ইরাকের তেল সংক্রান্ত একটি খসড়া আইন নিয়ে আলোচনার জন্য কয়েক দিনের মধ্যেই ইরাকের কেবিন্যাট ও কংগ্রেসে দাখিল করা হবে। মার্কিন সরকার এই খসড়া আইন প্রণয়নে অংশ নিয়েছে। এ খসড়া আইন অনুযায়ী, পাশ্চাত্য দেশগুলোর তেল কোম্পানিগুলো ইরাকে ব্যাপকভাবে তেল অনুসন্ধানের অনুমোদন পাবে। সুতরাং, বি পি, সেল, একসন, ছেভরন সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের বড় বড় কোম্পানিগুলো ইরাকে ৩০ বছরের জন্য অধোশিত তেল অনুসন্ধানের চুক্তি অর্জন করেছে। এরফলে তেলের জন্যে ইরাক যুদ্ধ বাঁধায় ইংগ-মার্কিনের আসল রূপ ফুটে উঠেছে।
ব্রিটের দি ইনডিপেন্টেট পত্রিকার এক খবরে বলা হয়েছে, বেয়রিনপয়েন্ট কোম্পানির সাহায্যে এবারের এই খসড়া আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। মার্কিন সরকারের সঙ্গে এই কোম্পানির ব্যবসা রয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে এই খসড়া আইন অনুমোদন নেয়ার জন্য মার্কিন সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান তেল কোম্পানিগুলোর কাছে দাখিল করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই খসড়া আইন প্রণয়নের প্রণালী থেকেই ইরাক যুদ্ধ বাঁধায় ইংগ-মার্কিনের আসল উদ্দেশ্য পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়েছে। তাদের আসল উদ্দেশ্যই ছিল তেল ।
যদিও ইরাক যুদ্ধ বাঁধার সময় ইংগ-মার্কিন সরকার তেলের জন্য যুদ্ধ বাঁধানোর কথা অস্বীকার করেছে, তবে ইরাকে প্রবেশের দিন থেকেই দু'দেশের সৈন্যদেরকে ইরাকের তেলের ব্যবস্থাগুলো রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়। সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রামস ফিল্ড ইরাকী লোককে সরকারের গণ সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার সহ্য করেছেন ,তখন কেবলমাত্র ইরাকের তেল মন্ত্রণালয় সৈন্যদের প্রহরাধীন ছিল। ইরাকের পুণর্গঠনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে হালিবোরটন কোম্পানির শাখা কোম্পানি সবচেয়ে বেশী সুবিধা পেয়েছে। এই কোম্পানি ইরাকে ১৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রকল্পের কাজ পেয়েছে। এদের মধ্যে ৭০০ কোটি মার্কিন ডর্লার ইরাকের তেল ব্যবস্থার পুর্ণগঠনের জন্য।
আসলে ইরাকের নতুন তেল সংক্রান্ত খসড়া আইনে পুরোপুরি ইংগ-মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর স্বার্থকেই বিবেচনা করা হয়েছে। এ খসড়া অনুযায়ী, ইরাকের তেল সম্পদের অধিকার রয়েছে, তবে বিদেশী কোম্পানিগুলো অবকাঠামোতে অর্থ বিনিয়োগ করবে এবং তেল উত্তোলন করবে। তার পর ইরাক ও বিদেশী কোম্পানিগুলো তেলের সম্পদ থেকে সৃষ্ট মূনাফা ভাগাভাগি করবে। এই সহযোগিতার মডেল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খুব কম দেখা যায়। মধ্য-প্রাচ্য অঞ্চলে এর আগে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা ছিল না।
এই খসড়া আইনে নির্ধারন করা হয়েছে যে , চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৩০ বছরের মধ্যে বিদেশী তেল কোম্পানিগুলো ইরাকে তেল অনুসন্ধান করতে পারবে। তা ছাড়া এ সব বিদেশী কোম্পানির জন্যে বেশ কয়েকটি সুবিধাজনক নীতিও অপরিবার্তিত থাকবে। খসড়া আইনে আরও নির্ধারিত হয়েছে যে, ইরার আর বিদেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যেকার বিরোধ অবশেষে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়।
বতর্মানে এই নতুন খসড়া আইন ইরাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই খসড়া আইনের প্রতি ইরাকীদের প্রতিক্রিয়া অবশ্যই তীব্র হবে। ইরাকের ট্রেড ইউনিয়নের প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরাকী জনগণ এ ধরনের আইনকে কখনোই গ্রহণ করবে না। ইরাকের পরিস্থিতিতে ইরাকী জনগণ নিজেরাই তাদের দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইংগ-মার্কিনের সঙ্গে ইরাক সরকারের এই কারচুপি নিঃসন্দেহে ইরাকী জনসাধারণের মধ্যে নতুন বিরোধের সৃষ্টি করবে। যার ফলে তেল সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হবে এবং তেলের ব্যবস্থা ও বিদেশী তেল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নানা ধরনের সহিংসতা দেখা দেবে। বতর্মানে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিদেশী তেল কোম্পানিগুলো ইরাকে ব্যাপকভাবে তেল অনুসন্ধান করবে না।
|