v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-27 15:35:11    
হান চিয়াং নদীর তীরের পরিবেশ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবকরা তত্পর

cri
    আপনারা নিশ্চয় চীনের সবচেয়ে বড় নদী ইয়াং সি নদীর নাম শুনেছেন । তবে আপনারা কি ইয়াং সি নদীর সবচেয়ে বড় শাখা নদী - হান চিয়াং নদীর নাম শুনেছেন ? হান চিয়াং নদীর তীরে বসবাসকারী দুজন বৃদ্ধা হান চিয়াং নদীর পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্যে অলিগলিতে ও পরিবারে পরিবারে গিয়ে পানি সম্পদের যত্ন নেয়ার ধারণা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন । তাদের শুরু করা হেঁটে হেঁটে হান চিয়াং নদী বরাবর পরিবেশ সংরক্ষণ তত্পরতার ফলে কার্যকরীভাবে কিছু স্থানীয় কারখানার দুষিত পানি নিষ্কাশনের কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে গেছে । তাদের প্রতিষ্ঠিত হু পেই প্রদেশের প্রথম সেসরকারী পরিবেশ সংরক্ষণ সমিতিও বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ।

    এ দুজন বৃদ্ধার একজনের নাম ইয়ুন চিয়ান লি , আরেকজনের নাম ইয়ে ফু ই । দুজনই অবসর নিয়েছেন । মধ্য চীনের হু পেই প্রদেশের সিয়াং ফান শহরে তাদের বাড়ি । চীনের ইয়াং সি নদীর সবচেয়ে বড় শাখা নদী দেড় হাজারেরও বেশি কিলোমিটার দীর্ঘ হান চিয়াং নদী এ সিয়াং ফান শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত । শেষ পর্যন্ত এ নদী উ হান শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইয়াং সি নদীর সংগে মিশে যায় । এ দুজন বৃদ্ধা নিয়মিত ভাতা পান এবং ভালো জীবনযাপন করছেন । কি কারণে তারা একযোগে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছেন ? ৬০ বছর বয়সের ইয়ুন চিয়ান লি বলেছেন , ২০০০ সালের বসন্তকালের একদিন যখন পাবলিক বাসে করে হান চিয়াং নদীর সেতু দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি যা শুনেছেন এবং দেখেছেন , তার কারণে তিনি পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন । তিনি বলেছেন ,

    পাবলিক বাসে করে হান চিয়াং নদীর সেতু দিয়ে চলার সময় একজন যাত্রী বলেছেন , জীবনযাত্রার উচ্ছিষ্ট দুষিত পানি এ নদীকে দুর্গন্ধ করে তুলেছে । অন্য একজন যাত্রী বলেছেন , এটা কিছু নয় । আপনি কুয়েন হো নদীর তীরে গেলে দেখতে পাবেন , সেই নদীর পানি হান চিয়াং নদীর পানির চেয়েও ময়লা । তাদের কথা শুনে আমি অবাক হয়েছি । এত ময়লা পানি হান চিয়াং নদীতে মিশে গেছে । তখন থেকে আমি হান চিয়াং নদীর পানির পরিচ্ছন্নতা সংরক্ষণের শপথ নিয়েছি ।

    প্রাচীনকাল থেকে হান চিয়াং নদী পানি পরিষ্কার ও পানির মান উন্নত বলে সুপরিচিত । তবে গত কয়েক বছরে অর্থনীতির বিকাশের সংগে সংগে কিছু কারখানার দুষিত পানি এবং জনজীবনের উচ্ছিষ্ট দুষিত পানি পরিচ্ছন্ন হান চিয়াং নদীতে প্রবেশ করেছে । ২০০০ সালের মার্চ থেকে ইয়ুন চিয়ান লি পর পর হান চিয়ান নদীর অববাহিকায় অবস্থিত সিয়াং ফানের ৫টি শাখা নদীর পানি দুষিত হওয়ার অবস্থার ওপর তদন্ত চালিয়েছেন । তিনি দেখতে পেয়েছেন, হান চিয়াং নদীর কোনো কোনো শাখা নদীর পানি গুরুতরভাবে দুষিত হয়েছে । তাই তিনি বহবার স্থানীয় সরকারের কাছে অবিলম্বে দুষণের উত্পত্তি বন্ধের আহবান জানিয়েছেন । ২০০২ সালের বসন্তকালে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে , পরিবেশ সংরক্ষণের সমস্যা সমাধান করতে হলে একতরফাভাবে সরকারের ওপর নির্ভর করলে চলবে না , জনসাধারণেরও এ ক্ষেত্রে সচেষ্ট হওয়া উচিত ।

    ২০০২ সালের আগস্ট মাসে ইয়ুন চিয়ান লি ইয়ে ফু ইয়ের সহযোগিতায় হু পেই প্রদেশের প্রথম বেসরকারী পরিবেশ সংরক্ষণ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন । সমিতির নাম সবুজ হান চিয়াং নদী ।

    তখন থেকে পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ইয়ে ফু ইও ইয়ুন চিয়ান লির একজন শক্তিশালী সহকারী হয়ে দাঁড়িয়েছেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , প্রতিদিন অনেক লোক তাদের সমিতিতে আসেন । তাদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক , স্কুলের ছাত্রছাত্রী , পরিবেশ সংরক্ষণের স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ নাগরিক । তাদের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কেমন করে ভালোভাবে হান চিয়াং নদীর পানি সংরক্ষণ করা যায় । ইয়ে ফু ই বলেছেন ,

    আমাদের পরিশ্রম করতে হয় । তবে এ কাজ করে আমরা আনন্দ পাই । যেসব বন্ধু আমাদের সংগে এক সাথে ব্যায়াম করেন , তারা আমাদের এ রকম তত্পরতাকে বুঝেন না । তারা বলেছেন , এ কাজের জন্যে আপনারা এক পয়সাও উপার্জন করতে পারেন না । কিন্তু আপনাদের এত ক্লান্তি । উত্তরে আমি বলেছি, এক পয়সা না পেলেও এ কাজের মধ্যে আমি আনন্দ পেতে পারি । ব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদের সবল করে তুলেছি । পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ করে আমরা অন্যদের জন্যে অবদান রেখেছি । পরিবেশ সুন্দর থাকলে সবাই তা উপভোগ করতে পারবে ।

    এ দুজন বৃদ্ধার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ও সিয়াং ফান শহরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাহায্যে অল্প দিনের মধ্যেই পরিবেশ সংরক্ষণ সমিতির সদস্যদের সংখ্যা এক শ' ছাড়িয়ে গেছে এবং দলগত সদস্যদের সংখ্যাও ৪৫টিতে দাঁড়িয়েছে ।

    তারা মনে করেন যে , শিশুকাল থেকেই পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত শিক্ষা দেয়া দরকার । তারা মাঝে মধ্যে বিভিন্ন স্থানের স্কুলে গিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচার করে থাকেন । গত কয়েক বছরের মধ্যে তারা পর পর ৩ শ'রও বেশি কিন্ডারগার্ডেন ও স্কুলে গিয়ে প্রচার করে সুফল পেয়েছেন । বহ প্রাথমিক স্কুলের ছাত্ররা নিজেদের টেবিলের পাশে আবর্জনার ব্যাগ রেখে দিয়েছে । তারা আর যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলে না । বাড়িতে ফিরে তারা নিজেদের বাবামার কাছে মূল্যবান পানি সম্পদের কথা প্রচার করে । প্রাথমিক স্কুলের একজন ছাত্রী চাই থিং থিং বলেছেন

    নানী ইয়ুন আমাদের বুঝিয়ে বলার পর আমরাও পরিবেশ সংরক্ষণের তত্পরতা শুরু করেছি । পথে যখন আমরা দেখি , কোনো লোক যথেচ্ছা আবর্জনা ফেলেন , তখন তার সমালোচনা করি এবং তাকে আবর্জনাকে পাঁশকুড়ে ফেলতে বলি । আমরা তাকে বলি , আমাদের আশেপাশের পরিবেশ ভালোভাবে রক্ষা করতে হবে যাতে আমরা সবাই টাটকা বাতাস গ্রহণ করতে পারি ।

    কিছুদিন পর এ বেসরকারী পরিবেশ সংরক্ষণ সমিতি হান চিয়াং নদী বরাবর বিস্তীণ গ্রামাঞ্চলেও তাদের প্রচার কাজ শুরু করেছেন । ইয়ান হো গ্রামের কর্তা মিন হুং ইয়ান আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , গ্রামবাসীরা তার প্রচারকে খুব পছন্দ করেন । ইয়ুন চিয়ান লি তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে বলেছেন ,

    ইয়ান হো গ্রামে গিয়ে আমি গ্রামবাসীদের বলি, সত্যিকারভাবে কথা বলতে গেলে আমরা সবাই পৃথিবী গ্রামের সদস্য । আমরা সবাই প্রতিবেশী । এখানে এসে আমি যেন আমার প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি । আসলে আমরা খুবই কাছাকাছি রয়েছি ।

    তাদের প্রচার আরো ফলপ্রসূ করার জন্যে তারা সবুজ হান চিয়াং নামে একটি ওয়েবসাইটও খুলেছেন । এখন সিয়াং ফান শহরে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তাদের দলে যোগ দিয়েছেন ।