v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-29 16:50:29    
গ্রামীণ ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বেগম জান্নাত ই কোয়ানাইনের সাক্ষাত্কার

cri

 প্রশ্নঃ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন অবস্থা কি রকম ছিল?

 উঃ আমি তখন পড়াশুনা করতাম। প্রায় ৩১ বছর আগে অধ্যাপক ড. ইউনুস গরীব মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন। ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার কারণ হল মানুষের আর্থিক ও সামাজিক জীবনে পরিবর্তন আনা। বাংলাদেশে সাড়ে ৫ মিলিয়ন ক্ষুদ্র ঋণ গ্রাহক আছেন। তারা যখন প্রথম ঋণ নেন, তখন খুব ভয়ে থাকে। কারণ তারা কখনো ব্যাংকের কাছে যায় নি। একবার যখন তারা ঋণ নেয়, তখন গরু কেনা, হাতের কাজ , ক্ষুদ্র ব্যবসা বিভিন্ন কাজ ধরে এই ঋণ দিয়ে। যে কাজ তারা এলাকায় বসে করতে পারে। শুরু করে কিন্তু খুব অল্প টাকা দিয়ে। ৩ হাজার, ৪ হাজার এরকম। মনে করুন, তারা একটি গরু কিনে হয়তো। এখানে আমাদের লোন সাইজ দেড়শ ডলার। যাই হোক, গরু কেনার পর দুধ দিতে শুরু করলে এই দুধ বিক্রি করে গ্রামীণ ব্যাংককে কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করে। প্রথম কিস্তিতে আস্থা বাড়ছে। পরে আরো বাড়ে। একটা সময়ে দেখা যায়, ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে। কিন্তু গরু ও বাচ্চা রয়ে গেছে। তখন তারা অসম্ভব খুশী হয়। তখন তারা অন্যভাবে জীবন গড়ার কথা ভাবে। আরও বেশি ঋণ নিয়ে বড় কিছু করতে চায়। অনেকে আছেন যারা একটি গরু থেকে গরুর ফার্মও করেছেন। তখন বাচ্চাগুলোর জন্য চিন্তা করে। ভাল করে তৈরির কথা ভাবে। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠায়। এতে তার সামাজিক অবস্থানও বাড়ে। তার স্বাধীনতা বাড়ে। সঞ্চয় করার চিন্তা করে। নিজস্ব আমানত গড়ে তুলে। এগুলো তার জীবনের ধারা বদলে দেয়।

 প্রশ্নঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহিতাদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা কত?

 উঃ আমি ইতোপূর্বে বলেছি, আমাদের সাড়ে ৫ মিলিয়ন গ্রাহক আছে। ৭০ হাজার গ্রামেআমরা কাজ করি। সাড়ে ৫ মিলিয়েনের মধ্যে ৯৫ শতাংশ মহিলা। আর গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে মহিলাদের যে কত উন্নতি হয়েছে তা কল্পনাও করা যায় না। তারা এখন গ্রামীন ব্যাংকের বোর্ড অব ডাইরেকটরের সদস্য, গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক। আমরা তাদের জন্য কাজ করি। প্রফেসর ইউনুস এই মডেল সৃষ্টি না করলে কোন দিনই তারা এই সুযোগ পেতেন না।

 প্রশ্নঃ আমি কি জানতে পারি, গ্রামীণ ব্যাংক কেন মহিলাদের উপর এত গুরুত্ব দেয়?

 উঃ আসলে গ্রামীণ ব্যাংক কোন মহিলা বা পুরুষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নি। আসলে ১৯৭৬ সালে ডঃ ইউনুস ভাবলেন, এত সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে মানুষ এত গরীব কেন? তখনই তিনি তেভাগ্য খামার শুরু করলেন। যারা চাষ করে , তারা কোন বেনিফিট পাচ্ছিল না। তাদের উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছিল না। ঐ কাজ করতে গিয়ে অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তিনি দরিদ্র পুরুষ-মহিলাদের অবস্থান জানতে পারেন। আমরা তখন তাঁর সঙ্গে কাজ করতাম। তখন তিনি চিন্তা করলেন পুরো গ্রামের মানুষের উন্নয়নের জন্য কি করা যায়? তখন তিনি মহিলাদের সঙ্গে আলাপ করলেন। এ সময় নানা ভুল ধারনা ছিল। বলা হতো মহিলাদের তালপট্টি নিয়ে যাওয়া হবে। খৃষ্টান বানানো হবে ইত্যাদি। তাদের নির্ভর করতে হতো মধ্য মধ্যসত্ত্বভোগীদের উপর। কড়া সুদে টাকা নিয়ে তারা বাশের কাজ, বেতের কাজ করতেন। কিন্তু তখন বাশ ঝাড় কেনার মতো টাকাও তাদের ছিল না। তখন স্যার বললেন, যদি আমরা টাকা দেই, তাহলে কিভাবে শোধ করবে। গ্রামবাসী খুব আগ্রহী হলো। কারণ তাদের কোন মধ্যসত্ত্বভোগীর কাছে যেতে হবে না। তখন ড. ইউনুস জনতা ব্যাংকের কাছে গেলেন। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জনতা ব্যাংকের শাখা ছিল। ব্যাংকের লোকজন শুনে হাসাহাসি করলেন। বললেন, আপনি শিক্ষক মানুষ, গরীব মানুষের অবস্থান দেখে আবেগাক্রান্ত হয়েছেন। আসলে এ সব মানুষ নিরক্ষীর , কোন কাজ জানে না। আপনাকে তো বিপদে ফেলবে। তখন প্রফেসর ইউনুস ভাবলেন কি করা যায়? অনেক মহিলাই ঋণ নিতে চায়। আমরা আলাপ আলোচনার পর মাত্র ৪০ জন মহিলাকে ২৭ ডলার ঋণ দেই। তারা খুব ভালভাবে ফেরত দিল। আবার ব্যাংক গেলেন। কিন্তু ব্যাংক ঋণ দিতে রাজি হলো না। তারা বললেন, স্থানীয় গ্রামবাসীরা আপনার ভাষা বোঝেন, আপনার ছাত্রছাত্রীরা সঙ্গে আছে এই জন্য তারা ঋণের টাকা নিয়মিত শোধ করছে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্য কোন জায়গায় এই প্রকল্প চলবে না। ততদিনে ১৯৭৯ সালে আপনাদের কার্যক্রম প্রকল্পের মর্যাদা পেয়েছে। স্যার, ব্যাংকারদের বললেন, আপনারা বাংলাদেশের যে কোন একটি জায়গা ঠিক করে দেন , যেখানে আমরা কাজ করবো। তখন আমরা টাঙ্গাইলে কাজ শুরু করলাম। এখানে ভাল কাজ হয়। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকৃতি দেয়। তখন অনেকে বলছিল, ব্লাড ব্যাংক হতে পারে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক হবে না। নতুন একটি লায়াবিলেটিজ সৃষ্টি হবে। যাই হোক নানা চড়াই-উতরাইয়ের পর ১৯৮৩ সালে ৩ অক্টোবর গ্রামীণ ব্যাংক ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত পায়। আসলে স্যারের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে গরীবদের জন্য আমাদের মনে কোন অনুভুতির সৃষ্টি হয় নি। তাদের জন্য কাজ করার কথা ভাবি নি। স্যারের কথায় আমরা গরীব মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করলাম। তারা কি খায়, কিভাবে ঘুমায়, কোথেকে তাদের আয় হয়, এসব জানতে গিয়েই তাদের জন্য কাজ করার একাগ্রতা জন্ম নেয়। এজন্য স্যারকে অনেক ধন্যবাদ।