এ বছরের শেষ নাগাদ চীনের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অংশ নেয়ার পাঁচ বছরের অন্তবর্তীকালীন সময় শেষ হবে । বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অংশ নেয়ার সময়ে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চীন ব্যাংকিং ও বীমাসহ নানা পরিসেবা শিল্পের বাজার খুলবে । চীনের মানি লন্ডারিং বিরোধী কাজ নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে । মানি লন্ডারিং বিরোধী কাজে সুফল পাওয়ার জন্য চীনের পুলিশ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যৌথভাবে নতুন ব্যবস্থা নেবে ।
মানি লন্ডারিংয়ের অর্থ হলো চোরাচালান , মাদক বিক্রি , সহিংস তত্পরতা , দুর্নীতি ও আর্থিক প্রতারণা থেকে পাওয়া অবৈধ অর্থকে স্থানান্তরিত করার মাধ্যমে এই অর্থের বৈধ রুপ দেয়ার চেষ্টা করা । এই ধরনের কাজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান । চীনের অর্থনৈতিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস ও সংস্কার আরো গভীর যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের বাজার অর্থনীতিতে অনেক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে । বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ বিভিন্ন অর্থনৈতিক তত্পরতায় দেখা দিয়েছে ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অংশ নেয়ার সময় চীনের প্রতিশ্রুতি অনুসারে এ বছরের শেষ নাগাদ চীন বিদেশী পুঁজি বিনিয়োজিত ব্যাংকগুলোকে চীনা মুদ্রা --রেন মিন পি লেনদেনের অনুমতি দেবে । এ নতুন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ও বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করছেন যে মানি লন্ডারিং এ সুযোগে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োজিতব্যাংকগুলোতে প্রবেশ করবে । ১৯ ডিসেম্বর পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক--চীনের গণ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং বিরোধী ব্যুরোর প্রধান মাদাম ছাই ই লিয়েন বলেছেন , চীনের বিদেশী পুঁজির ব্যাংকগুলোকেও চীনা ব্যাংকের মতো মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে । তিনি বলেছেন , চীনে বিদেশী পুঁজির ব্যাংকগুলোকে চীনের ব্যাংকিং তত্ত্বাবধান কমিটির নির্দেশানুসারে মানি লন্ডারিং বিরোধী ব্যবস্থা নিতে হবে । সন্দেহজনক লেনদেন সম্পর্কেব্যাংকিং তত্ত্বাবধায়ক কমিটিকে রির্পোটদিতে হবে । তিনি আরো বলেছেন , বিদেশী পুঁজির ব্যাংকগুলোর মানি লন্ডারিং বিরোধী কাজ তত্ত্বাবধান চীনের মানি লন্ডারিং কর্মকর্তাদেরএকটি নতুন দায়িত্ব। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করে মানি লন্ডারিং বিরোধীর নতুন পদ্ধতি অন্বেষণ করবে ।
এর আগে চীনের মানি লন্ডারিং বিরোধী কাজ প্রধানতঃ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন্দ্রীভুত ছিল । চোরাচালান , মাদক পাচার ও দুর্নীতি সংক্রান্তঅপরাধের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মানি লন্ডারিংয়ের একমাত্র পথ নয় , বসতবাড়ী কেনাবেচনা , দামীপাথর , অলংকার ও পুরাকীর্তি কেনাবেচার মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের তত্পরতা ক্রমেই বাড়ছে । তাই সন্দেহভাজন অপরাধীদের খুঁজের বের করা মানি লন্ডারিং বিরোধী কাজের অন্যতম প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে । চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুলিশ বিভাগের সহযোগিত আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে । পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় এ বছর চীন বেশ কয়েকটি বড় মানি লন্ডারিং মামলা নিষ্পত্তি করেছে । মানি লন্ডারিংয়ের পরিমান ১৪ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে । চীনের গণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক অররাধ বিভাগের উপপ্রধান হান হাও বলেছেন , আগামী বছর চীনের গণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সহযোগিতা আরো বাড়াবে । আগামী বছর পয়লা জানুয়ারী থেকে চীনে ' মানি লন্ডারিং বিরোধীআইন ' কার্যকর করা হবে । এই আইন মানি লন্ডারিং বিরোধী কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । এই আইন অনুসারে চীনে মানি লন্ডারিং বিরোধী তত্ত্বাবধান সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন ব্যাকিং সংস্থায়ও নিজের মানি লন্ডারিং বিরোধী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করবে। চীনের অবৈধ অর্থ যাতে বিদেশে প্রবেশ করতে না পারে , সে জন্য চীন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতিমালা প্রণয়ন করবে এবং ব্যবস্থা নেবে । চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসে ইতোমধ্যে মানি লন্ডারিং বিরোধী আইন গৃহিত হয়েছে । চীনের গণ ব্যাংক ও অন্যান্য বিভাগ এই আইন অনুসারে মানি লন্ডারিং বিরোধী কাজ করবে এবং নাগরিকদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার জন্য আরো বড় অবদান রাখবে।
|