v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-21 10:56:32    
পিকিং ডাক

cri
    পেইচিংয়ে আসা পর্যটকদের মধ্যে এমন একটি কথা প্রচলিত আছে, "মহাপ্রাচীর না গেলে সত্যি বীর হবেন না, পিকিং ডাক না খেলে সত্যি সত্যিই পরিতাপের ব্যাপার।"

    ৭০০ বছর আগে পিকিং ডাক পেইচিংয়ের বড় বড় কর্মকর্তা বা ধনী লোকদের পরিবারের খাবার টেবিলের জনপ্রিয় খাবার ছিল। পিকিং ডাক রান্নার দুটি পদ্ধতি আছে। একটা হলো কুল , পীচসহ নানা ফল গাছের কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালানো উনুনের উপর কাঁচা ডাক টোস্ট করা। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে উনুনের প্রাচীরের উষ্ণতা দিয়ে ডাককে টোস্ট করা। উনুনের তাপমাত্রা প্রথমে বেশী থাকে , তারপর ধীরে ধীরে কমে যায়। পিকিং ডাকের চামড়া মচমচে, মাংসও খুব মজা।

    পেইচিং শহরে সবচেয়ে ঐতিহাসিক পিকিং ডাক রেস্তোরাঁ হচ্ছে "পিয়ান ঈ ফাং"। এ রেস্তোরাঁর ইতিহাস প্রায় ৬০০ বছরের। এখন পেইচিংয়ে "পিয়ান ঈ ফাং" এর বহু শাখা রেস্তোরাঁ রয়েছে। পেইচিংয়ের কেন্দ্রীয় স্থান ছুওয়েনমেনের চৌরাস্তার পাশে "পিয়ান ঈ ফাং" এর সদর দপ্তর অবস্থিত। সেখান থেকে হেটে হেটে মাত্র বিশ মিনিটে থিয়েন আন মেন মহাচত্বরে পৌঁছানো যায়। "পিয়ান ঈ ফাং" এর সদর দপ্তরে প্রবেশ করলে প্রাচ্যের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের দিকগুলোকে অনুভব করা যায়।

    এ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার সোং ইয়ে বলেছেন, "পিয়ান ঈ ফাং" এর সবচেয়ে নামকরা খাবার হচ্ছে পিকিং ডাক। তিনি বলেছেন, "আমাদের রান্না ডাক পুরোপুরি উনুনের প্রাচীরের উষ্ণতার মাধ্যমে টোস্ট করা হয়। তাপমাত্রা প্রাকৃতিকভাবে নামানোর প্রক্রিয়ায় ডাক ধীরে ধীরে রান্না হয়ে যায়। উত্পাদন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের এ পদ্ধতি জ্বলন্ত উনুনের মাধ্যমে ডাক টোস্ট করা সবচেয়ে কঠিন। আমাদের ডাক কেবল খেতে খুব মজা তাই নয়, বরং দেখতে তা লাল ও উজ্জ্বল ।"

    সোং ইয়ে বলেছেন, যে ডাক দিয়ে পিকিং ডাক রান্না করা হয়, সে ডাক বাছাই করার কড়া নিয়ম বা মানদন্ড আছে। যেমন, কাচা ডাকের ওজন ২৯০০ গ্রাম হতে হবে এবং জন্ম থেকে এ সময় মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে হতে হবে। গত ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে পিয়ান ঈ ফাং এই মানদন্ড অনুসারে ডাক বাছাই করেছে এবং রান্নার পদ্ধতিতে নিজের বৈশিষ্ট্য সমূহকে বজায় রেখেছে।

    পিয়ান ঈ ফাং পিকিং ডাক রেস্তোরাঁ ছাড়াও পেইচিংয়ে পিকিং ডাক খাওয়ার জন্য আরেকটি ভালো রেস্তোরাঁ আছে। তার নাম ছুন জু দে। ছুন জু দে এখন একটি গোষ্ঠী কোম্পানীতে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক শাখা রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠা করেছে। আজকে আমি কেবল পেইচিংয়ের ছিয়েন মেনে অবস্থিত ছুন জু দে রেস্তোরাঁর পরিচয় দেবো। এই রেস্তোরাঁ আর থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের দূরত্ব দুই কিলোমিটারেরও কম। এই রেস্তোরাঁর ইতিহাস ১০০ বছরের বেশি। এখন এখানে কেবল পিকিং ডাক খাওয়ার একটি জায়গা তাই নয়, বরং পেইচিংয়ের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থানও বটে। রেস্তোরাটির এক তলায় গত শতাব্দীর ৩০ দশকের ছুন জু দে রেস্তোরাঁর কাঠামো সংরক্ষণ রয়েছে। সেখানে অনেক পুরোনো আসবাবপত্র বসানো আছে, প্রাচীরে একটি পুরোনো পেইচিংয়ের মানচিত্র লাগানো আছে। একটি মজার কথা আছে, তা হচ্ছে এই রেস্তোরাঁর টেবিলে জেড গণনার ফ্রেম স্পর্শ করলে সৌভাগ্য বয়ে আনবে। আপনি যদি পুরোনো পেইচিং অনুভব করতে চান, তাহলে ছুন জু দে রেস্তোরাঁ হচ্ছে একটি উপযুক্ত জায়গা।

    ছুন জু দে পিকিং ডাক রেস্তোরাঁ আর পিয়ান ঈ ফাং রেস্তোরাঁর ভিন্ন দিক হচ্ছে পিকিং ডাক রান্নার পদ্ধতি। ছুন জুন দে ডাক টোস্ট করার আগে কাচা ডাকের গাঁয়ে নিজেদের তৈরি বিশেষ সাউজ্ মাখানো হয়। টোস্ট করার মেয়াদ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেবল সব দিক ঠিকঠাক থাকলে সুন্দর ও চমত্কার পিকিং ডাক রান্না করা যায়।

    ছুন জু দে এর পিকিং ডাকের বিশেষ আকর্ষণের আরেকটি কারণ হচ্ছে তাঁর কাটার বৈশিষ্ট্য ও খাওয়ার পদ্ধতি। ছুন জু দে এর ছিয়েন মেন পিকিং ডাক রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মা জে জানিয়েছেন, "সাধারণত আমাদের বাবুর্চি একটি ডাককে ১০৮ টুকরো করে কাটেন। তারপর অতিথিরা ডাকের মাংস আর মিষ্টি সাউজের সঙ্গে মিশিয়ে খান। "

    সাধারণ লোকজন পিকিং ডাক খাওয়ার সময় অতি পাতলা একটি পাঁউরুটি দিয়ে ডাকের মাংস পেচিয়ে নিয়ে খান। চপস্টিকস দিয়ে পাঁউরুটির উপর অল্প কিছু মিষ্টি সাউজ মাখিয়ে দু'তিনটি ডাকের মাংস আর কিছু শশা ও গন্ধপিঁয়াজ ভিতরে রাখার পর পাঁউরুটিকে পেচিয়ে নিয়ে খায়। সত্যি খুব সুস্বাদু।

    কেবল চীনারা পিকিং ডাক খেতে পছন্দ করেন না, অনেক বিদেশী বন্ধুদেরও পিকিং ডাক থেকে ভাল লাগে। পেইচিংয়ে বড় ছোট বহু পিকিং ডাক রেস্তোরাঁ আছে। প্রায় প্রতি দিন সোনালী চুল ও নীল চোখের বিদেশী অতিথিরা কেবল পিকিং ডাক খাওয়ার জন্য এসব রেস্তোরাঁগুলোতে চলে আসেন। সুইজার্ল্যান্ড থেকে আসা মিঃ পিটার কুটেল পিকিং ডাকের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, "আমি মনে করি, টোস্ট ডাক খুব সুস্বাদু। আমার খুব অবাক লাগে যে, টোস্ট ডাক রান্নার জন্য চীনারা এত বেশি প্রচেষ্টা চালায়। আমি রেস্তোরাঁয় টোস্ট ডাক তৈরির প্রক্রিয়া দেখতে পেরেছি, তার ভিতরে অনেক বিশেষ ছোটখাটো জিনিস দেয়া হয়। এক কথায় পিকিং ডাক চমত্কার এবং বিশেষ খাবার। আমি তা পছন্দ করি।"

    উল্লেখ্য যে, এখন পেইচিংয়ে বড় বা ছোট আকারের পিকিং ডাক রেস্তোরাঁ অনেক । ছোট রেস্তারাঁয় দাম অপেক্ষাকৃত সস্তা। সেখানে একটি টোস্ট ডাকের দাম প্রায় ৪০ ইউয়েন রেনমিনপি। নামকরা রেস্তোরাঁয় পিকিং ডাকের দাম একটু বেশি। একটি টোস্ট ডাকের দাম প্রায় ৩০০ ইউয়েন রেনমিনপি । কিন্তু নামকরা রেস্তোরাঁয় আপনি নিজেই কাচা ডাক বাছাই করে বাবুর্চিকে দিয়ে রান্না করতে পারেন। এটা হচ্ছে অন্য রকম মজা। ফলে প্রথম বার পিকিং ডাক খেলে বিখ্যাত রেস্তোরাঁয় যাওয়া ভালো।