v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-28 21:32:53    
২০০৬ সাল চীনের সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণ প্রাথমিকভাবে সাফল্য অর্জিত হয়েছে

cri

 ২০০৬ সাল ছিল চীনের ১১তম জাতীয় অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম বর্ষ। এ বছর চীনের অর্থনীতি ক্ষেত্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি শব্দ হচ্ছে "দ্রুত প্রবৃদ্ধি" ও "সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণ"।

 ২০০৬ সালের চীনের অর্থনীতিকে উত্তপ্ত ও কার্যকর বলা যায়। প্রথম কোয়ার্টারে জিডিপির বৃদ্ধির হার ১০.৩ শতাংশ। প্রথম তিন কোয়ার্টারে জিডিপির বৃদ্ধির হার ছিল ১০.৭ শতাংশ । কিন্তু দ্রুত প্রবৃদ্ধির পিছনে কিছুটা ঝুঁকিও ছিল । যেমন ঋণদানের পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি, পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ অতিরিক্ত দ্রুত বেড়েছে, বাণিজ্যিক অনুকূল উদ্ধৃত্ত বাড়ানোসহ নানা সমস্যায় চীনের অর্থনীতি কাচাঁ মাল ও জ্বালানী সম্পদের ঘাটতি এমনকি মুদ্রা স্ফীতির সম্ভাবনাও ছিল বেশী ।

 চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমির অর্থ গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ইন চিয়ান ফাং বলেছেন, আমানতের রিজার্ভ ফাণ্ডসহ মুদ্রা নীতির পরিবর্তন হচ্ছে চলতি বছর সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণের একটি বড় বৈশিষ্ট্য। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে পুঁজি বিনিয়োগের অতিরিক্ত দ্রুত বৃদ্ধি দমন করা। তিনি বলেছেন, "বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণদানের যথাযথ কারণ রয়েছে। ঋণ হচ্ছে পুঁজি বিনিয়োগকৃত অর্থের প্রধান উত্স। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদান নিয়ন্ত্রণ করা ও অপেক্ষাকৃত দ্রুত পুঁজি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গণ ব্যাংক পর পর রিজার্ভ ফাণ্ডের হার বাড়ানোর নীতি চালু করেছে। এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও পুঁজি বিনিয়োগকারীদের কাছে এক তীব্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে, অর্থনীতির অস্থির প্রবণতা দেখা গেলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই সেই সব সমস্যা সমাধানের জন্য অপেক্ষাকৃত কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেবে।"

 রিয়্যাল এস্টেট শিল্প হচ্ছে চীনের স্থাবর সম্পত্তি ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রধান শিল্পের অন্যতম। এ বছরের প্রথম দিক থেকে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের বাড়িঘরের দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে রিয়্যাল এস্টেট শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ ও বাড়ি কেনার জন্য ঋণদানের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। এর পিছনে বিরাট আর্থিক ঝুঁকি রয়েছে। এর পাশাপাশি অতি উচু বাড়ির দাম জনসাধারণের জীবনে পরিবর্তন এনেছে। ছিংতাও শহরের অধিবাসী চাং ক আগে ভ্রমণ বেশ পছন্দ করতেন। কিন্তু নতুন বাড়ি কেনার পর প্রতি মাসে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ তাঁর মাসিক আয়ের চেয়ে বেশি। তিনি বাধ্য হয়ে ভ্রমণের বিষয়টি পরিত্যাগ করেছেন। তিনি বলেছেন, "আগে আমি বন্ধুর সঙ্গে সিআন, তালিয়ান, ওয়েইহাই, পেইচিং বেড়াতে গিয়েছি। এখন আর বাইরে যাই না। এখন আমরা কেবল বন্ধুদের বাসায় গিয়ে পার্টি করি। এভাবে খরচ কম।"

 বাড়িঘরের বেশী মূল্য চীন সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ পরপর মাঝারি ও ছোট আকারের বাড়িঘরের কাঠামো বাড়ানোসহ মোট ছয়টি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা কার্যকর করেছে এবং রিয়্যাল এস্টেট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঋণ পাওয়ার শর্ত, পুরনো বাড়ি বিনিময়ের বাণিজ্যিক শুল্ক হার ইত্যাদি ক্ষেত্রে আরো কঠোর নিয়মকানুন প্রয়োগ করছে। মাঝারি ও নিম্ন আয়কারীদের বাড়িঘের নিশ্চয়তাবিধান জোরদার করা হচ্ছে এবং এ বছর রিয়্যাল এস্টেট ক্ষেত্রে সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণের প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 চীনের সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলো এ পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে সফলতা পেয়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত রেনমিনপি ঋণদানের বৃদ্ধির হার একটানা তিন মাস ধরে গত বছরের অনুরূপ সময়ের চেয়ে কম। ঋণদানের অতিরিক্ত দ্রুত বৃদ্ধির প্রবণতা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। জুলাই মাস থেকে চীনের ৭০টি বড় ও মাঝারী শহরের বাড়ীঘরের দাম বৃদ্ধির হার মোটামুটি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।

 ২০০৬ সালে ভোগ্যপণ্য চীনের অর্থনীতির বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও লক্ষণীয় ভূমিকা পালন করেছে। চীন সরকার বিশেষ করে ব্যক্তিগত আয়ের শুল্কের হার সুবিন্যস্ত করা, চিকিত্সার নিশ্চয়তাবিধান জোরদার করা, বাধ্যতামূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানোসহ নানা নীতি চালু করার পর চীনের নাগরিকদের আবাসন ব্যবস্থা, গাড়ি, টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রের ভোগ্যপণ্য সবই বেড়েছে। অনুমান অনুযায়ী, এ বছর খুচরা-বিক্রয়ের মোট পরিমাণ ৭.৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি হবে। গত বছরের চেয়ে তা প্রায় ১৩ শতাংশ বেশী হবে।

 টিয়ানচিং প্রথম গাড়ি প্রস্তুত কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার সোং মিং জুন মনে করেন, চীনাদের গাড়ি কেনার জন্য ব্যয় টাকা অধিক থেকে অধিকতর হবে। তিনি বলেছেন, "আরো বেশি শ্রমজীবী সক্রিয়ভাবে মোটরগাড়ি কিনবেন। বিশেষ করে কিছু কিছু শিল্পোন্নত ও অবস্থা ভালো এমন গ্রামের কৃষকরাও গাড়ি কিনতে শুরু করেছেন।"

 কিন্তু চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি এখনো পুঁজি বিনিয়োগ। এ বছরের প্রথম তিন কোয়ার্টারে পুঁজি বিনিয়োগ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য সৃষ্ট অবদানের হার ৪৯.৯ শতাংশ। সামাজিক নিশ্চয়তাবিধান ব্যবস্থা অসম্পূর্ণ বলে চীনারা অত্যন্ত সযত্নে ভোগ্যপণ্য ব্যবহার করেন।

 এ পরিপ্রেক্ষিতে কিছু দিন আগে কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে উত্থাপন করা হয়েছে যে, শহরবাসী ও গ্রামবাসীদের আয় বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে কৃষকদের আয় ও ভোগ্যপণ্য সংস্থানের সামর্থ্য বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থানহীন পরিবারের কর্মসংস্থান সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।

 চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের সামষ্টিক অর্থনীতি একাডেমির উপ-পরিচালক মা সিয়াও হো মনে করেন, "এখন চীনের শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রধান ব্যবধান হচ্ছে বুনিয়াদী ব্যবস্থার নির্মাণ। অর্থাত্ গ্রামাঞ্চলের সড়ক, পানি, বিদ্যুত্, গ্যাস, বেতারসহ নানা ক্ষেত্রের বুনিয়াদী ব্যবস্থা শহরের তুলনায় অসম্পূর্ণ। "

 বিরাট পরিমাণ বাণিজ্যিক অনুকূল উদ্ধৃত্ত হচ্ছে চীনের অর্থনীতির সুস্থ উন্নয়নের ওপর প্রভাব ফেলা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এ বছরের প্রথম এগারো মাসে চীনের বাণিজ্যিক অনুকূল উদ্ধৃত্তের পরিমান মোট ১৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, তা বিশ্বের প্রথম স্থান অধিকার করে আছে।

 আগামী বছর চীনের সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণের প্রধান ক্ষেত্র হবে ভোগ্যপণ্য, পুঁজি বিনিয়োগ ও রপ্তানির সুষম অবস্থান বজায় রাখা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অবলম্বনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গুণগত মান ও মুনাফা অন্বেষণ করা।