গত বুধবার ইরানের সংসদে গৃহীত একটি বিলে পরমাণু কার্যক্রম আরো দ্রুততর করা এবং অবিলম্বে আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার সংগে ইরানের সহযোগিতার নীতি সংশোধনের ব্যাপারে সরকারকে তাগিদা দেয়া হয়েছে । গত ২৩ ডিসেম্বর যখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ১৭৩৭ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয় , ইরান সরকার সেদিনই এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে । ইরানের এ ধারাবাহিক অনমনীয় পদক্ষেপের কারণে এ বছরের শেষ দিকে ইরানের পরমাণু সমম্যা আবারো বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ।
গত বুধবার ইরানের সংসদে গৃহীত বিলে বলা হয়েছে , জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে ইরানের পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার কার্যক্রম দ্রুততর করা এবং অবিলম্বে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সংগে ইরানের সহযোগিতার নীতি সংশোধন করার ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে । বিলটি গৃহীত হওয়ার পর ইরানের স্পীকার গোলাম আলী হাদ্দাদ আদেল বলেছেন , ২০৩জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৬১জন বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন । এ বিল সরকারের কাছে এ ক্ষমতা দিয়েছে যে, সরকার যেমন পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারবে , তেমনি আলোচনা চালানোর জন্যে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার কাঠামোতে থেকে যেতে পারবে । এ বিল গৃহীত হওয়ার পর পরই ইরানের সংবিধান তত্ত্বাবধান কমিটির অনুমোদন লাভ করেছে । প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদের অনুমোদন পেলে বিলটি ১৫ দিন পর কার্যকর হবে ।
ইউরোপের জনমত এই যে, ইরানের সংসদের এ পদক্ষেপ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবটি সম্পর্কে ইরান সরকারের অনমনীয় প্রতিক্রিয়ার প্রতি সমর্থনস্বরূপ ।
পরমাণু সমস্যায় ইরান আপোষ না করা এবং পিছ পা না হওয়ার যে অনমনীয় মনোভাব পোষণ করছে , তার পেছনে কয়েকটি কারণ আছে । প্রথমত ইরান সবসময় জোর দিয়ে বলে আসছে যে, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্য নিয়ে ইরান তার পরমাণু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে । ইরান বলেছে , যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা করে বলেছে যে, ইরান পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের অজুহাতে পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নয়ন করছে , তা নিজের স্বার্থের বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের একপেশী মনোভাব ও কুতসা ছাড়া কিছুই নয় ।
আরো গুরুত্বপূণ বিষয় হচ্ছে এই যে, ইরানের শাসকরা মনে করেন যে , বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ইরানকে একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে একটি সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছে । এখন জ্বালানীর ঘাটতি ক্রমেই বিভিন্ন দেশের টেকসই উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে তেল উত্পাদন ও রফতানির বৃহত শক্তি হিসেবে ইরানের বহুমুখী শক্তি ও ভূরাজনৈতিক কাঠামোর ওপর তার প্রভাব লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়েছে । ইরানে রাশিয়ারও অত্যন্ত গুরুত্বপূণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে । ইরানের সংগে ইইউ'রও ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে । ইরানের বিরুদ্ধে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে এ দেশগুলোর সংকোচ থাকতে পারে । যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের সমস্যায় সবচেয়ে সক্রিয় হলেও ইরাকে তার বিব্রতর অবস্থায় পড়ায় অনিচ্ছা থাকা সত্বেও ইরাক সমস্যায় ইরানের কাছে সাহায্য চাওয়ার আশা প্রকাশ করেছে । এ কথা অনস্বীকার্য যে , ইরানের অনমনীয় মনোভাব পরমাণু সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানকে কঠিন করে তুলেছে ।
তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন , ১৭৩৭ নম্বর প্রস্তাবের আলোচনা ও গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে দেখা গেছে , বেশ কিছু মতভেদ থাকা সত্বেও পারমাণবিক অবিস্তার কাঠামো রক্ষা করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংকল্প অত্যন্ত দৃঢ । তাই ইরানের পরমাণু সমস্যায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাবও মোটামুটি কাছাকাছি রয়েছে । প্রস্তাবটি ইরানের কাছে একটি স্পষ্ট ও কঠোর সংকেত দিয়েছে যে , ইরানের উচিত আণবিক সংস্থা ও নিরাপত্তা পরিষদের দাবির প্রতি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা । নইলে ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবে ।
|