জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে সিনজো নববর্ষের প্রথম দিনে প্রকাশিত "নববর্ষের বাণীতে" জোর দিয়ে বলেছেন, "সংবিধান কার্যকর করা হয়েছে ৬০ বছর আগে। এখন আমাদের নিজের হাতে নতুন যুগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নতুন সংবিধান লেখার সময় এসেছে।" ৪ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে আবে আরো বলেছেন, "সংবিধান সংশোধন করা হচ্ছে বর্তমান মন্ত্রীসভার অন্যতম লক্ষ্য।" এর মাধ্যমে তিনি তাঁর কার্যমেয়াদে সংবিধান সংশোধনের তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আবে সরকার দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতাসীন থাকতে পারবে ? ২০০৭ সাল তাঁর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ষ। বলা যায় যে, রাজনৈতিক যুদ্ধের চূড়ান্ত বর্ষ।
২০০৬ সালে জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রটিক পার্টি ও কোমেইটো পার্টি জাতীয় সংসদে অধিকাংশ আসন অধিকার করেছে। আবে তা কাজে লাগিয়ে জোর করে "প্রতিরক্ষা কার্যালয়কে" মন্ত্রণালয়েউন্নত করেছেন এবং আত্মরক্ষা দল ও শিক্ষা সংক্রান্ত মৌলিক আইনের বিল অনুমোদন করেছেন। তিনি জাপানকে "স্বাভাবিক দেশে" রূপান্তর করতে চান।
কিন্তু ২০০৭ সাল আবের কাছে নির্ঝণ্ঝাট বর্ষ নয়। তিনি দিনে দিনে নেমে যাওয়া সমর্থনের হার, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিতব্য ঐক্যবদ্ধ স্থানীয় নির্বাচন, জুলাই মাসে অনুষ্ঠিতব্য সিনেটের নির্বাচন সম্মুখীন হবেন। জাপানের তথ্য মাধ্যম মনে করে, ২০০৭ সাল "রাজনৈতিক যুদ্ধের চূড়ান্ত" বর্ষ হবে।
প্রথমতঃ পূর্বনির্ধারিত জুলাই মাসে অনুষ্ঠিতব্য সিনেট নির্বাচন একটি কঠিন যুদ্ধ। যদি ক্ষমতাসীন পার্টি এই নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসন না পায়, তাহলে আবেকে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করতে হবে। বর্তমান অবস্থা দেখে, আবে এই নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। আবে মন্ত্রীসভার সমর্থন হার এক সময় ৬৩ শতাংশ ছিল। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে তা নেমে ৪৭ শতাংশ হয়েছে। সম্প্রতি লিবারেল ডেমোক্রটিক পার্টি ও মন্ত্রীসভার সদস্যদের নেতিবাচক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া যদি ক্ষমতাসীন পার্টি সিনেটে অর্ধেকের কম আসন পায়। তাহলে সমস্ত বিল সিনেটে নাকচ হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে। ক্ষমতাসীন পার্টির কেউ কেউ প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া এবং প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন। যদি এমন অবস্থা ঘটে, জাপানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই গোলমেলে হবে।
দ্বিতীয়তঃ পূর্বনির্ধারিত এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় নির্বাচন এবং ফুকুশিমা ও ওকিনাওয়া এই দুটি অঞ্চলের সিনেটের পূর্ণনির্বাচন আবে সরকারের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পুণর্নির্বাচন সরাসরি নিসেট নির্বাচনে অর্ধেক আসন পাওয়ার ওপর প্রভাব ফেলবে। ফলে সেই সময় তুমুল লড়াই এড়ানো যাবে না।
তৃতীয়তঃ বিভিন্ন সংস্কার বিল জাতীয় সংসদে সুষ্ঠুভাবে অনুমোদিত হবে কিনা, এটাও আবে সরকারের জন্য একটি পরীক্ষা। কারণ এটা আবে সরকারের সমর্থনের হারের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সিনেট নির্বাচনের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলবে। বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয়, এ বিলগুলো জাতীয় সংসদে সুষ্ঠুভাবে অনুমোদন পাওয়া সহজ নয়।
অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছাড়া কূটনৈতিক সমস্যাও আবের মাথাব্যথার কারণ। আবে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর জাপান ও চীনের সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হয়েছে। এটা হচ্ছে আবের অর্জিত প্রধান রাজনৈতিক সাফল্যের অন্যতম। কিন্তু এর জন্য আবে চাপেরও সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ জাপান ও চীনের সম্পর্ক কেবল সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, পিছিয়ে যাওয়া যায় না। ২০০৭ সাল হচ্ছে চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩৫তম বার্ষিকী এবং চীন ও জাপানের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিনিময় বর্ষ। কিভাবে জাপান ও চীনের সম্পর্ক উন্নয়ন করা হচ্ছে আবের জন্য তা একটি পরীক্ষা। ২০০৭ সালে আবের সম্মুখীন কঠিন সমস্যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কিভাবে বহু ক্ষেত্রে এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মৈত্রী সম্পর্ক বজায় রাখা, কোরিয় উপদ্বীপের পারমাণবিক সমস্যা, তথাকথিত উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মধ্যকার উত্তরাংশের ভূখন্ড নিয়ে বিবাদ, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার সমস্যা, ভবিষ্যতে ইরানের পুনর্বাসনকে সমর্থন সমস্যা সমাধান করা যায় ইত্যাদি।
|