর তারা পরিবারে পরিবারে গিয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জ্ঞান ব্যাখ্যা করেন । বাসিন্দা কমিটির নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মী তুং ছুয়ান শি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,

    একদিকে বাসিন্দাদের মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জ্ঞান প্রচার করার মাধ্যমে তাদের সচেতন করে তোলা হবে । অন্যদিকে বাসিন্দাদের কোনো কোনো প্রশিক্ষণ কোর্সে যোগ দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে , যাতে জরুরী অবস্থায় করণীয় কি , তা জানা যায় । পাড়া কমিটি অনেক নিবারণমূলক কাজ করে থাকে ।

    প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাসিন্দাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতা অনেক বেড়েছে । নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু জ্ঞান অল্প দিনের মধ্যে কাজে লাগানো হয়েছে । তরুণ পাড়ার বুড়ো ইয়াং তিং শেং একদিন হঠাত তার রান্নাঘর থেকে একরকম দুর্গন্ধ পান । কয়েক দিন আগে পাড়া কমিটির কর্মীদের সতর্কতার কথা মনে পড়ে তিনি উপলব্ধি করেন যে, খুব সম্ভবত গ্যাসের নি:সৃণ ঘটেছে । তিনি সংগে সংগে মেরামতের জন্যে গ্যাস কোম্পানির শ্রমিকদের টেলিফোন করেন । এভাবে একটি দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে ।

    মাদাম তুং কুই লান তরুণ পার্ক পাড়ায় দশ বারো বছর ধরে বসবাস করেছেন । অতীতে অগ্নিকান্ড রোধ সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞান ছিল না । পাড়া কমিটির মাধ্যমে তিনি নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনেক জ্ঞানার্জন করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    অগ্নিকান্ড রোধ সংক্রান্ত জ্ঞান ব্যাখ্যা করার জন্যে পাড়া কমিটির কর্মীরা আমাদের মধ্যে তিন তিনবার এসেছেন । তারা আগুণ নেভানোর মহড়ারও আয়োজন করেছেন । কিভাবে আগুণ নেভানো যায় এবং অগ্নিকান্ড হলে কিভাবে পালিয়ে যাবে , সে সম্পর্কে তারা আমাদের বুঝিয়ে বলেন ।

    এ ছাড়া হঠাত ঘটিত শিশুদের ক্ষতি সাধন , পারিবারিক বলপ্রয়োগ এবং সড়ক দুর্ঘটনা নিবারণের ক্ষেত্রেও পাড়া কমিটি অনেক কাজ করেছে । যেমন পাড়াগুলোর কিন্ডারগার্ডেনে দুটো দালানের সংযোগস্থলে চমত্কারভাবে বাইরে ব্যবহৃত স্লাইডিং বোর্ড বসানো হয় । সাধারণ সময় ছোট ছেলেমেয়েরা এ স্লাইডিং বোর্ডে খেলাধুলা করে থাকে । জরুরী অবস্থায় এটি দ্রুত পলায়নের পথে পরিণত হয় । দালানের ছেলেমেয়েরা এ স্লাইডিং বোর্ড দিয়ে তাড়াতাড়ি সরে যেতে পারে ।

    তরুণ পার্ক পাড়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে । চীনের অন্যান্য শহরের পাড়া গঠনের কাজও পিছিয়ে নেই । সেসব পাড়া কমিটির কর্মীরা যেমন বাসিন্দাদের জন্যে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট , তেমনি বাসিন্দারাও নিজেদের গণ সচেতনতা বাড়িয়ে নিজেদের বাস্তব তত্পরতা দিয়ে পরিবেশ রক্ষা করা ও সুন্দর করে তোলার কাজেও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ।

    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের সিং হুয়া সিলি পাড়া এলাকায় ওয়াং চুং পিং নামক একজন বুড়ী প্রতিদিন স্বেচ্ছায় কুকুরের মল কুড়িয়ে নেন । তিনি একটানা তিন বছর ধরে এ কাজ করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    গত তিন বছর ধরে সারা বছরের প্রতিদিন আমি রাস্তায় রাস্তায় কুকুরের মল কুড়িয়ে নিই । কেন না , এখন শহরে অনেক লোক কুকুর পালন করেন । কুকুরের মল সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায় । বুড়ো বুড়ীরা বেড়াতে রাস্তায় নামলে অসাবধানে পায় কুকুরের মল লাগলে খুবই অস্বস্তিকর লাগে ।

    তার আচরণ দেখে অনেক কুকুর পালনকারী মল কুড়ানোর ব্যাপারে সচেতন হয়েছেন । কুকুরদের নিয়ে রাস্তায় বেড়ানোরসময় তারা সবসময় প্লাস্টিকের ব্যাগ ও কাগজকে সংগে নিয়ে যান , যাতে সময়মত কুকুরের মল কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারেন । এ নতুন দৃশ্য দেখে ওয়াং চুং পিং মহা খুশী ।

    পেইচিংয়ের বিভিন্ন পাড়া এলাকায় বুড়ী ওয়াং চুং পিংয়ের মত আরো অনেক বাসিন্দা আছেন ।

    পাড়া সমস্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পেই ইয়ে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , অতীতে কোনো কোনো লোক মনে করতেন যে, গণ স্থাপনাগুলো দেশের , ব্যক্তি বিশেষের সংগে এগুলোর সম্পর্ক নেই । চীনের গৃহায়ণ ব্যবস্থা সংস্কারের সংগে সংগে বাড়িঘর ব্যক্তিগত মালিকানায় পরিণত হয়েছে । বিভিন্ন পাড়াও বাসিন্দাদের অভিন্ন মালিকানায় পরিণত হয়েছে । এখন সবাই সচেতনভাবে বিভিন্ন পাড়া গড়ে তোলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন । পেই ইয়ে বলেছেন ,

    আপনি একটি নতুন বাড়ি কিনেছেন । পাড়ার সামগ্রিক পরিবেশ ভালো থাকলে আপনার বাড়িরও মূল্য থাকবে । যদি পাড়ায় পাড়ায় এক সুন্দর ও সম্প্রীতিময় পরিবেশ গড়ে তোলা হয় , তাহলে চীনেও সর্বতোভাবে এক সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলা অনেক সহজ হবে ।