চীনের তিব্বতী সংস্কৃতি ফোরাম সম্প্রতি চীনের রাজধানী পেইচিং ও লাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছে । বারোটি দেশের এক শ' বিশজন তিব্বতী সংস্কৃতি গবেষণাকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তি এই ফোরামে অংশ নিয়েছেন । তারা তিব্বতের সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন । ফোরামে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন , চীন সরকারের তিব্বতের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থাগুলোফলপ্রসু হয়েছে ।
৬৮ বছর বয়সী তিব্বতী জাতির গবেষণাকর্মী জামপাল গিয়াটসো গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে তিব্বত জাতির ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির ওপর গবেষণার কাজ শুরু করেন । ফোরামে তিনি বলেছেন , তিব্বতের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘকাল ধরে কেন্দ্রীয় সরকার বিপুল পরিমান অর্থবরাদ্দ করেছে এবং দক্ষ কর্মীদের পাঠিয়েছে । এই সব ব্যবস্থার কল্যাণে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ মহাকাব্য ' কসার ' সংগ্রহ ও গবেষণার কাজে লক্ষণীয় অগ্রগতি অজির্ত হয়েছে । বতর্মানে এই মহাকাব্যকে চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । জামপাল গিয়াটসো বলেছেন , বিভিন্ন স্তরের সরকার তিব্বতের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি , বিশেষ করে অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষা ক্ষেত্রে অর্থবরাদ্দ ছাড়াও অনেক বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে । মহাকাব্য কসারের সুগভীর ভিত্তি ও দীর্ঘ ইতিহাস আছে । এই মহাকাব্য সংগ্রহ ও গবেষণার কাজ বিভিন্ন মহলের ভূয়োসী প্রশংসা পেয়েছে । এই মহাকাব্য সম্পর্কিত আরো বেশি তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছি ।
চীনের তিব্বত সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সমিতি এই ফোরামের আয়োজন করেছে । ২০০৪ সালে দেশ-বিদেশের তিব্বতী সংস্কৃতি গবেষণা কর্মীদের উদ্যোগে এই বেসরকারী সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এই সমিতির প্রধান কাজ হলো তিব্বতের সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রসার করা এবং তিব্বতের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতিকে তরান্বিত করা । তিব্বতের সংস্কৃতি সংরক্ষণের বিষয় আলোচনার জন্য এই সমিতি বিদেশের বিশেষজ্ঞদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছে । অষ্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার কোলিন মাকেরাস একাধিকবার তিব্বতে গিয়েছিলেন । ফোরামে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা বণর্না করে তিব্বতের সংস্কৃতি সংরক্ষণের অগ্রগতি ব্যাখ্যা করেছেন । তিনি বলেছেন , ১৯৯০ সাল , ১৯৯৭ সাল আর ২০০২ সালে আমি তিন- তিন বার তিব্বত ও কান সু , ছিনহাই , ইউনান ও সি ছুয়ানের তিব্বতীঅধুষিত অঞ্চল সফর করেছি । তিব্বতের সংস্কৃতির প্রসার আমি স্বচোখে দেখেছি । তিব্বতের সংস্কৃতির অবনতি হয়েছে বলে পাশ্চাত্য দেশগুলোর বক্তব্য অন্যায় এবং যুক্তিহীন। ১৯৯৫ সালের গ্রীষ্মকালে আমি ছিনহাই প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি উত্সব উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম । সেখানে আমি তিব্বতী জাতির ঐতিহ্যিক নাচ উপভোগ করেছি এবং বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি । বাস্তব ঘটনা প্রমাণ করছে যে তিব্বতী সংস্কৃতির বিলুপ্তিতো দূরের কথা , বরং সরকারের বলিষ্ঠ সমর্থনে সুষ্ঠুভাবে তা বিকশিত হচ্ছে ।
চীনের তিব্বতী সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সমিতি পরিষদের সদস্য লাই শিয়ান লুন জাতিসংঘ অথর্নীতি ও সমাজ বিষয়ক পরিষদের কমর্কর্তা ছিলেন এবং জাতিসংঘের সহস্র উন্নয়ন সম্পর্কিত কাজে অংশ নিয়েছিলেন । ফোরামে তিনি বলেছেন , চীন সরকার সাংস্কৃতিক উন্নয়নের কাজকে গুরুত্ব দেয়। চীন সরকারের এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পেয়েছে । তিনি বলেছেন , বাস্তব ঘটনাগুলো প্রমান করেছে , চীন সরকার তিব্বতের সামাজিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়ার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । সরকারের সাহায্যে তিব্বতে বুনিয়াদি নিমার্ন এবং স্কুল ও হাসপাতালসহ অনেক সমাজ- কল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । স্থানীয় সংস্কৃতি ও রীতিনীতিকে যথেষ্ট মর্যাদা দেয়া হয়েছে এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণের অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । চীন সরকার তিব্বতের ভাষা , চিত্রশিল্প , সংগীত , অপেরা , চিকিত্সা ও ধর্ম রক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ।
ফোরামে অংশগ্রহণকারীরা চীনের তিব্বতী সংস্কৃতি রক্ষার প্রচেষ্টা প্রশংসার পাশাপাশি এটাও উল্লেখ করেছেন যে তিব্বতে পর্যটকের সংখ্যা অতি দ্রুত বৃদ্ধি স্থানীয় পরিবেশ ও ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির উপর প্রতিকুল প্রভাব ফেলবে। তাই সরকারকে এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে হবে ।
|