v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-01-05 19:30:28    
অদ্ভূত মিথ্যা কথা

cri
    চলতি বছরের ১৮ মার্চ চিলিন প্রদেশের "সান্ধ্য শহর" পত্রিকায় প্রকাশিত মিথ্যা কথা আদায় করার এক প্রবন্ধ ব্যাপক নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । নাগরিকদের পক্ষে এটা একটা অভাবনীয় বিষয় । নাগরিকদেরকে মিথ্যা কথা বলতে অনুরোধ করা সত্যিই এক আশ্চর্য ব্যাপার । চিলিন নির্মাণ শিল্প ইনস্টিটিউটের ছাত্রী চিয়াও ইয়ে ফান তার ২৩ বছর বয়সে এই প্রথমবার এ ধরণের আশ্চর্য খবর শুনল । সে ভাবল , এটা কি ব্যাপার ? সে সন্দেহ নিয়ে পত্রিকা থেকে উত্তর পাবার চেষ্টা করছে । একই শহরের টেক্সির ড্রাইভার লিউও ব্যাপারটা জানার চেষ্টা করছে ।

    পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে , ছোটো মেয়ে সিনইয়ো মস্তিস্কের টিউমারে আক্রান্ত হয়ে বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে । গুরুতর অবস্থায় থাকা সত্বেও মেয়েটির একটি আশা আছে । সে পেইচিং গিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন দেখতে চায় । শারিরীক অবস্থার কারণে মেয়েটি দীর্ঘ পথের যাত্রা সহ্য করতে না পারার ভয়ে ছাংছুন শহরে এক নকল জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয় । মেয়েটি যাতে এই মিথ্যা কথা বিশ্বাস করতে পারে তার জন্যে পত্রিকাটি সবার কাছে মিথ্যা সংগ্রহের আহবান জানিয়েছে । ব্যাপারটা সম্পর্কে চিয়াও ইয়েফান ও ড্রাইভার লিউর সন্দেহ হয় , তারা পত্রিকাটির অফিসে ফোন করেন । সবার সন্দেহের সম্মুখীন হয়ে পত্রিকার সংবাদদাতা থাও বিন ছোটো মেয়ে সিন ইয়োর সঙ্গে নিজের প্রথম সাক্ষাতের কথা স্মরণ করলেন।

    সিন ইয়ো ফোনে তাকে বলেছিল , খালা , আমাকে বাঁচান , আমি স্কুলে যেতে চাই । সিন ইয়োর দুর্বল কন্ঠস্বর শুনে থাও বিনের মায়ামমতা ও সহানুভূতি জেগে ওঠে । কিছু দিন যেতে না যেতেই সিন ইয়োর সঙ্গে তার দেখা হল । ৮ বছর বয়সী সিন ইয়োর জন্ম গ্রহণের তিন মাসের সময় কদাচিত টিউমারে আক্রান্ত হওয়ায় তার চোখ দুটো অন্ধ হয়ে যায় এবং পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে সবসময় বিছানায় শুয়ে থাকে । সে থাও বিনকে বলে , খালা থাও , আমার সবচে বড় আশা হল , থিয়েন আনমেনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়া । সংবাদদাতা থাও বিন জেনে ফেলেছেন যে , দরিদ্রের কারণে সিন ইয়োর বাবা মা তাকে থিয়েন আনমেনে নিয়ে যেতে সক্ষম নন । তাকে চিকিত্সা করার পর্যাপ্ত টাকা থাকা তো দূরের কথা ।

    ছোটো মেয়ে সিন ইয়োর দৃঢ়তা ও তার অসাধারণ আশা থাও বিনকে গভীরভাবে মুগ্ধ করেছে । থাও বিন মনে মনে শপথ গ্রহণ করেন , তিনি শুধু সিন ইয়োকে বাঁচাবেন না , বরং তার মনের আশা পূরণ করতে সাহায্যও করবে । সে দিন রাতে তিনি " ৮ বছর বয়সী মেয়ের ইচ্ছা—থিয়েনআনমেনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন দেখতে যাওয়া" শিরোনামে একটি রিপোর্ট লিখেছেন । দ্বিতীয় দিন রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর পাঠকরা পরপর টেলিফোনের মাধ্যমে সিনইয়োকে পেইচিং যেতে সাহায্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ।এই সুখবর সিনইয়োর বাবা মাকে জানালে থাও পিন এক বিস্ময়কর খবর পেলেন ।

    সিন ইয়োর বাবা জানালেন, সিনইয়োর অবস্থা এখন অত্যন্ত খারাপ । তার পেইচিং যাত্রা আর সম্ভব হবে না । থাও পিন এই খবর সহকর্মীদের জানালেন । যাতে সিন ইয়ো দুঃখের সঙ্গে বিশ্ব ছেড়ে না যায় তার জন্যে সহকর্মীরা ভাল প্রস্তাব পেশ করবেন বলে থাও পিন আশা করেন । পত্রিকার উধর্তন কর্তৃপক্ষগণ আলাপের পর ছাংছুন শহরে অনুকৃত জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন ।

    যাতে সিন ইয়ো অনুকৃত অনুষ্ঠানে সত্যিই পেইচিংয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান দেখার মত অনুভব করবে তা এক সহজ ব্যাপার নয়, ব্যাপারটা সম্পন্ন করতে ছাংছুন শহরের শতশত নাগরিকদের সহযোগিতা দরকার । দ্বিতীয় দিন "এই মিথ্যা কথা সম্পন্ন করতে আপনার সমর্থন দরকার" শিরোনামে রিপোর্টটি ছাংছুন শহরের সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে ।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী চিয়াও ইয়েফান ও ড্রাইভার লিউ রিপোর্টটি পড়ে থাও পিনকে ফোন করেন । থাওপিনের কাছ থেকে সিন ইয়োর গল্প শুনে তারা মুগ্ধ হন এবং তার এই শেষ আশা পূরণ করতে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

    চিয়াও ইয়েফানের সহপাঠীরা , ছাংছুন শহরের টেক্সির ড্রাইভাররা এবং পুলিশরা সহ ছাংছুন শহরের নাগরিকরা এই নকল পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন । পুলিশ বিভাগ পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের জায়গা ও লোক পাঠাবার কথা দিয়েছে ।ছাংছুন শহরের হাসপাতাল বলেছে , তারা পতাকা উত্তোলন দেখার সময় সিন ইয়োর চিকিত্সার দায়িত্ব পালন করবে ।

    ২১ মার্চ কয়েক হাজার নাগরিক টেলিফোনের মাধ্যমে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা ব্যক্ত করেছে । যাতে সিন ইয়ো মিথ্যার টের না পায় তার জন্যে থাও পিনরা বিস্তারিতভাবে নকল পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন , এই সময় সিন ইয়োর বাবা ফোনে জানান, সিন ইয়োর অবস্থা সম্ভবত সেই দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে না ।

    এই জরুরী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে থাও পিনরা ২২ মার্চ অনুকরণীয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন । পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২ মার্চ সকালে সিন ইয়ো বাবার সঙ্গে ড্রাইভার লিউর গাড়িতে করে পেইচিংয়ের দিকে রওয়ানা হয় । তাদের সঙ্গে ৫টি টেক্সি ,একটি বাস ও হাসপাতালের একটি এম্বুল্যান্স, চিকিত্সক ও স্বেচ্ছাসেবকরা ছিলেন । ড্রাইভার বলেন, আমাদের গন্তব্যস্থান পেইচিং , প্রথম স্টপ সেন ইয়াং শহর । যাতে সিন ইয়োর কোনো সন্দেহ না হয় তার জন্যে স্বেচ্ছাসেবকরা যেন সত্যিকারের নায়ক-নায়িকার মতো চমত্কারভাবে অভিনয় করেন ।

    যাওয়ার পথে সিন ইয়ো কোনো প্রশ্ন করেনি । গাড়িবহর ৩ ঘন্টা ধরে শহর প্রদক্ষিণ করে চলছিল । কিন্তুপতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের জায়গায় যেতে আরও সময় লাগবে । এই সময় সিন ইয়োর অবস্থা খারাপ হল। সিন ইয়োর আশা পূরণ করার জন্যে থাও পিনরা পতাকা উত্তোলন জায়গা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন । ছাংছুন শহরের গণ সম্পর্ক বিদ্যালয়ের পরিচালক সিনইয়োর গল্প শুনে তাদের স্কুলে এমন একটি বিশেষ পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে রাজী হন । দশ বারো মিনিটের পর এই বিশেষ গাড়িবহর ছাংছুন শহরের গণ সম্পর্ক বিদ্যালয়ে এসে পৌঁছে । দুহাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীরা শারিবদ্ধ হয়ে স্কুলের খেলা মাঠে অপেক্ষায় রয়েছে ।

    থিয়েন আনমেন ময়দানে এসে পৌঁচেছে কথাটা শুনে সিন ইয়ো এতো আনন্দ হল যে, সে কান পেতে নিজের মতো পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান দেখতে আসা পর্যটকদের কথাবার্তা শুনে । একটু পর গম্ভীর চীনা জাতীয় গান শোনা গেল । থাও পিন সিন ইয়োকে বলেন , সিন ইয়োন , এখন মুক্তি ফৌজের কাকারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছেন । মনে রাখো , পাঁচ তারকা খচিত লাল পতাকা সূর্যের সঙ্গে উড্ডয়ন হয় ।

    এই দিন ছাংছুন শহরের হাজার হাজার নাগরিক নিজদের ভালবাসা সিন ইয়োকে এক চমত্কার উপহার হিসেবে দিয়েছেন আর সিন ইয়োর দৃঢ়তা ও আন্তরিকতা সবাইকে মুগ্ধ করেছে ।

    এ বছরের এপ্রিল মাসে পেইচিং সানপো হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা বিনাখরচে সিন ইয়োর জন্যে টিউমার অপারেশন করেছেন । অপারেশনের পর তার দৃষ্টি ফিরে না আসলেও তার অবস্থার কিছু উন্নতি হয়েছে । এই অদ্ভূত মিথ্যা কথার কাহিনী চারি দিকে ছড়িয়ে পড়ে ।