ইরাকের প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি গত রোববার দামাস্কাসে পৌছে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ায় তার সরকারী সফর শুরু করেছেন । এটি হচ্ছে গত নভেম্বর মাসে দুই দেশের মধ্যে সার্বিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর সিরিয়ায় তা
তালাবানির প্রথম সফর এবং গত ২৭ বছরে সিরিয়ায় ইরাকের কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর ।
রোববার তালাবানি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও অন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের সংগে এক বৈঠকে মিলিত হন । তালাবানি বলেছেন , ইরাক ও সিরিয়া উত্তম দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে এবং দু' দেশের জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে তেল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহংযোগিতা চালাতে সংকল্পবদ্ধ । জানা গেছে , তালাবানির সিরিয়া সফরকালে উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা ও বাণিজ্য সংক্রান্ত কতগুলো চুক্তি স্বাক্ষর করবে । রোববার ইরাকের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে , তালাবানির এবারের সিরিয়া সফরের লক্ষ্য হচ্ছে ইরাক-সিরিয়া সম্পর্কের মূল্যায়ণ ও জোরদার করা । এ সফর দু' দেশের স্বার্থের সংগে সংগতিপূর্ণ ।
জনমত অনুযায়ী যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সবেমাত্র ইরাক নিয়ে তার নতুন নীতি ঘোষণা করেছেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস এখন মধ্যপ্রাচ্যে ঝটিকা সফর করছেন , ঠিক তখনই তালাবানি সিরিয়া সফরে গেলেন । এটি ভাবার বিষয় ।
সকলের জানা আছে , গত ১০ জানুয়ারীতে বুশ ঘোষিত ইরাক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতিতে কংগ্রেসের ইরাক সমস্যা সংক্রান্ত স্টাডি গ্রুপের প্রস্তাব অনুসারে ইরাক সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সিরিয়া ও ইরানের সাহায্য প্রার্থণা করা তো দূরের কথা , ইরাকের ভেতরে মার্কিন-বিরোধী সশস্ত্র তত্পরতা সমর্থন এবং ইরাকে বিদেশী সশস্ত্র ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশ করতে উত্সাহিত করার জন্যে সিরিয়া ও ইরানের নিন্দা করা হয়েছে । বুশ বলেছেন , ইরাকের মার্কিন-বিরোধী সশস্ত্র ব্যক্তিদের প্রতি সিরিয়া ও ইরানের সমর্থন সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন করা এবং ইরাকের ভেতরের সশস্ত্র ব্যাক্তিদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র রফতানি ও তাদের প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্যে ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী পদক্ষেপ নেবে । তার অর্থ হচ্ছে এই যে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো সিরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে বৈরি নীতি গ্রহণ করতে ইরাককে সমর্থন করবে । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে তালাবানি সিরিয়ায় তার বরফ গলানো সফর শুরু করেছেন । বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, সিরিয়া ও ইরানের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সংগে সম্পর্ক পরিচালনার ক্ষেত্রে ইরাক যুক্তরাষ্ট্রের সংগে কিছু দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেছে । ইরাক মনে করে যে, তার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া ও ইরানের সংগে সম্পর্কের উন্নতি হলে ইরাকের ভেতরে সহিংস সংঘর্ষ কমানো এবং ইরাকের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণের জন্যে তা সহায়তা করবে ।
বস্তুত তালাবানির এবারের সিরিয়া সফরের একটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা , যাতে সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে সিরিয়ার সীমান্ত থেকে বিদেশী সশস্ত্র ব্যক্তিদের ইরাকে অনুপ্রবেশ রোধ করা যায় এবং ইরাকের বাইরে থেকে সশস্ত্র ব্যক্তিদের ও অস্ত্রশস্ত্র আমদানির পথ বন্ধ করা যায় । যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক যুদ্ধ শুরুর ৪ বছর পর ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে চলেছে এবং সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করছে । তার ওপর ইরাক সরকার গত বছরের শেষ দিকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি কার্যকর করেছে । এতে আশেপাশের আরব দেশগুলো দ্বিমত প্রকাশ করেছে এবং ইরাকের ভেতরের সহিংস তত্পরতা বেড়েই চলেছে । সুতরাং তালাবানির এবরের সিরিয়া সফর থেকে প্রমাণিত হচ্ছে , ইরাক তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সংগে তার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে ভেতরের সহিংস তত্পরতা বন্ধ করা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করার জন্যে আরো বেশি দেশের সমর্থন ও সাহায্য প্রার্থণা করছে । এসব পদক্ষেপ নিসন্দেহে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণের ব্যাপারে ইরাক সরকারের প্রচেষ্টাকেন সহায়তা করবে ।
|