v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-01-12 15:42:43    
দূর শিক্ষণ ব্যবস্থার সাহায্যে চীনের কৃষকরা স্বচ্ছল হয়েছে

cri
      শাওসান গ্রাম মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের একটি ছোট গ্রাম । তার আয়তন ৫ বর্গ কিলোমিটারেরও একটু কম । লোকসংখ্যা ১ হাজার ৬ শোরও বেশি । আগে এখানকার কৃষকরা বংশপরম্পরায় ঐতিহ্যিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করতেন । কিন্তু উত্পাদনের পরিমাণ বেশি ছিল না । গত দু' বছর আগে তাঁরা নতুন প্রকার শংকর ধান চাষ শুরু করার ফলে বার্ষিক উত্পাদন পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে । এর আগে তারা কখনো এই ধরনের শংকর ধান চাষ করেন নি । তাহলে তারা কেমন করে এই চাষের প্রযুক্তি দ্রুত আয়ত্ত করেছেন ? কৃষক লি তিন হোং সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন যে , শংকর ধান চাষের প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে হলে বেশ নৈপুণ্য প্রয়োজন ।

    শংকর ধান চাষের সময় কোন অসুবিধা বা সমস্যা থাকলে ইন্টারনেটে কৃষি প্রযুক্তিবিদদের কাছ থেকে উপদেশ ও প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তা কাটিয়ে উঠা যাবে। সাধারণ ধানের চেয়ে প্রতি একর জমিতে শংকর ধানের উত্পাদন পরিমাণ ১ হাজার ৮ শো থেকে ২ হাজার ৪ শো কিলোগ্রাম বেশী হয়ে থাকে ।

    এই গ্রামবাসী যে ইন্টারনেটের কথা বলেছেন , তা গ্রামে স্থাপিত দূর শিক্ষণ নেটের পরিসেবা কেন্দ্র । এই ওয়েবসাইটে টেলিভিশন , কম্পিউটার , উপগ্রহের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাসহ বিবিধ আধুনিক টেলি-যোগাযোগ সরঞ্জামের ব্যবস্থা রয়েছে । এই ধরনের হাইটেক পদ্ধতিতে উপগ্রহ যোগে ব্রড্ ব্যান্ড নেটওয়ার্ক , কম্পিউটারের ইন্টারনেট , ক্যাবল্ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবং বেতার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে কৃষকদের দ্রুত যোগাযোগ করা যায় । এতে কৃষকরা কৃষি প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন । বর্তমানে শাওসান গ্রামের কৃষকরা সপ্তাহে তিনবার গ্রামের দূর শিক্ষণ বিষয়ক ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন ।

    তা ছাড়া দূর শিক্ষণ ওয়েবসাইটে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্মীর ব্যবস্থা করা হয় । শাওসান গ্রামের দূর শিক্ষণ ওয়েবসাইটের কর্মী হু ইউন ওয়ে জানিয়েছেন , তাঁর দায়িত্ব হল দূর শিক্ষণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্নোত্তরের্ব্যবসস্থার দ্বারা যথাসময়ে গ্রামবাসীদের প্রশ্নগুলোর উত্তর পৌঁছে দেয়া ।

    সাধারণতঃ বিশেষজ্ঞ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক মিনিটের মধ্যে গ্রামবাসীদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায় ।

    শাওসান গ্রামের মতো চীনে দূর শিক্ষণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্বচ্ছল হওয়া আরো অনেক গ্রাম রয়েছে । পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , দূর শিক্ষণ নেটওয়ার্ক চীনের হোনান , চেচিয়াংসহ ১২টি কৃষি প্রধান বড় প্রদেশে চালু রয়েছে । এতে হাজার হাজার কৃষক উপকৃত হয়েছেন । দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশে১৭ হাজারেরও বেশি দূর শিক্ষণ ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এই সব শিক্ষা ওয়েবসাইট ৭০ শতাংশেরও বেশি গ্রামে ছড়িয়ে আছে ।

    পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের কৃষক ছেন ইউন খাং ও তাঁর পরিবার পরিজন বরাবরই আংগুর চাষ করে থাকেন । গত কয়েক বছর তারা কীটনাশক সমস্যার শিকার হয়েছেন । তিনি বলেছেন , গ্রামে দূর শিক্ষণ নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার পর তিনি কীটনাশক পদ্ধতি শিখে নিয়েছেন ।

    এখন প্রতি একর জমিতে আংগুরের উত্পাদন পরিমাণ আগের তুলনায় আড়াই শো কিলোগ্রাম বেড়ে ১ হাজার সাড়ে ৭ শো কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে । আংগুরের গুণগত মানও অনেক উন্নত হয়েছে ।

    দূর শিক্ষণ নেটওয়ার্ক চালু হওয়ায় কৃষকরা সরাসরি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন । অন্য দিকে প্রফেসর ইউয়ান লুং পিনসহ বহু বিখ্যাত বিশেষজ্ঞও দূর শিক্ষণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তরের পরিসেবা দিতে পারেন ।

    আদর্শ খামারে প্রতি একর জমিতে উন্নত মানের শংকর ধানের উত্পাদনের পরিমাণ ৮ শো কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে । ধানের গুণগত মানও অনেক উন্নত হয়েছে ।

    বহু কৃষি গবেষণাগার ও বিশেষজ্ঞ দূর শিক্ষণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শাক-সব্জি, ফলমূল , পশু পালন , জলজ দ্রব্য চাষ , কৃষি দ্রব্যের প্রক্রিয়াকরণ ও কীটনাশকের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে । কৃষকরা যার যার চাহিদা অনুসারে অনুষ্ঠান দেখতে পারেন ।

    দূর শিক্ষণ নেটওয়ার্ক চালু হওয়ায় চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের জন্য নানা রকম প্রযুক্তি ও তথ্য বয়ে এনেছে । অধিক থেকে অধিকতর কৃষক বাজার অন্বেষণের পদ্ধতিও শিখেছেন । মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের হুয়া ছাও গ্রামের তুলো সমিতির পরিচালক মা চিন আবেগের সঙ্গে বলেছেন ,

    গ্রামীণ আধুনিক দূর শিক্ষণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষকরা যথাসময় বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিশ্বের বিক্রি বিষয়ক তথ্য অর্জন করেছেন । প্রথমে তাদের সমিতিতে শুধু ৫০টি কৃষক পরিবার ও ছ' একর জমি ছিল । এখন কৃষি জমির আয়তন ৩৩০ একর এবং কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে ।

    বাইরের সঙ্গে তথ্য বিনিময়ে যেমন কৃষকরা বাইরের তথ্য অর্জন করতে পেরেছেন , তেমনি বাইরের লোকেরাও এই গ্রাম সম্পর্কে বেশ জানতে পেরেছেন ।

    দীর্ঘকাল ধরে চীনের কৃষকরা শুধু নিজের পারিবারিক শক্তির ওপর নির্ভর করে কৃষি কাজ করতেন । তখন বেশ কিছু আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা যেতো না । এখন দূর শিক্ষণ নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি অধিক থেকে অধিকতর কৃষক উত্পাদন ও বিক্রির ব্যাপারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করছেন ।