জেং ছুয়েন হলেন চীনের এক মাত্র আন্তর্জাতিক বেহালা কমিটি দেয়া "আন্তর্জাতিক বেহালা নির্মাতা" খেতাব পাওয়া ব্যক্তি। তিনি বিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে চীনে বেহালা নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। এখন এ ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন।
জেং ছুয়েন ১৯৫০ সালে শাংহাইয়ে জন্ম যখন করেন। তার বাবা মা হলেন বিখ্যাত রাসায়নিক প্রকৌশলী। দু'জনই জেং ছুয়েনের উপর প্রবল প্রভাব ফেলেছেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি বেহালা শিখতে শুরু করেন। গত শতাব্দীর সত্তর দশকে তিনি আন হুই শহরের ছি চৌ অঞ্চলের বেহালা কার্যনির্বাহক হয়েছেন। তিনি নিজেই জিনিস তৈরী করতে খুব পছন্দ করেন। আস্তে আস্তে তার বেহালা তৈরীর আগ্রহ জমে গিয়ে তিনি হাতের যাবতীয় কাঠ দিয়ে বেহালা তৈরী করতে শুরু করেন। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেছেন:
"এ ক্ষেত্রে আমার আগ্রহ ছিলো বেশি। বেহালা নির্মাণকারীদের মধ্যে খুব কম মানুষ আগে বেহালা বাজাতে শিখেছে। তাই এতে আমার সুবিধা হয়। খুব শীগ্গীরই বেহালার আওয়াজ আয়ত্ত করেছি।"
১৯৭৮ সালে জেং ছুয়েন পেইচিংয়ের বাদ্যযন্ত্র গবেষণাগারে গিয়ে এ ক্ষেত্রে জ্ঞান আহরন করতে শুরু করেন। দুই বছর পরে তিনি কেন্দ্রীয় সঙ্গীত একাডেমিতে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষে তিনি এই গবেষণাগারের লাইব্রেরিতে চাকরি পান। ১৯৮৩ সালে তিনি ইতালির ক্রেমোনা আন্তর্জাতিক বেহালা তৈরী স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ পান। ইতালিতে পড়াশোনার সময় তিনি প্রতি দিন শুধু ৫ ঘন্টা ঘুমতেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ইতালির প্রথম বেহালা তৈরী প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পান। পরে আন্তর্জাতিক বেহালা তৈরী কমিটি তাকে "আন্তর্জাতিক বেহালা নির্মাতা" খেতাব দেয়।
এতো বেশি সুনাম পাওয়ার পরে তিনি চীনের বেহালা তৈরী শিল্প উন্নয়ন করার ব্যাপার চিন্তা করেন। তিনি বলেছেন:
"চীনের বেহালা বাজানোর মান উন্নত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বাদ্যযন্ত্রের তৈরীর মান এর সমান নয়। তাই আমি ইতালিতে গিয়ে এই ক্ষেত্রের উন্নত প্রযুক্তি শিখেছি। চীনের ফিরে আসার পর ভেবেছি দেশের বেহালা তৈরী ক্ষেত্রে কিছু কাজ করবো।"
চীনে ফিরে আসার পর তিনি কেন্দ্রীয় সঙ্গীত একাডেমির বেহালা গবেষণাগার পুনরায় গঠন করেন এবং নিজের ছাত্র বেছে নেন। ২০০৩ সালে ইতালির বেহালা তৈরী প্রতিযোগিতায় প্রথম ২০ জনের মধ্যে ৭ জন হলো তার ছাত্র। চীনের কাঠের আন্তর্জাতিক বেহালা তৈরী মহলের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্যও তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন। এই জন্য তিনি চীনের প্রায় সকল বনে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন:
"একটি ভাল বেহালা তৈরী করতে চাইলে অনেক সময় ও প্রচেষ্টা লাগে। এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের জ্ঞান দরকার এবং শিল্পীর উপজ্ঞাও খুই গুরুত্বপূর্ণ।"
বেহালা তৈরী ক্ষেত্রে চীন ও বিশ্বের আদানপ্রদান জোরদার করার জন্য জেং ছুয়েন অনেক অবদান রেখেছেন। বেহালা পরীক্ষা ও মেরামতের জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে আবার ফ্রান্সে যান। বেহালা তৈরীর অভিজ্ঞতা নিয়ে জেং ছুয়েন বলেছেন:
"বেহালা তৈরীর সময়ে শুধু হাত ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয়, চোখ ও মনও দিতে হবে। বেহালা তৈরীর আগে আমি মাথায় একটি পরিকল্পনা তৈরী করি। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা মাল বেছে নিতে পারি এবং তার আকার ও অন্যান্য খুঁটিনাটি নির্ধারণ করি।"
এখন চীনের বেহালা তৈরীর মান অনেক উন্নত হয়েছে। জেং ছুয়েন বলেছেন, তিনি আশা করেন বেহালা তৈরী ক্ষেত্রের চীন নিজস্ব স্টাইলে গড়ে তুলবে এবং প্রাচ্য সংস্কৃতি বেহালার মধ্যে মিশাতে পারবে।
|