v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-01-04 15:15:11    
চীন জনসাধারণের আবাসন সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি(ছবি)

cri

 চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শহরবাসীদের বাসস্থানের চাহিদা অধিক থেকে অধিকতর উন্নত হয়েছে। কিন্তু চীনের মতো একটি জনবহুল ও জমি সম্পদের অপেক্ষাকৃত অভাবসম্পন্ন দেশের বাড়িঘরের দ্রুত সম্প্রসারণের দরুণ শহরের জমি সম্পদের অবস্থা দিনে দিনে অবনতি হয়েছে। এর পাশাপাশি মধ্য ও নিম্ন পর্যায়ের আয়কারী পরিবারসমূহ বাড়ি কেনার সামর্থ্য প্রায় হারিয়েছে। ২০০৬ সালের প্রথম দিকে চীন সরকার নতুন বাড়িঘর নির্মাণ নীতি প্রণয়ন করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, ৯০ বর্গমিটারের নিচের মধ্য ও ছোট আকারের বাড়িঘর ভবিষ্যতে শহরাঞ্চলে গৃহ নির্মাণের প্রধান অংশ হবে। সরকারের পরিচালনায় চীনের বাসস্থানের কাঠামো মধ্য ও ছোট আকারের দিকে রূপান্তর হচ্ছে।

 কিছু দিন আগে "চীনের ৯০ বর্গমিটারের মধ্য ও ছোট আকারের বাড়িঘর তৈরীর ডিজাইন প্রতিযোগিতায়" পেইচিংয়ের স্থাপত্য ডিজাইন একাডেমির জেনারেল স্থপতী লিউ সিয়াও চোং দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, "পুরস্কার অধিকারী ডিজাইনগুলো সমস্ত বিষয় ও সমস্যা বিবেচনা করে যথাযথভাবে সব জায়গায প্রয়োগ করা হবে। এবং মানুষের বর্তমান আচরণ ও চাহিদা অনুসারে বাড়িঘরের ডিজাইনকে আরো যুক্তিযুক্ত করতে হবে। এটা হচ্ছে ছোট আকারের বাড়িঘরের একটি বৈশিষ্ট্য।"

 এখন মাঝারি ও ছোট আকারের বাড়িঘর হচ্ছে চীনের স্থাপত্য ডিজাইন ক্ষেত্রের আলোচিত বিষয়। কারণ চীন সরকার নিয়ম করেছে, ২০০৬ সালের ১ জুন থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের নতুন নির্মিত বাণিজ্যিক বাড়িঘরের মধ্যে স্থাপত্য আয়তন ৯০ বর্গমিটারের নিচের বাড়িঘর মোট সংখ্যার ৭০ শতাংশের বেশি হতে হবে।

 চীন জনবহুল এবং এখানে জমি সম্পদের অভাব রয়েছে। চীনের মাথাপিছু জমির পরিমান কেবল বিশ্বের গড়পরতা মানের এক তৃতীয়াংশ। নগরায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিবাসীদের আবাসনের চাহিদাও ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমান জমি, ইস্পাত, খাওয়ার পানি ও জ্বালানি সম্পদ ব্যয়কারী বড় বড় বাড়ি নির্মাণ টেকসই উন্নয়নের মূল নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। চীনের রিয়্যাল এস্টেট শিল্প সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান চু চোং ঈ বলেছেন, মাঝারি ও ছোট আকারের বাড়িঘর সংক্রান্ত ভোগ্যপণ্যের পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে চীনের জনসংখ্যা, সম্পদ এবং বর্তমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বাস্তব মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং সাধারণ অধিবাসীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়ক। এ পদ্ধতি শহরবাসীদের গোটা জীবনযাপনের মান উন্নত করবে। তিনি বলেছেন, "চীন প্রধানতঃমাঝারি ও ছোট আকারের বাড়ি ভোগ্যপণ্যের পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার প্রথম কারণ হচ্ছে বর্তমানে এ ধরনের বাড়িঘর যথেষ্ঠ পরিমান নির্মিত হয় নি। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে চীনের জমি সম্পদ অপেক্ষাকৃত কম। তা ছাড়া আমরা মাথাপিছু অন্যান্য সম্পদ অপেক্ষাকৃত কম দেশগুলো যেমন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাফল্য পদ্ধতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি। তারাও বাড়িঘর আয়তনের ওপর আইন করে সুবিধার সৃষ্টি করেছে।"

 দীর্ঘকাল ধরে চীনের বাড়িঘরের বন্টন ব্যবস্থার দরুণ চীনের অনেক জনসাধারণের নিজস্ব বাড়িঘর নেই, বা থাকার বাড়ি খুবই ছোট। ১৯৭৮ সালে চীনের শহরাঞ্চলে মাথাপিছু গৃহের আয়তন মাত্র ৭.২ বর্গমিটার। গত শতাব্দীর শেষ দিকে চীন নতুন বাড়িঘর নির্মাণ ব্যবস্থা চালু করে। শহরবাসীদের বাড়ি সরকারের বন্টন থেকে বাজার বন্টনে রূপান্তরিত হয়। বিভিন্ন লোকের জন্য বাণিজ্যিক ঘর, অর্থনৈতিক উপযুক্ত ঘর ও সস্তা ভাড়ার ঘর সরবরাহ করা হয়। এভাবে বাজারকে পুনরুদ্ধার ও আবাসন নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন দ্রুততর করা হয়েছে। ২০০৫ সালের শেষ দিক পর্যন্ত চীনাদের মাথাপিছু আবাসন আয়তন ২৬ বর্গমিটার ছাড়িয়েছে।

 সংশ্লিষ্ট জরীপের ফলাফল অনুযায়ী, মাঝারী ও ছোট আয়তন বিশিষ্ট বাণিজ্যিক বাড়ি হচ্ছে বতর্মানে চীনা অধিবাসীদের প্রধান চাহিদা। পেইচিং, শেনচেন, তাইইউয়ান , শিচিয়াচুংসহ বড় ও মাঝারি শহরে যারা বাড়ি কিনতে চান, তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি লোক ৯০ বর্গমিটারের নিচের বাড়ি কিনতে চান। কিন্তু চীনের বাণিজ্যিক বাড়ি বাজারে এখন মাঝারি ও ছোট আয়তনের বাড়ির সংখ্যা কম। এক দিকে, মধ্য ও নিম্ন পর্যায়ের আয়কারীদের বাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই। অন্য দিকে, বড় ও অতি দামি বাড়িগুলো ধনী লোকের চাহিদা মেটানোর পর আরো অনেক থেকে যায়।  

 ইউ ছি পিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী পেয়েছেন মাত্র দুই তিন বছর হলো। তিনি এখন পেইচিংয়ের একটি এইটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি বলেছেন, "পেইচিংয়ে বড় বড় বাড়ি অনেক , কিন্তু ছোট আকারের বাড়ি খুব কম। দুটি ঘরের বাড়ির আয়তনও প্রায় ১০০ বর্গমিটারের একটু বেশি। পেইচিংয়ের বাড়ির দামও একটানা বেড়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় এলাকার কথা না বলে, কেবল দূর উপকণ্ঠে নির্মিত বাণিজ্যিক বাড়ির প্রতি বর্গমিটারের গড়পরতা দামও সাত বা আট হাজার ইউয়ান রেনমিনপি হয়েছে। আমার মতো প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার ইউয়ান যারা বেতন পায়, তাদের পক্ষে মোটেই বাড়ি কেনা সম্ভব নয়।"

 পেইচিংয়ে ইউ ছি পিংয়ের মতো বাড়ি কেনার সমস্যায় মাথাব্যথায় ভোগার মানুষ আরো অনেক রয়েছে। মিঃ মা লিয়াং সরকারী বিভাগে দশ বারো বছরে কাজ করছেন। তাঁর বয়স এখন ৩৮ বছর। তিনি বলেছেন, যদি এখন তিনি বাড়ি কিনেন, তাহলে তাঁর আমানত দিয়ে কেবল বাড়ি কেনার প্রথম কিস্তির ফি দিতে পারেন, বাকি অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। নিজের জীবনযাপনের গুণগত মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এই চিন্তায় তাঁর বাড়ি কেনার সাহস ছিল না। সরকার মাঝারি ও ছোট আয়তনের বাড়ি নির্মাণে উত্সাহ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি আনন্দচিত্তে বলেছেন, "প্রধানতঃ মাঝারি ও ছোট আয়তনের বাড়ি নির্মাণ করলে আমার জন্য খুব সুবিধা হবে। আমার উপার্জিত টাকা দিয়ে বড় বাড়ি কিনতে খুব কষ্ট হবে। কিন্তু সহজে একটি ছোট বাড়ি কিনতে পারবো। যদি ছোট বাড়ির ডিজাইন উপযুক্ত এবং প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে , তাহলে আমি তা কিনতে চাই।"

 ভবিষ্যতে চীন জমি, পরিকল্পনা, শুল্ক , ঋণসহ নানা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা দিয়ে মাঝারি ও ছোট আয়তনের বাড়ির ভোগ্যপণ্যে সহায়তা দেবে, অতিরিক্তি ভোগ্যপণ্য নিয়ন্ত্রণ করবে, যাতে প্রত্যেকেই বাড়িঘর ক্রয়ের অধিকার পেতে পারে।