চীন , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয় নেতাদের সপ্তম সম্মেলন ১৪ জানুয়ারী ফিলিপাইনের কেবুতে অনুষ্ঠিত হয় । চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাও , জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে সিন্জো ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট রো মোহিউন সম্মেলনে পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা জোরদার এবং নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং অভিন্ন স্বার্থ জড়িত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে মত বিনিময় করেছেন । সম্মেলনে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে সহযোগিতা জোরদার করা এবং আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়ন সম্পর্কে তিন দেশের রাজনৈতিক ইচ্ছার কথা বর্ণনা করা হয়েছে ।
চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাও চীন , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয় নেতাদের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছেন । তিনি বলেছেন , পূর্ব এশিয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে চীন , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাঁধে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা, আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ঐতিহাসিক কর্তব্য ও অভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে । বর্তমানে এশিয় অঞ্চল সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে । আঞ্চলিক সহযোগিতা দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে । আমাদের উন্নয়ন ও সহযোগিতার সুযোগ আকড়ে ধরতে হবে । তিনটি দেশ ও এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের অভিন্ন স্বার্থের দিকে তাকিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়নে করণীয় অবদান রাখতে হবে ।
উল্লেখ্য, চীন ,জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের সম্মেলন ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে তিনটি দেশের নেতারা দ্বিতীয় সম্মেলনে নিয়মিতভাবে এই সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন । কিন্তু জাপানের সাবেক নেতা একগুয়েভাবে ইয়াসুকুনি সমাধীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করার কারণে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়ার কুয়ালালাম্পুরে তিন দেশের নেতাদের সপ্তম সম্মেলন স্থগিত রাখা হয় । গত বছর অক্টোবর মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে সিন্জো ক্ষমতাসীন হওয়ার কিছু দিন পর চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছেন । ফলে চীন , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া তিনটি দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে এবং তিন দেশের নেতাদের সম্মেলন পুনরায় শুরু হয়েছে ।
সম্মেলনেরআগে ওয়েন চিয়াপাও উল্লেখ করেছেন , স্থগিত থাকার এক বছর পর সপ্তম সম্মেলন আবার শুরু হয়েছে । এটা তিনটি দেশ তথা পূর্ব এশিয়ার সহযোগিতা প্রক্রিয়ার পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।চীন , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা পূর্ব এশিয় সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । তিনটি দেশ মিলিতভাবে পূর্ব এশিয়ার সহযোগিতার জন্যে প্রচেষ্টা চালাবে । আসিয়ানের পরিচালনার ভূমিকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে । ১০টি আসিয়ান দেশ এবং চীন , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রধান শক্তি হিসেবে পূর্ব এশিয়ার সহযোগিতার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিতকরবে ।
এ লক্ষে ওয়েন চিয়াপাও জোর দিয়ে বলেছেন , পারস্পরিক আস্থা সহযোগিতার পূর্ব শর্ত ও ভিত্তি । তিনটি দেশের মধ্যে ভাল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট রো মো হিউন সম্মেলনে বলেছেন , উত্তর পূর্ব এশিয় অঞ্চল বিশ্বে অন্যতম তত্পর এলাকা । কিন্তু এর তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়া , চীন ও জাপানের মধ্যেকার সহযোগিতা অপেক্ষাকৃত মন্থর । সুতরাং এই তিনটিদেশের সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করতে হবে ।
এবারের সম্মেলনে তিনটি দেশের নেতারা তিন পক্ষের রাজনৈতিক আস্থা জোরদার করা সম্পর্কে মত বিনিময় করেছেন । এ বছরে চীন তিন পক্ষের উচ্চ কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের প্রথমসম্মেলনের আয়োজন করবে ।
তিন পক্ষের পারস্পরিক উপকারিতা ও সহযোগিতাকে জোরদার করার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন পক্ষ বাণিজ্য , অর্থবিনিয়োগ ও জ্বালানি শক্তিসম্পদক্ষেত্রে সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করবে । আর্থ-বাণিজ্য, তথ্যশিল্প, পরিবেশ রক্ষা, মানব শক্তি সম্পদের উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতাকে জোরদার করবে । সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ও তিন দেশের জনগণের পারস্পরিক সমঝোতা ও বন্ধুত্বকেও সম্প্রসারিত করবে ।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে সিন্জো বলেছেন ,সাম্প্রতিক বছরগুলোতেজাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সফর বিনিময় ও সহযোগিতা অভূতপূর্বভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে । ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের তিনটি দেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও জোরদারকরতে হবে ।
|