২০০৭ সালের নববর্ষ দিনটিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তর ছিল শান্ত । বিশ্বের অধিকাংশ সংস্থার মতো এখানেও ছিল ছুটির আমেজ। কিন্তু এই শান্ত পরিবেশের মধ্য দিয়ে দশ বছর স্থায়ী আনান যুগের অবশান হয়েছে। বান কি মোন যুগ যেন চুপি চুপি শুরু হয়েছে।
২ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ৯টায় বান কি মোন জাতিসংঘের সদরদপ্তরে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। কাজের প্রথম দিনে তিনি জাতিসংঘের সকল কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর কাজ শুরুর কথা ঘোষণা করেন। তা ছাড়া, চলতি মাসে নিরাপত্তা পরিষদের পালাক্রমিক চেয়ারম্যান , জাতিসংঘস্থ রাশিয়ার প্রতিনিধিও বান কি মোর সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন।
পক্ষকাল আগে বান কি মোন শপথ গ্রহণের সময় বলেছিলেন, তিনি অব্যাহতভাবে জাতিসংঘের সংস্কার ত্বরান্বিত করার কাজে অগ্রাধিকার দেবেন এবং সচিবালয়ের কাজের সময় এক ঘন্টা এগিয়ে আনবেন। এখন তিনি নিজের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করছেন।
যদিও ভাষণে বান কি মোন একাধিকবার জাতিসংঘের সংস্কার, জাতিসংঘের সদস্যদের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থা পুনর্গঠন এবং জাতিসংঘ প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোকে তাঁর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকাভুক্ত করেছেন। তবে জনমত মনে করে, বান জি মোন মহাসচিব হওয়ার পর তাকে আরো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। ২ জানুয়ারী বান কি মোন প্রথমবার মহাসচিবের কার্যালয়ে টেবিলের সামনে বসার সময় তিনি প্রথমতঃ মধ্য প্রাচ্য সমস্যা, আফ্রিকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ, ইরানের পারমাণবিক সমস্যাসহ বিশ্বব্যাপী নানা উষ্ণ সমস্যার সম্মুখীন হবেন। এর মধ্যে স্পর্শকাতর কোরিয় উপদ্বীপের পারমাণবিক সমস্যা এড়ানো কষ্ট সাধ্য হবে।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান তাঁর কার্যমেয়াদে জাতিসংঘের ইতিহাসে সবচেয়ে মহত্ সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সদস্য দেশগুলোর স্বার্থের কারণে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল বলে তা অস্থায়ীভাবে স্থগিত হয়ে যায়। "বান কি মোন যুগে" এ সংস্কারগুলো কি ভাবে ত্বরান্বিত হবে? এটা নিঃসন্দেহে বান কি মোনের জন্য একটি বিরাট পরীক্ষা।
তা ছাড়া, জাতিসংঘের আরেকটি মহত্ পরিকল্পনা ---"সহস্রাব্দীর উন্নয়ন লক্ষ্য" বান কি মোন যুগে কি ভাবে এগিয়ে যাবে? এটাও লক্ষণীয় বিষয়। সাধারণত জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে দু'বার তাঁর কার্যমেয়াদ চালাতে পাবেন। এ সময় মোট দশ বছর । সুতরাং "সহস্রাব্দীর উন্নয়ন লক্ষ্য" বান কি মোনের দ্বিতীয় কার্যমেয়াদে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা। উল্লেখ্য যে, ২০০০ সালে জাতিসংঘের সহস্রাব্দীর শীর্ষ সম্মেলনে নির্ধারিত দলিল অনুযায়ী, ২০১৫ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করা, স্ত্রী পুরুষের সমঅধিকার ত্বরান্বিত করা এবং পরিবেশ সুরক্ষা শিল্পসহ মোট আটটি ক্ষেত্রের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে। যেমন অত্যন্ত দরিদ্র জনসংখ্যার পরিমাণ অর্ধেকে নিয়ে আসা, এইডস রোগ সম্প্রসারণের প্রবণতা দমন করা, প্রাথমিক শিক্ষা জনপ্রিয় করাসহ বিভিন্ন জটিল কাজ। বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয়, "সহস্রাব্দীর উন্নয়নের লক্ষ্য" এর মধ্যে অধিকাংশ লক্ষ্যবস্তুই সময় মতো বাস্তবায়নের জন্য তাঁকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
কিন্তু আরো কিছু আশাবাদী ব্যক্তি মনে করেন, "বান কি মোন যুগে" জাতিসংঘের আগের নেতৃবৃন্দের চেয়ে কিছু অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে। প্রথমতঃ জাতিসংঘের স্বাগতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রক্ষণশীল শক্তি সম্প্রতি কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের ওপর তার প্রভাববলয়কে সহযোগিতায় রূপান্তর করার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘের নিজের ভূমিকা পালন করার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।
তা ছাড়া, বান কি মোন জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়া আর এশিয়ার মর্যাদা দিনে দিনে উন্নতি হওয়া উভয় ক্ষেত্রেই সংগতিপূর্ণ। বহু এশিয় দেশগুলোর সন্ত্রাস দমন ও পারমাণবিক অস্ত্রের অবিস্তার সমস্যা নিষ্পত্তি বা বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের সমস্যা ত্বরান্বিত ও সমন্বয় করা পর্যন্ত বান কি মোন যুগে জাতিসংঘে আরো বেশি এশীয় ব্যক্তিত্বের দৃষ্টি থাকবে।
|