সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ষষ্ঠদশ জাতীয় কমিটির ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়টি চীনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রের অংশগ্রহণকারীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়েছে। সম্মেলন সূত্রে জানা গেছে, চীনা জনগণের ন্যায্যভাবে মৌলিক স্বস্থ্যরক্ষা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে চীন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ভবিষ্যতে চীন নতুন ধরণের গ্রামীণ সহযোগিতামূলক চিকিত্সা ব্যবস্থা আরো অব্যাহতভাবে পালন করবে। এই নীতির ফলে গ্রামীণ অধিবাসীদের দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান হবে।
নতুন ধরণের গ্রামীণ সহযোগিতামূলক চিকিত্সা ব্যবস্থা হলো ২০০৩ সালে চীন সরকারের গ্রামীণ অঞ্চলে একটি চিকিত্সা নিশ্চয়তা ব্যবস্থা পালন করা। তার লক্ষ্য হলো কৃষকগণ-যাতে মৌলিক স্বাস্থ্যরক্ষার সেবা ভোগ করতে পারে। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রতিবছরে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী কৃষকের জন্য ২০ ইউয়ান করে জমা দেয়। গ্রামীণ অধিবাসীরা শুধু নিজেপক্ষ থেকে ১০ ইউয়ান জমা দেয়। এই জমার অংশ নিয়ে গঠিত একটি চিকিত্সা নিশ্চয়তা তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে । অংশগ্রহণকারী কৃষকেরা রোগে আক্রান্ত হলে সহযোগিতামূলক চিকিত্সা তহবিল থেকে তাদের চিকিত্সা ব্যয় বহন করা হয়।
চীনের পূর্বাঞ্চলের চিয়াংসু প্রদেশের ছাংসুও শহরের অধিবাসী হুয়াং চিয়ানকুও এই সহযোগিতামূলক চিকিত্সা ব্যবস্থার সুযোগ পাওয়া তহবিলে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম। গতবছরের মধ্যশরত উত্সবের কিছু দিন আগে, তিনি হঠাত্ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চীনের দক্ষিণাঞ্চলের শাংহাই শহরের একটি হাসপাতালে অপরেশন করেছেন। তাঁর শুধু অপরেশনের খরচই মোট ৫০ হাজার ইউয়ান হয়েছে। এতে তাঁর পরিবারের সব টাকা মোটামোটি শেষ হয়ে গেছে। এমন সময় পরিবারের চাষ করা কাঁকড়া গৃলোকে কেউ না দেখায় সেগুলোও মারা গেছে। তাঁরা খুবই দারিদ্র্য তার সম্মুখীন হলো। কঠিন এ সময় গ্রামীণ সহযোগিতামূলক চিকিত্সা অফিসের কর্মকর্তা তাঁর চিকিত্সা তহবিল থেকে তার চিকিত্সার খরচ নিয়ে এসেছেন। এ ব্যাপারে হুয়াং চিয়ানকুও সত্যিকারভাবেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেছেন। তিনি বলেন:" সহযোগিতামূলক চিকিত্সা ব্যবস্থায় যোগদানের শুরুর দিকে আসলে আমার বাবা আমার জন্য ঐ ২০ ইউয়ান জমা দিয়েছেন। তখন আমার মনে হয়নি যে, এটি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে । আমার অপরেশনের পর, এই সহযোগিতামূলক চিকিত্সা তহবিল থেকে আমার ২০ হাজার ইউয়ান ব্যয় বহন করা হয়েছে। আমি এ টাকা দিয়ে কাঁকড়ার খাবারসহ সব কিছু কিনতে পারি। তা আবার কাঁকড়ার চাষ করার জন্যে অনেক সাহায়ক হয়েছে।
সহযোগিতামূলক চিকিত্সা তহবিলের সাহায্যে হুয়াং চিয়ানকুও আবার কাঁকড়া চাষ শুরু করেছেন । ২০০৬ সালে তিনি মোট ২০ হাজার ইউয়ান উপার্জন করেছেন। এতে তাঁর কটি কঠীন ঝামেলা মিটেছে ।
নতুন ধরণের গ্রামীণ সহযোগিতামূলক চিকিত্সা ব্যবস্থা কৃষককে সবচেয়ে মৌলিক চিকিত্সা-সেবা ভোগ করার নিশ্চয়তা দিয়েছে। বর্তমানে চীনের মোট ৪০ শতাংশেরও বেশি গ্রামীণ অঞ্চলে এ নতুন ধরণের গ্রামীণ সহযোগিতামূলক চিকিত্সা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এতে মোট ২০ কোটিরও বেশি অংশগ্রহণকারী কৃষক লাভবান হয়েছেন। চীনের পূর্বাঞ্চলের শানতুং প্রদেশের ওয়েই হাই শহরের অধিবাসী উ হাইজান এই নীতির প্রণেতাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন , এই নীতি ভালভাবে কৃষকদের কবেটর ভার কমিয়েছে। তিনি বলেছেন:" চিকিত্সা গ্রহণ করার সময় আমার চিকিত্সা খরচ ছিলো মোট ৬৪ ইউয়ান । সহযোগিতামূলক চিকিত্সা তহবিল থেকে আমার চিকিত্সাব্যয়ের ৩০ শতাংশ সব বহন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমি এ টাকা গ্রহণ করেছি। তখন আমার অনেক ভাল লেগেছে। "
নতুন ধরণের গ্রামীণ সহযোগিতামূলক চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু করার পাশাপাশি গ্রামের স্বাস্থ্য বিষয়েরও উন্নয়ন করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে চীন সরকার গ্রামের চিকিত্সা স্বাস্থ্য-সেবার মৌলিক স্থাপনায় পুঁজিবিনিয়োগ করা , গ্রামের স্বাস্থ্য কর্মীদের পশিক্ষিত করা এবং শহরের ডাক্তারদের গ্রামের অধিবাসীকে সাহায্য করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এর ফলে গ্রামীণ অঞ্চলের চিকিত্সা স্বাস্থ্যের মান অনেক উন্নত হয়েছে।
এ ছাড়া, চীন সরকার আরও কমিউনিটি বা আবাসীক এলাকায় চিকিত্সা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। শহরের নাগরিকরা হেঁটে হেঁটেই শুধু ১৫ মিনিটের মধ্যে এই চিকিত্সা কেন্দ্র যেতে পারে। নাগরিকরা সবাই বলেছে যে, এসব কমিউনিটি চিকিত্সা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, নাগরিকরা অনেক লাভবান হয়েছে। একজন নাগরিক বলেন:" এ কমিউনিটি চিকিত্সা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার আগে, আমি সবসময় হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণ করতাম । তবে হাসপাতাল আমার বাড়ী থেকে অনেক দূরে। তাই আমার জন্য খুবই বেশি অসুবিধা হতো ।"
সাধারণ রোগে আক্রান্ত হলে এবং কিছু কিছু ছোট রোগ হলে এ কমিউনিটি চিকিত্সা কেন্দ্রে চিকিত্সা করা যায়। যে সব রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ তাদের বড় হাসপাতালে যাওয়াই উচিত ।
|