বড়োদিনের উত্সব হচ্ছে পাশ্চাত্য দেশগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবস। এখন বড়োদিন চীনের শহরবাসীদের কাছে জনপ্রিয় এক দিবসে পরিণত হয়েছে। অধিক থেকে অধিকতর বিদেশী পর্যটক পেইচিং, শাংহাইয়ে এসে বড়োদিন কাটেন। বড়োদিনের এক সপ্তাহ আগে থেকে পেইচিংয়ের রাস্তা ও দোকানে বড়োদিনের পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ইউয়ান থেকে কয়েক শত ইউয়ান দামের নানা রকমের বড়োদিনের টুপি , মোজা বা স্যান্টাক্লজ প্রত্যেক দোকানের জানালায় প্রদর্শিত হয়।
কেম্পিনস্কি হোটেলের হল
এ বছর বড়োদিনের উত্সবের জন্য পেইচিংয়ের বিভিন্ন বড় বড় হোটেলে নানা ধরনের চমত্কার সান্ধ্য ভোজসভা আয়োজন করেছে। পেইচিংয়ের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কেম্পিনস্কি হোটেল বড়োদিনকে স্বাগত জানানোর জন্য সযত্নে পুরো হোটেলটি সাজিয়েছে। হলের মধ্যে ৮ মিটার উচু একটি বড়োদিনের গাছ বসিয়েছে। উজ্জ্বল বাতি সম্বলিত গাছটি দেখতে খুব সুন্দর। এর পাশের একটি ছোট হলের নাম দিয়েছে "এস্কিমো"। ভিতরে এস্কিমো লোক থাকার দুটি গোলকার বরফ ঘর , তুষারমানব, পেংগুইন পাখি, কুকুর টানা শ্লেজগাড়িসহ নানা মূর্তি রয়েছে। জানা গেছে, বড়োদিনের আগের রাতে শিশু গায়ক দল এখানে এসে বড়োদিনের গানগুলো গেয়েছেন।
পেইচিংয়ের বিখ্যাত বাণিজ্যিক এলাকা ওয়াংফুচিংয়ে অবস্থিত টিয়েনলুন রাজবংশ হোটেল বড়োদিনের বুফে আয়োজন করেছে। হোটেলের গণ সংযোগ বিষয়ক ম্যানেজার মিস. ওয়াং ইয়ে বলেছেন, "টিয়েনলুন রাজবংশ হোটেল একটানা তিন বছর ধরে বড়োদিনের বুফে করে আসছে এবং খুব ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। অতিথিরা মনে করেন, এটা কেবল বিনোদন নয়, বরং ভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রনও বটে। এ বছর আমরা বুফে ছাড়া, চার ঘন্টা পৃথিবী ভ্রমণ, বড়োদিন ভ্রমণ নামে নানা বিশেষ কর্মসূচীও আয়োজন করেছি।"
পেইচিংয়ের বিভিন্ন বড় বড় হোটেল ও কিছু কিছু পর্যটন সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পেইচিংয়ে এসে বড়োদিন কাটানোর বৈদেশিক পর্যটন দলের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। পেইচিংস্থ কিছু বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানও পেইচিংয়ে কর্মরত বিদেশীদের জন্য পেইচিং ভ্রমণের শর্ত সৃষ্টি করেছে। এখন পেইচিংয়ে অধ্যয়নরত, কর্মরত বা বসবাসকারী বিদেশীদের সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। চীনের আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থা ও যুব পর্যটন সংস্থার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, এ বছরের বড়োদিনের সময় এই দুটি পর্যটন সংস্থা রোজ ৫০টি বিদেশী পর্যটক ভরা বড় বাস পাঠায়। অনেক বিদেশী বন্ধু পেইচিংয়ের স্বর্গীয় মন্দির, চিংশান পার্ক, গ্রীষ্ম প্রাসাদ ও মহাপ্রাচীরসহ নানা ঐতিহ্যিক পর্যটন স্থানে যান। তাছাড়া, আরো কিছু পর্যটক উপকন্ঠের স্কি মাঠে যান। চীনের আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থার গাইড মিস. লি চিয়াং য়ুএ বলেছেন, "বিদেশী পর্যটকদের পেইচিংকে বড়োদিন উত্সবের পর্যটন স্থান হিসেবে বেছে নেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এখানের বরফ পছন্দ করা। বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল থেকে আসা বিদেশী পর্যটকরা স্কি মাঠে বেশ আনন্দ পান। তাঁদের মধ্যে অনেকে পেইচিংয়ে একাধিকবার বড়োদিন উদযাপন করেছেন।"
বড়োদিনের উত্সবে পেইচিংয়ের হো সাগর, সানলি তুন, তুংচিমেন, ইয়াবাও লু প্রভৃতি অঞ্চলের পাশ্চাত্য খাবার রেস্তোরাগুলোতেও অনেক বিদেশী পর্যটক আসেন। সেখানকার নানা বিদেশী খাবার রেস্তোরা এ বছর বড়োদিনের উত্সবের জন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার তৈরি করেছে। যেমন , জার্মানরা বড়োদিনে অনেক মদ খেতে পছন্দ করেন। ফলে জার্মান রেস্তোরাগুলো আগে থেকে যথেষ্ট পরিমাণ মদ প্রস্তুত করেছে। ফরাসীরা বড়োদিনে বন্ধুদের সঙ্গে নাচতে পছন্দ করেন এবং হাঁসের লিভারের পেস্ট ও সিফুড খান। ফলে ফরাসী রেস্তোরা অনেক আগে থেকে এ ধরনের খাবার প্রস্তুত করেছে। পেইচিংয়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের লোক বেশি নেই। তবে তারাও স্বদেশের খাবার খেতে পারেন। বিশ্বায়নের যুগে মহানগর পেইচিংয়ে প্রায় প্রত্যেক বিদেশি বন্ধু নিজের পছন্দ মতো বড়োদিনের খাবার খুঁজে পান এবং নিজ নিজ জাতির বড়োদিনের উত্সবের পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন।
অবশ্যই আরো কিছু বিদেশী বন্ধু উত্সবের দিনে বাইরে না গিয়ে চীনা বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজের বাসায় রান্না করে বড়োদিন কাটান। জার্মানী থেকে আসা মি. পিটার জোশছে বলেছেন, "এ বছরের বড়োদিনে আমি আর আমার স্ত্রী বাইরে যেতে চাই না। আমরা কিছু চীনা বন্ধুকে দাওয়াত করেছি। আমরা কিছু জার্মান খাবার রান্না করেছি। বিশেষ করে বড়োদিন উত্সবে জার্মানদের পছন্দনীয় এক ধরনের বিশেষ মদ তৈরি করেছি।"
উল্লেখ্য যে, বড়োদিনের আগে , পেইচিংয়ের ইয়াসিয়াও, সিয়াওসুয়ে ইত্যাদি বিদেশী পর্যটকদের পছন্দনীয় বাজার খুব ব্যস্ত ছিলো। সেখানের বেশির ভাগ বিদেশী ক্রেতারা নিজের আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের জন্য বড়োদিনের উপহার কিনেন। দোকানদাররা ইংরেজী ভাষায় বিদেশী ক্রেতাদের কাছে পণ্যের পরিচয় দেন। বিদেশী ক্রেতারা চীনা ভাষা না জানলে হাত দিয়ে দোকানদারের সঙ্গে দরাদরি করেন। এ বাজারগুলোতে বিদেশী ক্রেতারা প্রায় আসে বলে দোকানদাররা বিদেশী ক্রেতাদের দাবি অনুযায়ী পণ্যের সমাবেশ ঘটান। ডেনমার্ক থেকে আসা একজন পর্যটক বলেছেন, তিনি প্রথম বার পেইচিংয়ে এসেছেন। পেইচিংয়ের বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়া তাঁর বাজার যেতে সবচেয়ে ভালো লাগে। তিনি এখানে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের জন্য অনেক উপহার কিনেছেন।
ইয়াসিয়াও ও সিয়াওসুয়ে হচ্ছে পেইচিংয়ে রেশম ও কাপড় বিক্রি করার একটি বড় বাজার। পাতাল রেল ও পাবলিক বাসে করে এ দুটি বাজারে যাওয়া যায়।
|