v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-25 19:02:00    
দুই হাজার বছরের বেশী সময়েও মহিলার মৃতদেহ পঁচে যায় নি

cri

     গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে দক্ষিণ চীনের হুনান প্রদেশের ছাংশা'র মা ওয়াংতুই'তে হান রাজবংশ আমলের সমাধিতে খননকাজ চালানো হয়, তাতে অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত এক মহিলার মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয় এবং তা চীনসহ সারা বিশ্বকে বিস্মিত করে । কারণ এটা বিশ্বে প্রথমবারের মতো আবিষ্কৃত প্রাচীনকালের এক প্রায় অবিকৃত মৃতদেহ। মহিলার মৃতদেহটি দু হাজারের অধিক বছর আগে সমাধিস্থ করা হলেও তার চোখ ও মুখ আজও দেখতে জীবিতের মতো , তার মাংসপেশি ও চামড়া এখনও বেশ নরম। এটা এক বিস্ময়কর কাণ্ড।

     দক্ষিণ চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী ছাংশা শহরের পূর্ব উপকণ্ঠে জনগণের মধ্যে একটি কাহিনী প্রচলিত ছিল যে, এখানে এক বিরাট সমাধিস্থান, কেউ বলেন, মা নামক এক স্থানীয় রাজার সমাধি এখানে । তাই এই জায়গার নাম বরাবরই ছিল মা -ওয়াং -তুই । চীনা শব্দ ওয়াং-এর অর্থ রাজা, তুই-এর অর্থ সম্ভবত ঢিবি বা কবর। আরও কেউ বলেন , এখানে প্রাচীন ছাংশা রাজ্যের রাজার মা-এর সমাধি , এই সব রাজা আর রাজ-মাতা-র কাহিনীও আছে। গত শতাব্দির সত্তরের দশকে এক নির্মাণ প্রকল্পের ভূগর্ভস্থ কক্ষের জন্য খননকাজে হঠাত্ আবিষ্কৃত হলো এক বিরাট সমাধি এবং সমাধিস্থ ব্যক্তির পরিচয়ও পরে সনাক্ত করা সম্ভব হলো।

    বিশেষজ্ঞরা সরেজমিনে তদন্ত চালানোর পর প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করেছেন ,এটা একটি প্রাচীন সমাধি। খনন করতে করতে সমাধির নিচে দেখা গেল বড় কফিনের কক্ষ, যা ভরা ছিল এক মিটারেরও বেশি পুরু এক সাদা মাটির স্তর। সাদা মাটির নিচে রাখা ছিল পুরু এক স্তর কাঠের কয়লা, যার মোট ওজন আড়াই হাজার কিলোগ্রামের বেশি , গোটা চার ট্রাক ভরে কয়লা অন্যত্র সরানো হলো ।সবচেয়ে ভেতরের কফিন খুললে তার ভেতরে দেখা গেল এক নারীর মৃতদেহ এবং তার চেহারা দেখতে জীবিত মানুষের মতো , তাতে সবাই অবাক হলেন।মৃতদেহ একেবারে প্রায় অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে, তার মুখের রূপ খুবই স্পষ্ট, চুল কুচকুচে কালো , হাত- পায়ের আঙ্গুলগুলোর ভাঁজ বা রেখা খুবই পরিষ্কার দেখা যায়, চামড়া মোটেই শুকিয়ে যায় নি, বরং তেলতেলে ভাব, মাংসপেশি নরম এবং স্প্রিং বা ইলাস্টিক প্রকৃতিবিশিষ্ট, হাত-পায়ের গ্রন্থিগুলো সহজেই নড়ানো যায়।তা সবাইকে বিস্মিত করে। হুনান প্রদেশের শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বিভাগের অধ্যাপক শান সিয়ানচিন বলেছেন: " আগে আমরা সব অনাবৃষ্টি মৃতদেহ আবিষ্কার করলাম, এটা বিশ্বে প্রথমবারের মতো আবিষ্কৃত প্রাচীনকালের এক প্রায় অবিকৃত মৃতদেহ।"

    "দুই হাজার বছরের বেশী সময়েও মহিলার মৃতদেহ পঁচে যায় নি"। এই মৃতদেহ আবিষ্কৃত হবার ঘটনা সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞ, পর্যটক, চলচ্চিত্রের ক্যামেরাম্যান, বিজ্ঞান-গবেষকরা সবাই ছাংশা শহরে ছুটে গেলেন । সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাওয়াংতুই মহিলার মৃতদেহ আবিষ্কৃত হবার পর অল্প সময়ের মধ্যেই ছাংশা শহরে অস্থায়ী লোকসংখ্যা হঠাত্ বেড়েছে ৫০ হাজার। মহিলা সিং চুই'র সমাধির খননকাজ চালানোর পর দুই বছরে, তার আশেপাশে আরও দুটো বিরাট আকারের হান রাজবংশীয় আমলের সমাধিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চালানো হয়েছে। অনুসন্ধান চালিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, একটি সমাধি ছিল সিং চুইয়ের স্বামী ছাংশা রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লি ছাং-এর। অন্য একটি সমাধি হয়তো ছিল তাঁদের ছেলের । এই তিনটি সমাধিকে একত্রে বলা হয় " ছাংশা'র মা ওয়াংতুই'র হান রাজবংশীয় আমলের সমাধি"।

    এই মৃতদেহ ভালভাবে রক্ষা করার জন্যে চীনা গবেষক অনেক চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি মৃতদেহ সংক্রান্ত রক্ষী ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ লুও সুয়েকাং বলেছেন:" মৃতদেহর কোনো পরিবর্তন ঘটে নি। তার মাংসপেশি ও চামড়া আরো অনেক নরম ।"

    ছাংশার মা ওয়াংতুই সমাধির প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চীনের প্রত্নতত্ত্ব মহলের ওপর গভীর ও সুদুরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছে । বিশেষজ্ঞদের মতে , এই সমাধিতে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস ছিল অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত প্রাচীন মৃতদেহ এবং ধারাবাহিক পুরো সেট জিনিসপত্র এবং বিষয়বস্তুতে সমৃদ্ধ আর প্রচুর সংখ্যক প্রাচীন লিপি, যা রেশমী কাপড় ও বাঁশের ফলকগুলোতে লিখিত । উপরোক্ত তিন ধরনের জিনিসের যে কোনো একটি আবিষ্কৃত হলেই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার বলে গণ্য করা যায় । এখন তিনটা একসঙ্গে পাওয়া গেছে, চীনের প্রত্নতত্ত্বের ইতিহাসে এর পূর্বনজীর ছিল না।

    ২০০২ সালে হুনান প্রদেশের নারী মৃতদেহ সংক্রান্ত যাদুঘর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এ নারী মৃতদেহ পুরনো যাদুঘর থেকে নতুন যাদুঘরে পাঠানো হয়েছে। এ যাদুঘরের ভাইসপ্রধান লিউ সিওবাও বলেছেন:" এটা খুবই কঠিন ব্যাপার। কোনো ভুল হলে সব ভেঙে যাবে। আমরা আস্তে আস্তে বহন করি, অবশেষে সব ঠিকভাবে শেষ করা হয়েছে।"

    মা ওয়াংতুই'র হান রাজবংশীয় আমলের সমাধির খননকাজকে " বিংশ শতাব্দীতে চীন ও বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের অন্যতম" বলে গণ্য করা হয়।"