v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-01-12 14:50:06    
স্কুলচ্যুত মেয়েদের প্রশিক্ষণ প্রকল্প

cri

 

    মেয়েরা আগামীকালের মা । কিন্তু চীনের কিছু দরিদ্র্য অঞ্চলের অনেক মেয়ে দারিদ্র্যের কারণে শিশু বয়সে স্কুলেভর্তির সুযোগ হারায় । এখন বয়সের কারণে তারা প্রাথমিকস্কুলেভর্তি হতে পারছে না । কিন্তু তাদের ভাগ্য ভাল । চীন ও বৃটেনের যৌথ সহযোগিতামূলক প্রকল্পের সাহায্যে তারা পুনরায় আস্থা ফিরে পেয়েছে এবং দুই হাতের মাধ্যমে নিজদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে ।

    চার বছর আগে চীন ও বৃটেনের যৌথ সহযোগিতায় "বেশি বয়সী মেয়েদের প্রকৌশলগত প্রশিক্ষণ দেয়া ও সামর্থ্য গড়ে তোলা সম্পর্কিত প্রকল্প" চালু হয় । এই প্রকল্প চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বৃটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দপ্তরের স্বাক্ষরিত এবং নিখিল চীনের নারী ফোডারেশনের দ্বারা কার্যকরী করা হয় । নিখিল চীনের নারী ফেডারেশনের সম্পাদক মাদাম চাং সিপিং বলেছেন, এই প্রকল্প ইতোমধ্যে বিনাখরচে পশ্চিম চীনের সিছুয়ান , কানসু ও ইয়ুনান প্রদেশের দশ হাজার বেশি বয়সী মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে । তিনি বলেছেন , এ পর্যন্ত এই প্রকল্প বিনাখরচে ১২ হাজার ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুলচ্যুত মেয়েদের ব্যবহারিক চীনা ভাষা ও অংক,জীবনযাপন ও উত্পাদনের দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিয়েছে । যাতে তাদের ধারণা ও ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায় এবং তাদের পারবারিক অবস্থা উন্নত হয় ।

    এখন যে মেয়েরা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের মধ্যে কেউকেউ বাইরে কাজ করতে যায় । কেউকেউ স্থানীয় এলাকায় কাজ পায় । আর কেউকেউ বাড়িতে জমি চাষ করে বা গৃহপালিত হাঁসমরগী বা পশু লালনপালন করে । তাদের প্রচেষ্টায় পরিবারের আয় বেড়ে গেছে । তাছাড়া তারা বাবা-মাকে নকল বীজ ও রাসায়নিক সারের পার্থক্য শিখিয়েছে ।

    যারা প্রশিক্ষণ থেকে উপকার লাভ করেছে পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের ১৬ বছর বয়সী চাং হুই তাদের মধ্যে একজন । চাং হুই দেখতে পাতলা । বড় বড় চোখের চাং হুই এক বুদ্ধিমতি মেয়ে । প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের থানার নারী ফেডারেশনের পরিচালক খরগোস পালনকারী মাদাম ছেন চুফাংয়ের কাছ থেকে আমার জন্যে পাঁচটা খরগোস এনে দিয়েছেন । আমি মনে করি, এই ৫টি খরগোস পালন করার সামর্থ্য আমার আছে । আমি উপার্জন করে বাবার কষ্ট ভাগাভাগি করতে পারছি ।

    চাং হুইর কথা বলার ভঙ্গি দেখে কেউ ভাবতে পারে না যে , তার পরিবারে এত দুর্ভাগ্য ছিল । ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় তার মা দু'বছর আগে মারা যান । বাড়িতে শুধু বাবা, সে আর ছোটো বোন আছে । গত বছর অনেক ঋণী হওয়ায় চাং হুই বাধ্য হয়ে বাবার স্কুল চ্যুত হওয়ার অনুরোধ গ্রহন করে ।

    চলতি বছরের জুলাই মাসে নারী ফেডারেশনের সাহায্যে চাং হুই "চীন ও বৃটেনের যৌথ প্রশিক্ষণ-কোর্সে" অংশ নিয়েছে । ৪০ দিন প্রশিক্ষণ নেয়ার পর চাং হুই নিজের শেখা নেয়া বিদ্যা দিয়ে খরগোস পালনের কাজ শুরু করে । তার খরগোসের সংখ্যা এখন ৫ থেকে ৮০তে দাঁড়িয়েছে । খরগোস বিক্রি করে ভাল উপার্জন করায় চাং হুই ও তার বাবা অত্যন্ত খুশি ।

    প্রকল্পটি মূল্যায়ন করার সময় মেয়েদের অগ্রগতি সম্পর্কে বৃটিশ কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ টনি ভিটাস বলেছেন , বলাবাহুল্য , প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তোমাদের দক্ষতার মান উন্নত হয়েছে । যোগাযোগের সামর্থ্য জোরদার হয়েছে । তোমরা আগের চাইতে এখন অনেক ভদ্র হয়েছ এবং ভবিষ্যতের জন্যে আশাবাদী । প্রশিক্ষণ শেষে তোমরা ফিরে গিয়ে নিজেদের পরিবর্তন বাড়ির সবাইকে দেখাবে, তাদের উপর প্রভাব ফেলবে।

    প্রশিক্ষণের কল্যাণে মেয়েদের অগ্রগতি হয় । প্রশিক্ষণের ফলাফল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিক্ষাদানের পদ্ধতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত । মেয়েদের সুবিধার জন্যে প্রশিক্ষণ শুধু ক্লাসে নয় ফল বাগান, বিউটি পার্লার , হাসপাতাল সহ বাস্তব জীবনযাপনের জায়গায়ও নেয়া হয় । সাহস জোরদার করাকেও প্রশিক্ষণের এক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । এ সম্পর্কে চাং হুই বলেছে, আমি সুপার মার্কেটে জিনিস কিনতে শিখেছি । শিক্ষকরা আমাদের বলেছেন , যদি কেউ নিজের নৈপুন্যতা দেখাতে চায় তাহলে মঞ্চে অভিনয় করতে পারে । যাতে নিজের সাহস জোরদার করা যায় ।আমি গান জানি , তাই আমি সবাইর সামনে গান গেয়েছি ।

    এ ধরণের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি যেমন মেয়েদের সমাদর পেয়েছে তেমনি জ্ঞানে অজ্ঞানে তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে । প্রশিক্ষণ নেয়ার আগে চাং হুই প্রত্যেক দিন বাড়ির কাজ করত, ছোটো বোনকে দেখাশোনা করত । নিজের কোনো আশা ছিল না । কিন্তু এখন চাং হুইর স্বপ্ন ও আশা আছে । সে ভালভাবে খরগোস পালন করতে চায় । ঋণ পরিশোধ করে এক নতুন বাড়ি নির্মাণ করবে । সে দারিদ্র্য পিড়ীত অঞ্চলের স্কুলচ্যুত মেয়েদের সাহায্য করবে । যাতে তারা নিজেদের প্রতি আস্থাহীনতা থেকে আত্মবিশ্বাসী হতে পারে ।

    প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী মেয়েদের আত্মবিশ্বাস জোরদার করা প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আরেকটা সাফল্য । এ সম্পর্কে কানসু প্রদেশের শিক্ষক সিয়ে ওয়েইছিয়াং বলেছেন, প্রথম ক্লাসের সময় আমি এক মেয়ের নাম জিজ্ঞেস করলে সে ভয়ে কেঁদে উঠল । কিন্তু এখন এ মেয়ে নিজে বিউটি পার্লার খোলার কথা ভাবছে।

    মেয়েটির নাম চাং ফাংফাং, বয়স ১৮ বছর ।চাং হুইর মতো দারিদ্যের কারণে প্রাথমিক স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর সে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি । মা'র স্বাস্থ্য ভাল না ,বাবা জমি চাষ করে গোটা পরিবারের সংসার চালাতেন । সে শুধু স্বপ্নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দৃশ্য দেখতে পারত । তাই সে নিজেকে বন্ধ করে কোনো লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করত না , অন্য লোকের সামনে কথা বলা তো দূরের কথা ।এক দিন বাজার করার সময় সে প্রকল্পটির কথা জেনেছে এবং প্রশিক্ষণে নাম দিয়েছে । প্রশিক্ষণ নেয়ার পর সে এখন পূর্ব চীনের নানচিং শহরের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করছে । নিজের পরিবর্তন সম্পর্কে সে বলেছে , বলা যায় , প্রশিক্ষণ নেয়ার আগে আমার কোনো স্বপ্ন ছিল না । স্বপ্ন দেখার সাহসও আমার ছিল না । কিন্তু এখন আমার নিজের স্বপ্ন আছে । আমি এক বিউটি পার্লারের মালিক হতে চাই । কারণ আমি চিরকালই মজুরী খাটতে চাই না । আমি নিজের দুই হাত দিয়ে নিজের নীল আকাশ সৃষ্টি করতে চাই ।