v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-19 18:40:31    
প্রীতিকর ও স্নেহপূর্ণ ঐতিহ্যিক উইগুর পরিবার

cri

 

    উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলে বসবাসকারী উইগুর জাতি ইসলাম ধর্মাবলম্ববী একটি সংখ্যালঘু জাতি । এই জাতির জনসংখ্যা সিনচিয়াংয়ের মোট জনসংখ্যার ৪৫.৭৩ শতাংশ । তারা প্রধাণতঃ থিয়ানসান পাহাড়ের দক্ষিণাংশের বিভিন্ন সমতল ভূমিতে থাকেন । সংবাদদাতা দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের কাশ্ শহরের একটি উইগুর বাসায় সাক্ষাত্কার নিতে গিয়েছেন । তিনি সচক্ষে উইগুর জাতির প্রীতিকর ও স্নেহপূর্ণ ঐতিহ্যিক ঘরোয়া জীবনযাপন অনুভব করেছেন ।

 

    আবদুল জাফর ও তার পরিবার পরিজন কাশ্ শহরের পূর্ব উপকন্ঠের একটি আবাসিক এলাকায় বাস করেন । সংবাদদাতা তার বাসার প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে উইগুর জাতির ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠলো । ভাস্কর্যকর্মে সাজানো দু'তলা বিশিষ্ট একটি সুন্দর দালানের বারান্দায় রঙবেরঙের কম্বল বসানো হয়েছে । অন্তরঙ্গ স্বাগতিকের সমভিব্যহারে সংবাদদাতা এই বাসা পরিদর্শন করলেন । বৈঠকখানা ঐতিহ্যিক উইগুর জাতির রীতি-নীতি অনুযায়ী সাজানো হয়েছে । মেঝের কম্বল , দেয়াল কম্বল ও সোফার চাদরের বৈচিত্র্যময় ডিজাইনে উইগুর জাতির চালচলন জীবন্ত হয়ে উঠেছে । কিন্তু সোফা , চায়ের টেবিল ও টেলিভিশন আধুনিক ফ্যাশনে ভরপুর ।

    যখন সংবাদদাতা বারান্দায় বসলেন , তখন অতিথিসেবাপরায়ণ স্বাগতিক অতিথিকে উইগুর জাতির আচার ব্যবহার অনুযায়ী আংগুর , নাশপাতিসহ বিবিধ ফল খেতে দিলেন । বড় বোন পরিদান আবদুল কাদের তার পরিবার পরিজন প্রসঙ্গে বলেছেন ,

    তারা পরিবারে মোট ন' ভাই বোন আছেন । এদের মধ্যে ছ'জন এই বাসায় থাকেন । ভাই বোন এক সাথে থাকা উইগুর জাতির ঐতিহ্য ।

 

    উইগুর জাতির নিয়ম অনুযায়ী , বাবা মা মৃত্যু বরণ করার পর বড় ভাই গৃহকর্তা । পরিদান আবদুল কাদের বলেছেন , বাবা মা মৃত্যু হওয়ার পর তার বড় ভাই আবদুল জাফর এই পরিবারের গৃহকর্তা হয়েছেন । তিনি এই বড় পরিবারের জীবনযাপনের বোঝা বহন করছেন । তিনি সকল পরিবার পরিজনের পক্ষ থেকে বাড়ির যাবতীয় ব্যাপারের ব্যবস্থা করেন । সবাইকে তার কথা মানতে হয় ।

    আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংবাদদাতা জানতে পেরেছেন , উইগুর জাতির ঐতিহ্য অনুযায়ী , এক সঙ্গে বাস করলে অর্থনৈতিক দিক থেকে সকল পরিবার পরিজনের আলাদা করা যায় না । এই ব্যাপারে গৃহকর্তার দ্বারা যাবতীয় ব্যাপার স্থির করা দরকার । বড় ভাইয়ের বউ দেখতে লাবণ্যময় ও দক্ষ । এই পরিবারে কেউ কেউ ট্যাক্সি ও রেস্তরাঁর ব্যবসা করেন , কেউ কেউ বা সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন , ঘরোয়া জীবনযাপনের জন্য সকলের আয় বড় ভাইয়ের কাছে জমা দেয়া হয় । পারিবারিক দৈনন্দিন ব্যয় , বাড়ির মেরামত ও বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয় । এই ক্ষেত্রে পরিবারের সকলের মধ্যে কোন বিবাদ নেই । আবদুল জাফর একজন শান্ত মানুষ , দয়ালু , বেশি কথা বলেন না । তিনি সংবাদদাতাকে জানালেন , পরিবারে সবাই তার কথা ও ব্যবস্থা মানেন ।

 

    ৪০ বছর বয়স্ক পঞ্চম ছোট বোন মিনায়ার একজন কৃতী উইগুর নারী । তিনি একটি কোম্পানি স্থাপন করেছেন । তিনি দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করেন । তার স্বামীও ব্যবসা করেন । তিনি বছরের বেশি সময় তুরস্কে থাকেন । মিনায়ার ছিলেন কাশ্ শহরের একটি সরকারী হোটেলের কর্মী । কাজের প্রয়োজনে ইংরেজী শেখার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল । কাজের জন্য তিনি বহু বিদেশী ব্যবসায়ীকে চিনেছেন । এটা তার পরবর্তী বৈদেশিক বাণিজ্যিক কাজের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছে । ১০ বছর আগে বিদেশে ব্যবসা করতে হোটেল কর্তৃপক্ষ মিনায়ারের জন্য পাসপোর্টের ব্যবস্থা করেছে । যখন সংবাদদাতা তার সাক্ষাত্কার নিলেন , তখন তিনি ছুটি কাটানোর জন্য দেশে ফিরেছেন ।

    মিনায়ার সংবাদদাতাকে বলেছেন , তিনি ও তার স্বামী বছরের বেশি সময় বাইরে চাকরি করেন । তার ভাই বোনরা তাদের দুই মেয়ের জীবনযাপন ও লেখাপড়ার দায়িত্ব বহন করেন । পুরোপরিবার প্রীতিকর ও স্নেহময় পরিবেশে ভরা । মিনায়ারের দুই মেয়ে বড় হয়েছে । বড় মেয়ে সবেমাত্র সিনচিয়াং মেডিকল্ কলেজে ভর্তি হয়েছে । লেখাপড়া করতে মেয়েকে পাঠানোর জন্য এবারে মিনায়ার বিশেষ করে বিদেশ থেকে সিনচিয়াংয়ে ফিরে এসেছেন । যখন সংবাদদাতা মিনায়ারের সাক্ষাত্কার নিলেন , তখন তার ছোট মেয়ে ও তার ছেট ভাইয়ের মেয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এল । এ থেকে বোঝা যায় , মা না থাকলেও তার ছোট মেয়ে কখনো নিঃসঙ্গ নয় ।

    মিনায়ার বলেছেন , অন্যদের বোঝা কমানোর জন্য তিনি ও তার স্বামীসহ সপরিবার বাইরে থাকতে চেয়েছিলেন । কিন্তু তার ভাই বোনরা রাজী হয় নি । সবাই মর্মাহত হয়েছেন । বড় ভাই দৃঢ়ভাবে মিনায়ার ও তার পরিবার পরিজনের বাইরে থাকার কার্যক্রমের বিরোধীতা করেছেন । তিনি ছোট মেয়েকে পরিত্যাগ করতে চান না । এ প্রসঙ্গে মিনায়ার বলেছেন ,

    এবারে ছুটি কাটানোর জন্য তিনি জন্মস্থানে ফিরে এসেছেন । বাড়িতে তিনি এক ঘন্টা না থাকলে তার বড় ভাইকে জিজ্ঞাসা করার জন্য টেলিফোন করতে হচ্ছে । মিনায়ার বড় ভাইয়ের স্নেহের জন্য খুব মুগ্ধ হন । তিনি তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে আসেন ।

    ভাই বোনদের প্রীতি ও স্নেহের প্রভাবে মিনায়ারও সব সময় ঘরোয়া জীবনযাপনের ভার ভাগাভাগি করতে বিবেচনা করেন । পারিবারিক জীবনে ব্যবহারের জন্য তিনি বৈদেশিক ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত যাবতীয় আয় বড় ভাইয়ের কাছে অর্পণ করেন ।

    আবদুল জাফরের পরিচালনায় এই পরিবারের ভাই বোনরা পরস্পরকে স্নেহ ও ভালবাসেন । তারা নানা ক্ষেত্রে চাকরি করেন বা ব্যবসা করেন । তারা মনে করেন যে , পরিবার সমাজের একটি অংশ । পরিবারের প্রীতি ছাড়া সমাজের সুষমতা গড়ে তোলাও অসম্ভব ।

    কাশ্ শহরের একটি আবাসিক এলাকার পার্টি কমিটির সম্পাদক , উইগুর জাতির নারী ক্যাডার মাদাম কিমানগুলি টুলাক বলেছেন , উইগুর জাতির লোকেরা যাতে আরো সুষম পরিবেশে বাস করতে পারেন , সেজন্য আবাসিক এলাকার সকল কর্মী তাদের পরিসেবা ও আশাপাশের পরিবেশ উন্নত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ।