v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-29 16:39:49    
উত্তর চীনের একটি স্বচ্ছল গ্রাম-ছ্যুই চেই গ্রাম

cri
    উত্তর চীনের হোপেই প্রদেশের শিচাচুয়াং শহরের নিকটে ছ্যুইচেই নামে একটি গ্রাম আছে । গত শতাব্দির সত্তরের দশকে এই গ্রামটিকে এবটি পরম দরিদ্র গ্রাম বলে গণ্য করা হতো । গত ৩০ বছর ধরে এই গ্রামের লোকেরা যৌথ অর্থনীতির উন্নয়ন ও যৌথ স্বচ্ছলতা বাস্তবায়নের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি পথ অনুসন্ধান করেছেন । এখন এই গ্রাম চীনের একটি বিখ্যাত স্বচ্ছল গ্রাম হিসেবে দাঁড়িয়েছে । আজ এই অনুষ্ঠানে এই গ্রামের উন্নয়ন ও পরিবর্তন প্রসঙ্গে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    শিচাচুয়াং শহরের উপকন্ঠের ছ্যুচেই গ্রামে প্রবেশের সাথে সাথে করলে সংবাদদাতার চোখে পড়লো একটির পর একটি বাগানবাড়ি , সোজা ও চওড়া রাস্তা এবং সবুজ গাছপালায় আবৃত উন্মুক্ত স্থান । বাইরের লোকের চোখে এই সব শহরের দৃশ্য বলে গণ্য করা হতো । কিন্তু আসলে এটাই ঠিক সেই ছ্যুচেই গ্রাম ।

    চ্যুচেই গ্রাম হোপেই প্রদেশের রাজধানী শিচাচুয়াং শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত । এই গ্রামে ১৬টি শেয়ার ব্যবস্থাভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এই গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের শেয়ার আছে । বছরের শেষ নাগাদ গ্রামবাসীরা এই সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মুনাফা পেয়ে পারেন । চ্যুচেই গ্রামে ৫৩০টি কৃষক পরিবার আছে । তাদের জন্য ৪৫৫টি বাগানবাড়ি ও ৯টি উচ্চ দালান নির্মাণ করা হয়েছে । গ্রামবাসী মাদাম নিউ ছুই ফাং বলেছেন ,

    তিনি ও তার পরিবার পরিজন আগে প্রাঙ্গণসহ ৮০ বর্গ মিটার বিশিষ্ট একটি পুরানো বাড়িতে থাকতেন । ২০০০ সালে তারা একটি নতুন বাগানবাড়িতে স্থানান্তরিত হন । এখন তাদের পরিবারের আবাস ও জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । তা শহরবাসীদের চেয়ে মন্দ নয় ।

    নিউ ছুই ফাং ও তার পরিবার পরিজন দু'তলা বিশিষ্ট একটি বাড়িতে থাকেন । বাড়িতে কলের পানি , বিদ্যুত , হিটিং ব্যবস্থা ও ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশনসহ নানা রকম ব্যবস্থা আছে । নীচ তলায় গাড়ি রাখার জায়গা ও বৈঠকখানা । দু'তলায় তাদের বেডরুম । নিউ ছুই ফাংয়ের বাড়িতে ৪জন সদস্য । তার স্বামী গ্রামের শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিক্রির কাজ করেন । তার দুই সন্তান বাইরে পড়ছে । নিউ ছুই ফাং কৃষিকাজ ছাড়া গ্রামের আবাসিক এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পরীক্ষার দায়িত্বও পালন করেন । তার পরিবারের বার্ষিক আয় এক লাখ ইউয়ানেরও বেশি । বর্তমানে চ্যুচেই গ্রামের অর্ধেকেরও বেশি বাড়িতে কম্পিউটার এবং ১০ শতাংশ বাড়িতে গাড়ি রয়েছে । এখন গ্রামে হাসপাতাল , বয়স্কদের আবাসসহ নানা প্রকার গণ ব্যবহার্য ব্যবস্থা নির্মাণ করা হচ্ছে । যাদের বয়স ৬৫ বছরেরও বেশি , তাদের প্রত্যেককে বছরে ১ হাজার ইউয়ান বয়স্ক ভাতা দেয়া হয় ।

    চ্যুচেই গ্রামবাসীরা আগে কখনো এই সব সুযোগ সুবিধার কথা ভাবে নি । গত শতাব্দির সত্তর দশকে চ্যুচেই গ্রাম খুব দরিদ্র ছিল । তখন সকল গ্রামবাসীদের মিলিত শক্তির ওপর নির্ভর করে একটি ট্রাক্টরও কেনা যেতো না ।

    পরিবর্তন শুরু হয় ১৯৮৬ সালে । তখন হু চি ছেন নামে একজন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য গ্রামের পার্টি-কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন । তিনি ও গ্রামের অন্যান্য ক্যাডাররা বাইরে অনুসন্ধান ও বহুবার আলোচনার মাধ্যমে যৌথ অর্থনীতি বিকশিত করা এবং যৌথ স্বচ্ছলতা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন । তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী , গ্রামের একটি পাথর খোঁড়া মাঠ নির্মাণ করা হয় । তার পর কাগজ তৈরী কারখানা ও ইস্পাত কারখানাসহ বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয় । এই সব শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু হওয়ার পরবর্তী অর্ধেক বছরের মধ্যে মুনাফা অর্জন শুরু হয় । চ্যুচেই গ্রামে এই সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বছরে ৫০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে । গত বছর চ্যুচেই গ্রামের শিল্প প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন মূল্য দেড় বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে । এর মধ্যে কর আদায় হিসেবে সরকারের কাছে ৩ কোটি ইউয়ান জমা দেয়া হয়েছে ।

    চ্যুচেই গ্রাম যে স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে , তার মূলে রয়েছে শিক্ষা ও যোগ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়া । গ্রামে প্রথম শ্রেণীর কিন্ডারগার্টেন , প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে । গ্রামবাসীদের শিশুদের আড়াই বছর বয়সে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করা হয় । তারা বাইরে না গেলে গ্রামের প্রাথমিক স্কুল ও মাধ্যমিক স্কুলে পড়তে পারে । ২৬ বছর বয়স্ক মিঃ ফাং শাও চে চ্যুচেই গ্রামের সিমেন্ট কারখানার একটি বিভাগের পরিচালক । ১৯৯৯ সালে তিনি সিমেন্ট তৈরীর কলাকৌশল শেখার জন্য হোপেই ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন । তার লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব ফি গ্রাম কর্তৃপক্ষ বহন করতো । ২০০৩ সালে ইনস্টিটিউট থেকে পাস করার পর তিনি গ্রামে ফিরে শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাজে নিয়োজিত হন । তিনি বলেছেন , যোগ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ চ্যুচেই গ্রামের অর্থনীতির টেকসই বিকাশের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছে ।

    শিল্প প্রতিষ্ঠান বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান আরও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে । শিল্প প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ ও যোগ্য কর্মীরা শিল্প প্রতিষ্ঠান বিকাশের অপরিহার্য শক্তিতে পরিণত হয়েছেন । তার নিজের বুদ্ধি ও বিবেচনা জন্মস্থানের নির্মাণকাজে কাজে লাগানো যাবে বলে তিনি আশা করেন ।

    চ্যুচেই গ্রামের ফাং শাও চের মতো দেড় শো যোগ্য কর্মী গ্রামে ফিরে গিয়েছেন । তাদের মধ্যে অনেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন ।

    ফাং শাও চে ও অন্যান্য বিপুল সংখ্যক প্রযুক্তিবিদ ও যোগ্য কর্মী বেড়ে যাওয়ায় চ্যুচেই গ্রামের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নত মানের সরঞ্জামে সুসজ্জিত হয়েছে । এর মধ্যে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবিনিয়োগ ১০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে ।

    গণতান্ত্রিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করাও এই গ্রামের টেকসই উন্নয়নের একটি মূল কারণ । গ্রামের ভবিষ্যত প্রসঙ্গে গ্রামবাসী মাদাম চাং মিন সিয়া বলেছেন ,

    চ্যুচেই গ্রামের সুষ্ঠু ও টেকসই বিকাশ বাস্তবায়নের জন্য গ্রামের কর্তৃপক্ষ জ্বালানী সাশ্রয়ী ও পরিবেশ সুরক্ষা-নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে । তখন গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য চ্যুচেই গ্রাম উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে ।