ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ১৩ ডিসেম্বর থেকে জাপানে চার দিনব্যাপী আনুষ্ঠানিক সফর শুরু করেছেন। সফরকালে দু'দেশ কৌশলগত বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ঘোষণা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ইতিহাসের একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত করবে।
এটা হচ্ছে গত পাঁচ বছরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম জাপান সফর। রওনা হওয়ার আগে সিং এক বিবৃতিতে বলেছেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সুদুরপ্রসারী রাজনীতি, অর্থনীতি ও কৌশলগত ক্ষেত্রে ভারত ও জাপানের স্বার্থ ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অবিলম্বে নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করবে। বিবৃতিতে সিং বলেছেন, তিনি মনে করেন, এবারের সফর হচ্ছে ভারতের "পূর্বমুখী নীতি" ত্বরান্বিত করা ও পূর্ব এশিয় দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ । তিনি ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে ভারত ও জাপানের কৌশলগত বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং আরো ব্যাপক অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। তাঁরা নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন, জ্বালানি সম্পদ, যানবাহন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আর সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে দু'পক্ষের ব্যাপক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করবেন। জাপান সফরকালে দু'পক্ষ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবে এবং দ্বিপক্ষীয় বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে "কৌশলগত বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করবে। এর আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে আশা প্রকাশ করেছেন যে, সিংয়ের এবারের জাপান সফর জাপান ও ভারতের সম্পর্ককে নতুন পর্যায় উন্নীত করবে। দু'দেশ কৌশলগত অংশীদার হয়ে আরো ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।
ভারত ও জাপানের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কোন্নয়ন ত্বরান্বিত করা , বিশেষ করে আরো বেশি জাপানী পুঁজি আকর্ষণ করা হচ্ছে সিংয়ের সফরের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। ভারত জাপানের চতুর্থ পুঁজি বিনিয়োজিত দেশ। জাপান প্রধানতঃ পরিবহন , টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি সম্পদ ও রাসায়নিক শিল্প ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগ করে। অনুমান অনুযায়ী, পরবর্তী তিন বছর জাপান ভারতে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরাসরি পুঁজি বিনিয়োগ করবে। জানা গেছে, জাপান সফরকালে দু'পক্ষ "সার্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বিষয়ক চুক্তি"সহ বহু আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করবে এবং আগামী বছরের জানুয়ারী মাসে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করার পরিকল্পনা করবে। জাপান ভারতের উত্তরাংশ ও পূর্বাংশের বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র স্থানের রাস্তা, বিমান বন্দর ও পর্যটন সাজসরঞ্জাম নির্মাণের জন্য ১২৩ কোটি মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করবে।
ভারত বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাপানের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়াও এবারের দু'দেশের নেতাদের বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যবিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। জাপান পৃথিবীতে একমাত্র দেশ যা আণবিক বোমার শিকার হয় এবং বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি উত্পাদানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সুতরাং ভারতের সুস্থভাবে বেসামরিক পারমাণিবক প্রযুক্তি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জনের ক্ষেত্রে জাপান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ানান বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, জাপান জ্বালানি সম্পদ ক্ষেত্রে ভারতের প্রয়োজন বুঝতে পারে এবং বেসামরিক আণবিক শক্তির ক্ষেত্রে সমর্থন করবে। কিন্তু ভারতের তথ্য মাধ্যম মনে করে, ১৯৯৮ সালে ভারত পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর পর জাপান ভারতের ওপর অর্থনৈতিক শাস্তি আরোপ করে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার প্রতিরোধ ক্ষেত্রে জাপানের শক্ত অবস্থানের ফলে ভারত আজ পর্যন্ত "পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি" স্বাক্ষর করে নি। সুতরাং বেসামরিক আণবিক শক্তি সমস্যায় ভারত বেশি আশাবাদী হবে না।
|