মধ্যপ্রাচ্য সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট সোমবার ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সংগে ত্রৈপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন । মার্কিন কর্মকর্তারা এ পরিকল্পিত বৈঠককে গত ৬ বছরে সর্বোচ্চ লক্ষ্যসম্পন্ন একটি সংলাপ বলে আখ্যায়িত করেছেন । অথচ একই দিন প্রধানমন্ত্রী ওলমার্ট আবার ঘোষণা করেছেন , ফিলিস্তিনের যে সরকার ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে , সহিংস তত্পরতা পরিত্যাগ করবে এবং ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমস্ত চুক্তি স্বীকার করবে , ইসরাইল সেই সরকারকে মেনে নেবে । সোমবার ইসরাইল সরকার আরো কিছু জনবসতি স্থাপনের পরিকল্পনাও উত্থাপন করেছে । এসব থেকে লোকেরা সন্দেহ প্রকাশ না করে পারে না যে, শান্তি আলোচনা আবার শুরু করার ব্যাপারে ইসরাইলের কতটুকু সদিচ্ছা রয়েছে ।
সোমবার জেরুজালেমে রাইস ওলমার্টের সংগে দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠক করেছেন । বৈঠকের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন , রাইস ও ওলমার্ট আব্বাসের সংগে ত্রৈপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে রাজী হয়েছেন । বৈঠক আগামী ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে । তারা ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে সংলাপ চালাবেন । তিনি আরো বলেছেন , এ বৈঠক গত ৬ বছরে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যসম্পন্ন সংলাপ হবে । সোমবার মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের সংগে বৈঠকেও রাইস বলেছেন, আসন্ন ত্রৈপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে । এ বৈঠক ফিলিস্তিনের চূড়ান্ত অবস্থান সংক্রান্ত আলোচনার পূর্ব আভাস বলে মনে করা হচ্ছে ।
তবে ওলমার্ট সংগে সংগে এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে যে কোনো পরিকল্পিত বৈঠকের জন্যে পূর্বশর্ত উত্থাপন করেছেন । তিনি তার বিবৃতিতে বলেছেন , ইসরাইল এবারের ত্রৈপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিতে ইচ্ছুক । তবে বৈঠকে অংশ নেয়া ফিলিস্তিন সরকারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তিনটি শর্ত মেনে নিতে হবে । ফিলিস্তিন সরকার এসব শর্ত মেনে নিলেই কেবল ইসরাইলের সম্মতি পাবে । তাছাড়া বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে , মধ্যপ্রাচ্য রোডম্যাপের নির্ধারিত কয়েকটি পর্যায় যথাক্রমে কার্যকর করতে হবে ।
ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এবং ওলমার্টের পূর্বশর্ত উত্থাপন করায় বিশ্লেষকরা শান্তি আলোচনা আবার শুরু করার ব্যাপারে ইসরাইলের সদিচ্ছা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । আসন্ন ত্রৈপক্ষীয় বৈঠকে আশাপ্রদ ফল হবে কি না , সে সম্পর্কে বিশ্ববাসীর যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে ।
প্রথমত ফিলিস্তিনের পক্ষে অল্প দিনের মধ্যে ইসরাইলের দাবির সংগে সংগতিপূর্ণ সরকার গঠন করা কঠিন হবে । যদিও কোনো কোনো খবরে বলা হয়েছে যে, সম্প্রতি হামাস ও আল ফাতাহর মধ্যে মন্ত্রিসভা গঠন সংক্রান্ত আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে , তবুও এক মাসের মধ্যে নতুন সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না এবং নতুন সরকার গঠন করলেও সে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে কিনা , তাও একটি সমস্যা হবে ।
দ্বিতীয়ত যখন রাইস ওলমার্টের সংগে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন , সে একই দিনে ইসরাইল সরকার ঘোষণা করেছে , জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে তার দখলকৃত ভূমিতে ৪৪টি ইহুদী জনবসতি স্থাপন করা হবে । এতে শান্তি আলোচনা আবার শুরু করার ব্যাপারে ইসরাইলের সদিচ্ছা সম্পর্কে লোকদের সন্দেহ আরো বেড়েছে । ইসরাইলের এ পরিকল্পনা সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি রোডম্যাপ লংঘন করেছে ।
গত ডিসেম্বর মাসে জেরুজালেমে ওলমার্ট ও আব্বাসের করমর্দন ও আলিংগণের ফটো নতুন বছরের জন্যে শান্তির আশা এনে দিয়েছিল । তবে এখন বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছেন , সেবারের বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আনে নি ।
|