৪ জানুয়ারী মার্গারেট চেনের এক অসাধারণ দিন। এ দিন থেকে তাঁর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নতুন মহাপরিচালক হিসেবে কাজ শুরু। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান হিসেবে ম্যাডাম মার্গরেট চেন কিভাবে নিজের ভূমিকা পালন করবেন?
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে সারা বিশ্বের জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য পরিসেবা করা, বিশেষ করে যাদের সাহায্য দরকার , তাঁদেরকে সাহায্য করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর মার্গারেট চেন বলেছেন, "নিঃসন্দেহে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সকল দেশ ও জনগণের স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে সহায়তা করতে বদ্ধপরিকর । কিন্তু যে সব দেশ ও জনগণের সর্বাধিকভাবে সাহায্য প্রয়োজন , আমরা তাদেরকে অগ্রাধিকার দেবো।"
বিশ্বস্বাস্থ্য বিষয়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। তার প্রধান কর্তব্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, পৃথিবীর মানুষের স্বাস্থ্যের মান উন্নত করা, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজের উপদেশ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করা, বিভিন্ন দেশের সরকারের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজ জোরদার করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা, মহামারী , স্থানীয় রোগ ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধক কাজ ত্বরান্বিত করা । মহাপরিচালক বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রযুক্তি ও প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে তাঁর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট রীতিনীতি প্রণয়ন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে উপদেশ প্রদান ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করেন।
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব মোকাবেলায় মার্গারেট চেন তাঁর কাজকে ছয়টি প্রধান ক্ষেত্রে ভাগ করেছেন। এর মধ্যে তিনি আফ্রিকার জনগণ ও বিশ্বব্যাপী নারীদের স্বাস্থ্যের সমস্যাকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, "আমি জোড়ালো ভাষায় বলতে চাই যে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে আফ্রিকার জনগণ ও বিশ্বব্যাপী নারীদের স্বাস্থ্যের সমস্যার সমাধান করতে হবে। আফ্রিকার জনগণ ও দারিদ্র দেশের নারীরা গুরুতর রোগে আক্রান্ত। এ যন্ত্রণা তারা সহ্য করতে পারছে না। এমন অবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়। তা পরিবর্তিত হতে হবে।"
পেশাগত ব্যক্তি হিসেবে মার্গারেট চেন গণ স্বাস্থ্য প্রশাসন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজের নিয়মগুলো ভালোই জানেন এবং এই সংস্থার ভবিষ্যতের ওপর পরিপক্ক চিন্তাভাবনা রয়েছে। জেনিভায় নিযুক্ত চীনা সংবাদদাতা লিউ জুন একজন সিনিয়র সংবাদদাতা। তিনি একাধিকবার মার্গারেট চেনের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। তিনি বলেছেন , আফ্রিকা মহাদেশের ৫০টিরও বেশি দেশের সবই বিশ্ব ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বল্পোন্নত দেশ। এ দেশগুলোর চিকিত্সা সাজসরঞ্জাম ও চিকিত্সকের দারুন অভাব রয়েছে। যদি এ দেশগুলোতে ব্যাপকাকারের মহামারী ছড়িয়ে যায়, তবে এর নেতিবাচক প্রভাব কেবল এ দেশগুলোর ওপর পড়বে না, তা অন্যান্য দেশের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে তাই বিশ্বের সর্বাধিক গণ স্বাস্থ্য সংস্থা হিসেবে এ দেশগুলোতে সমন্বয় ও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে, কিন্তু এ কাজ করা খুব কঠিন। ফলে বলা যায় যে, মার্গারেট চেন কঠোর দায়িত্ব মোকাবেলার সম্মুখীন।
চীন সরকারের মনোনীত পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় চীন সরকার ও হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকার মার্গারেট চেনকে যথাসাধ্য সমর্থন করেছে। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক নির্বাচনের খবর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক সংস্থায় এশিয়ার শক্তি বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। চীনা ব্যক্তি হিসেবে তিনি আবেগপূর্ণ কন্ঠে বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক নির্বাচিত হওয়াটা আমার জন্য গর্বিত ব্যাপার। কারণ, এটা হচ্ছে চীনের কোন নারীর প্রথমবার জাতিসংঘের কোন সংস্থার প্রধান হওয়া। আমি এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভালভাবে কাজ করবো। এটা হবে আমার স্বদেশকে দেয়া সবচেয়ে ভালো ঋণ পরিশোধ।"
|