v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-29 19:54:43    
আশ্চর্য বিয়ের অনুষ্ঠান

cri
    ছাও ওয়েই ও চাং সিয়াও সিয়াও দুজন এক আড়ম্বরপূর্ণ ও সুন্দর বিয়ের অনুষ্ঠান করতে চান । এখন তারা এক সন্তানের বাবা মা ,তবে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান এখনো হয় নি । চাং সিয়াও সিয়াও এখন এক চেতনাহীন মানুষে পরিণত হয়েছেন । ছাও ওয়েই বিয়ের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে জাগিয়ে তোলার সিদ্ধাত নিলেন ।

    চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী ছাংচৌ শহরের টেলিভিশন কেন্দ্রের সংবাদদাতা সু লি এমন একটি বিস্মিতকর খবর পেয়েছেন যে , চেচিয়াং প্রদেশ থেকে আগত ২৩ বছর বয়সী চাং সিয়াও সিয়াও এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় এক চেতনাহীন মানুষে পরিণত হওয়ার পর ছাংচৌ শহরের ১ নম্বর হাসপাতালে এক ছেলের জন্ম দিয়েছেন । ছেলেটির ওজন মাত্র ১.৯ কেজি ।

    সুলি নানা সন্দেহ নিয়ে হাসপাতালে এসে জানলেন, চেতনাহীন মানুষ চাং সিয়াওসিয়াও স্বামী ছাও ওয়েইর সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রেমালাপ করেছেন । আর্থিক কারণে বিয়ের রেজিষ্ট্রিকরণের এক বছর পরও তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি । ৫ মাস আগে যখন তারা বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে । স্থানীয় হাসপাতালের চিকিত্সায় সিয়াওসিয়াওয়ের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে । কিন্তু সিয়াওসিয়াওয়ের জ্ঞান আর ফিরে আসেনি । ছাও ওয়েই ও পরিবারের সবাই দুঃখ-বেদনায় নিমজ্জিত হলে ডাক্তার তাদেরকে জানিয়েছেন , সিয়াওসিয়াও গর্ভবতী হয়েছে ।

    সিয়াওসিয়াও গর্ভবতী হওয়ার খবরটা ছাও ওয়েই ও পরিবারের সবাইকে বিস্মিত করে । ডাক্তার জানান , সিয়াওসিয়াওয়ের পেটের বাচ্চার কিছু ক্ষতি হয়নি । কিন্তু মা'র পেটে দিনদিন বড় হয়ে ওঠা বাচ্চাটা মা'র প্রাণের প্রতি এক হুমুকী স্বরূপ হবে । ছাও ওয়েই সঙ্গে সঙ্গে বলে , বাচ্চার চেয়ে স্ত্রীর প্রাণ রক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । যখন ছাও ওয়েই বাচ্চাকে ফেলে দেয়ার কথা বলছিলেন তখন সিয়াওসিয়াওয়ের চোখ দুটো থেকে অশ্রু বের হল । যেন তিনি সবার কথাবার্তা শুনেছেন এবং বাচ্চাকে ফেলে দেওয়ার কথায় দুঃখ প্রকাশ করেন । সিয়াওসিয়াওয়ের আচরণে সবাই বিস্মিত হন ।

    সবাই স্পষ্ট জানেন, জীবন-মরণে থাকলেও সিয়াওসিয়াও পেটের বাচ্চাকে ছেড়ে দিতে চান না । সিয়াওসিয়াওয়ের মা মেয়েকে বলেন , সিয়াওসিয়াও , তুমি নিশ্চিত থাক । বাবা মা কথা দিচ্ছি ,যত দান করা হোক না কেন ,বাচ্চাকে রক্ষা করব । সিয়াওসিয়াওয়ের পেটের বাচ্চা সবার যত্নে ও প্রতিক্ষায় বৃদ্ধি পেতে থাকে ।

    সময়ের সাথেসাথে সিয়াওসিয়াওয়ের পেটের বাচ্চাও দিনদিন বড় হয়ে ওঠে । কিন্তু বাচ্চার প্রতি হুমকীও দিনদিন বেড়ে যায় । ছাও ওয়েই ও সিয়াওসিয়াওয়ের বাবা মা সিয়াওসিয়াও এবং পেটের বাচ্চার জন্যে চিন্তা করেন । চিয়াংসু প্রদেশের ছাংচৌ শহরের ১ নং গণ হাসপাতাল ছাও ওয়েই ও তার পরিবারের কাহিনী শুনে মুগ্ধ হয় এবং বিরাট ঝুঁকি নিয়ে সিয়াওসিয়াওকে চিকিত্সা করার সিদ্ধান্ত নেয় । পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তাররা উপলব্ধি করেন । পুষ্টির অভাবে সিয়াওসিয়াওয়ের শরির অত্যন্ত দুর্বল এবং দুর্বলতার কারণে যে কোনো সময় সে মরে যেতে পারে ।

    ২১ ফেব্রুয়ারী বাচ্চার জন্ম হতে আর দেড় মাস বাকি । কিন্তু পানি ভেঙ্গে যাওয়ার অকালীয় জন্মের লক্ষণ দেখা হয় । ডাক্তার অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা বের করার সিদ্ধান্ত নেন । ডাক্তার জানান , খুব সম্ভবত বাচ্চা এবং মা দুজনের প্রাণ রক্ষা পাবে না ।

    দীর্ঘ সময়ের অপারেশনের পর বাচ্চার জন্ম হল । অন্য বাবার মতো ছাও ওয়েই তো খুশি নন । তিনি স্ত্রী সিয়াওসিয়াওয়ের জন্যে চিন্ডিত । ছেলের জন্ম হল কিন্তু স্ত্রী এখনো চেতনাহীন অবস্থায় রয়েছে । তিনি ছেলেকে নাম দিয়েছেন হাও ই ।অর্থ হল ছেলে সহজে পৃথিবীতে আসেনি ।

    ছাও ওয়েই ও স্ত্রী সিয়াওসিয়াওয়ের কাহিনী টেলিভিশন কেন্দ্রের সুলিকে যেমন বিস্মিত তেমনি মুগ্ধ করেছে । তিনি মনে করেন যে , তাকে এই পরিবারের জন্যে কিছু করতে হবে । এর পর সুলি ও তার সহকর্মীরা ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে তাদের দুঃখ তাদের আনন্দ তুলে নিয়েছেন ।

    সত্যিকারের ভালবাসা ও পারস্পরিক সমঝোতা এই পরিবারের ক্ষতিপূরণ করছে ।সুলি উপলব্ধি করেছেন যে, হাও ই'র জন্মের পর সিয়াওসিয়াওয়ের ভেতরে কিছু প্রতিক্রিয়া হচ্ছে । যখন ছাও ওয়েই ছেলেকে সিয়াওসিয়াওয়ের বালিশের কাছে এনে দিয়ে বলেন , হাও ই মাকে দেখ, মা'ও হাইকে দেখবেন ।এই সময় সিয়াওসিয়াওয়ের মাথা ও চোখ হাও ইর আওয়াজের সঙ্গে মোড় নেয় । যাতে ছেলের আওয়াজে সিয়াওসিয়াও অনুপ্রাণিত হয় তার জন্যে ছাও ওয়েই হাও ইর আওয়াজ রেকর্ড করে বারবার বাজিয়ে সিয়াওসিয়াওকে শোনান । তিনি চান, সিয়াওসিয়াও জানবে , তাদের ছেলে মাকে ডাকছে । যাতে সিয়াওসিয়াও তাড়াতাড়ি সুষ্ঠ হয়ে ওঠবে তার জন্যে ছাও ওয়েই সিয়াওসিয়াওকে ছাংচৌ শহরে তাদের মজুরী করার প্রতিটি জায়গায় নিয়ে যান । প্রেমের প্রতিটি গল্প ধীরেধীরে তার স্মৃতিতে ভেসে আসে ।

    উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় ছাও ওয়েই ও সিয়াওসিয়াও দুজনের প্রেম হয় । মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর সিয়াওসিয়াও চিয়াংসি পোশাক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন । সবসময় ছাও ওয়েইর পাশে থাকার জন্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর সময় সিয়াওসিয়াও লেখাপড়া ছেড়ে ছাও ওয়েইর সঙ্গে ছাংচৌ শহরে গিয়ে মজুরী করতে শুরু করেন । এই সময়ের সুন্দর ও রোমান্টিক দিনগুলো ছাও ওয়েইর জীবনের সবচেয়ে সুখীর স্মৃতি । প্রথমে তাদের প্রেম সিয়াওসিয়াওয়ের বাবা মার আপত্তির সম্মুখীন হয় । তা স্বত্তেও সিয়াওসিয়াও ছাও ওয়েই ছাড়া কাউকে বিয়ে না করার দৃঢ়সংকল্পের কারণে অবশেষে সিয়াওসিয়াওয়ের বাবা মা তাদের প্রেমের স্বীকৃতি দেন । কিন্তু আর্থিক কারণে বিয়ের সার্টিফিকেট পাওয়ার পর তাদের বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি । কিন্তু যখন তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় হঠাত এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় তাদের স্বপ্ন , তাদের আশা ভেঙ্গে যায় ।

    যাতে সিয়াওসিয়াও এক সবচেয়ে সুন্দরী কন্যা হতে পারে তার জন্যে ছাও ওয়েই সিয়াওসিয়াওয়ের বাবামাকে বলেন , সিয়াওসিয়াও বিয়ের পোষাক পরতে চায় , আমি তার এই আশা পূরণ করব । সিয়াওসিয়াওকে এক সুন্দর ও মনোরম বিয়ের অনুষ্ঠান দেয়ার জন্যে ছাও ওয়েই প্রত্যেক দিন দ্বিগুণ প্রচেষ্টায় কাজ করেন । সু লি ও তার সহকর্মীরা মুগ্ধ হয়েছেন এবং ছাও ওয়েই ও সিয়াওসিয়াওকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন ।

    ৫ এপ্রিল ছাও ওয়েই ও সিয়াওসিয়াওয়ের বিয়ে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় । বিয়ের অনুষ্ঠানে ছাও ওয়েই ভাবাবেগে বারবার সিয়াওসিয়াওয়ের নাম ধরে ডাকে । সিয়াওসিয়াও, তুমি জেগে ওঠো, দেখো, এত বেশি লোক আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছে ।

    ছাংচৌ শহরের নাগরিকরা এই বিশেষ বিয়ের অনুষ্ঠানে মুগ্ধ হন । তারা মনে মনে তাদের সুখ শান্তি কামনা করেন এবং পরপর টাকাপয়সা , গুড়াদুধ বা বাচ্চারকাপড়চোপড় নিয়ে সিয়াওসিয়াও ও হাও ইকে দেখতে যান ।

    কয়েক মাস পর ছাও ওয়েই সিয়াওসিয়াওকে নিয়ে চেচিয়াং প্রদেশের বাড়িতে ফিরে যান । বাড়ির সবাইর সযত্নে সিয়াওসিয়াওয়ের অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে । হাও ই-ও সুষ্ঠুভাবে বড় হয়ে ওঠছে । ১২ নভেম্বর ছাও ওয়েই তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের জায়গায় গিয়ে এক গাছ লাগিয়ে দেন । তিনি বলেছেন , সিয়াওসিয়াও আমার স্ত্রী । আমি কোনো দিন তাকে ছেড়ে দেব না ।